জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সংখ্যাগত দিক থেকে আবারও শীর্ষ স্থানে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশের সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের ওয়েবসাইটে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বের সংঘাতময় দেশগুলোতে বর্তমানে নিয়োজিত ৮১ হাজার ৮২০ শান্তিরক্ষী ও স্টাফ অফিসারের মধ্যে বাংলাদেশের ৬ হাজার ৭৩১ জন সেনা ও পুলিশ রয়েছেন। আফ্রিকার নেতৃস্থানীয় দেশ ইথিওপিয়া ৬ হাজার ৬৬২ শান্তিরক্ষী নিয়ে প্রথম স্থান থেকে নেমে গেছে দ্বিতীয় অবস্থানে। এর আগেও বাংলাদেশ বিশ্বের ১১৯টি দেশের শান্তিরক্ষীর মধ্যে শীর্ষস্থানে অবস্থান করেছে।
মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের মধ্যে ৫ হাজার ৯৫৩ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্য, পুলিশ ৬৪৪ জন, স্টাফ অফিসার ১১৫ জন এবং ২৯ জন সেনা কর্মরত রয়েছেন। শান্তিরক্ষা মিশনের তথ্য অনুসারে ৬ হাজার ৩২২ শান্তিরক্ষী নিয়ে রুয়ান্ডা তৃতীয় এবং ৫ হাজার ৬৮২ শান্তিরক্ষী নিয়ে নেপাল চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান নেপালের পরে, ৫ হাজার ৩৫৩ শান্তিরক্ষী নিয়ে পঞ্চম আর পাকিস্তান ৪ হাজার ৪৪০ শান্তিরক্ষী নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিসেনার অংশগ্রহণ নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ।
বিশ্বের সংঘাতময় এলাকাগুলোতে শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শান্তিসেনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেছে বাংলাদেশি সদস্যরা। উপদ্রুত এলাকার রাস্তাঘাট মেরামত, চিকিৎসা ও ত্রাণদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা প্রশংসা কুড়িয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করছে। প্রতিকূল পরিবেশে দায়িত্ব পালন সেনা সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধিতেও অবদান রাখছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সংশ্লিষ্ট রয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৮৮ সালে সর্বপ্রথম দুটি অপারেশনে অংশগ্রহণ করে, ইরাকে এবং নামিবিয়ায়। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় যান্ত্রিক পদাতিক বাহিনীর অংশ হিসেবে কুয়েতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কন্টিনজেন্ট পাঠানো হয়েছিল। এর পর থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও পুলিশ ইউএনপিকেওর (ইউনাইটেড ন্যাশনস পিসকিপিং অপারেশনস) অংশ হিসেবে প্রায় ২৫টি দেশে ৩০টিরও বেশি মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। যেসব দেশের মিশনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা, রুয়ান্ডা, মোজাম্বিক, সাবেক যুগোস্লােভিয়া, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্তান, পশ্চিম সাহারা, সিয়েরা লিওন, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর, কঙ্গো, আইভরিকোস্ট ও ইথিওপিয়া। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সর্বোচ্চসংখ্যক জনবল অংশগ্রহণ করেছে। তখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ হাজার ৮৫৫ জন (সামরিক ও আইন প্রয়োগকারী) জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনের আওতায় বিভিন্ন দেশে কর্মরত ছিলেন। শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসনীয়।
এবার জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের দুটি সাফল্য অর্জিত হয়েছে। একটি হচ্ছে এ মিশনে সর্বোচ্চসংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে দীর্ঘদিন দ্বিতীয় অবস্থানে থাকার পর আবারও প্রথম অবস্থানে উঠে এসেছে। দ্বিতীয় সাফল্য হচ্ছে, বাংলাদেশের একজন সেনা কর্মকর্তা দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার নির্বাচিত হয়েছেন। আগেও বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তারা জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে ফোর্স কমান্ডার ও ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, শান্তিরক্ষী জনবলে ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ২৮ মাসের মধ্যে ২০ মাসই বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল। এর আগে-পরে সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী প্রথম সারির দেশগুলোর তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। জাতিসংঘের ‘ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশনস’-এর ওয়েবসাইটে শান্তি রক্ষা মিশনে কোন দেশ কত সামরিক ও পুলিশ সদস্য পাঠিয়েছে, তার বছর ও মাসওয়ারি প্রতিবেদন রয়েছে। তাতে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তথ্য রয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শান্তি রক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সামরিক ও পুলিশ সদস্য প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
আমরা আশা করি, জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের গুরুত্ব আরো বাড়বে। নেতৃত্বের অবস্থানেও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ভূমিকা বাড়বে।
লেখক: সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন