বাংলাদেশের ইসলামি শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের অন্যতম ছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী; যিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও আমির ছিলেন। তিনি ছিলেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও আল জামেয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসারও (হাটহাজারী মাদ্রাসা নামে পরিচিত) মহাপরিচালক। তিনি ছিলেন বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে নয়টি বইয়ের রচয়িতা ।
তিনি কয়েকটি ভাষায় কথা বলতে জানতেন। তার লেখা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে; বাংলা ভাষায়- হক ও বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব, ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা, ইসলাম ও রাজনীতি, সত্যের দিকে করুন আহ্বান, সুন্নাত ও বিদ-আতের সঠিক পরিচয় এবং উর্দু ভাষায়- ফয়জুল জারি (বুখারির ব্যাখ্যা), আল-বায়ানুল ফাসিল বাইয়ানুল হক ওয়াল বাতিল, ইসলাম ও ছিয়াছাত এবং ইজহারে হাকিকাত প্রভৃতি। শাহ আহমদ শফীর জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে। তার বাবার নাম বরকম আলী, মা মোছাম্মাৎ মেহেরুন্নেছা বেগম। আহমদ শফী দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। তার দুই ছেলের মধ্যে আনাস মাদানি হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক। অন্যজন মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক। শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ায়র আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, সেখানে চার বছর লেখাপড়া করেন। ১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন আহমদ শফী। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন।
তার জন্মসাল নিয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারেননি হেফাজতে ইসলামের জ্যেষ্ঠ নেতারা। তবে ইসলামি ঐক্যজোটের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেছেন, শাহ আহমদ শফীর বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর। উইকিপিডিয়া অনুযায়ী আল্লামা শফীর জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়ারটিলা গ্রামে ১৯২০ সালে। দেশে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার ভিত মজবুত করতে তার ভূমিকা এবং ধর্মীয় পাণ্ডিত্যের কারণে বাংলাদেশে দেওবন্দের অনুসারী আলেমদের কাছে শতবর্ষী আহমদ শফী ছিলেন অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র, তাকে ডাকা হত বড় হুজুর বলে। তবে নারী শিক্ষার বিরোধীতা, ব্লগারদের নাস্তিক আখ্যায়িত করে নানা বক্তব্য এবং বাঙালি সংস্কৃতির নানা অনুসঙ্গ ও প্রগতির বিরুদ্ধে অবস্থানের কারণে তিনি সমালোচিত হয়েছেন বার বার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে মাঠে নেমে আহমদ শফী সারা দেশে পরিচিতি পান। আল্লামা শফী ২০০৯ সালে আজিজুল হক ও অন্যান্য সিনিয়র ইসলামী ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি একটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করেন যেখানে, ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রমের নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। আল্লামা শফী ২০০৯ সালে আজিজুল হক ও অন্যান্য জ্যেষ্ঠ ইসলামী ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি একটি বিবৃতি প্রদান করেন; যেখানে ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। শাহ আহমদ শফী ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর আমিরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টে ভোগার পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত কারণে গত কয়েক বছর ধরেই আহমদ শফীর স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছিল। শিক্ষার্থীদের আকস্মিক বিক্ষোভের জেরে বৃহস্পতিবার তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান এবং এর পরপরই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন আল্লামা শফী। রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মেডিকেল বোর্ডে বসেন। শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় বিকেলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। সন্ধ্যায় তিনি গেন্ডারিয়ার আসগর আলী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানান, শনিবার বাদ জোহর হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে জানাজা হবে তাদের প্রয়াত আমিরের। জানাজা শেষে মাদ্রাসা কবরস্থানেই আহমদ শফীকে দাফন করা হবে হবে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মাদ্রাসার শূরা কমিটির (পরিচালনা কমিটি) সদস্য সালাহউদ্দিন নানুপুরী জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন