সরকারি রেজিস্ট্রশনবিহীন ক্লিনিকে ছেয়ে গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলা। তারা মানছে না সরকারের নিয়মনীতি। এই ক্লিনিক ব্যবসায়ীরা অবৈধ ভাবে এবং নামমাত্র চিকিৎসা দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অব্যবস্থাপনায় কেড়ে নিচ্ছে নিরহ নিষ্পাপ নবাজতকসহ গর্ভবর্তী মায়ের প্রাণ।
গত ২৫ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে শিরোমনি ক্লিনিকে উপজেলার কালুগাঁও গ্রামের সুরেন রায়ের গর্ভবর্তী স্ত্রী মালা রাণী নামে এক মহিলা তার স্বাস্থ্য চেকআপ করতে যায়। এ সময় ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখে বাচ্চা প্রসব হওয়ার আরো নয় দিন বাকী। তার পরেও ক্লিনিকের কর্মরত ম্যানেজার, নার্স, ওয়ার্ডবয় মিলে গর্ভবতী মাকে নর্মাল ভাবে বাচ্চা প্রসবের চেষ্টা করে। দিনভর গর্ভবতী মাকে হেস্তনেস্ত করার পর নরমালে বাচ্চা প্রসবে ব্যর্থ হলে ঐ দিন রাত ৮ টায় অস্ত্রোপচার করে চিকিৎসক। দিনভর বাচ্চাটি নর্মালে ডেলিভারীর ব্যর্থ চেষ্টায় বাচ্চাটি একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে অস্ত্রোপচারের মাত্র ১৫ মিনিট পর শিশুটি মারা যায়।
শিশুটির মা মালা রণী সাংবাদিকদের বলেন, আমি ক্লিনিকে এসেছিলাম চেকআপ করতে। এ সুযোগে ৩ জন পুরুষ ও নার্স মিলে আমাকে জোর করে ওটি রুমে নিয়ে যায়। বাচ্চা নর্মালে ইস্যু করার জন্য নিষ্ঠুর ভাবে পেটে চাপাচাপি করে, পেটে থাকা সন্তানটি তাদের এ অনিয়মের কারণে নিস্তেজ হয়ে যায়। তিনি বলেন, তার উপর জুলুম করার পরেও নর্মালে ব্যর্থ হয়। ওই দিন দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত তাকে টানা হেচড়া করে। তার পর সিজার করে বাচ্চা প্রসব করা হয়।
মালারাণীর সাথে থাকা ললিতা রাণী বলেন, আমরা গর্ভবর্তীকে চেকআপ করার জন্য ক্লনিকে থাকা ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। ডাক্তার পরীক্ষা করে বলেছেন বাচ্চা প্রসব হওয়ার আরো ৯ দিন বাকী। এমন কথা শুনে রোগী এবং স্বজনরা বাড়ী যেতে চেয়েছিল। এ সময় ক্লিনিকের ম্যানেজার অভি রায় কৌশল করে রোগীকে অটিরুমে নিয়ে স্যালাইন ও ইনজেকশন পুশ করে। ম্যানেজার তাদের বলেন, সুস্থ হলে তাকে বাড়ী নিয়ে যাবেন। স্যালাইন শেষে ৩জন পুরুষসহ নার্স মিলে গর্ভবর্তী মার নর্মালে বাচ্চা প্রসবের চেষ্টা করে। দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গর্ভবর্তীকে নিয়ে তারা টানা হেচড়া করে। এতে ব্যর্থ হলে ম্যানেজার ডাক্তার কাসেমকে দিয়ে সিজারের ব্যবস্থা করে। সিজারের ১০-১৫ মিনিট পর বাচ্চাটি মারা যায়।
রোগীর সংশ্লিষ্ট সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু সুলতান বলেন, বাচ্চাটিকে ক্লিনিকের লোকজন মেরে ফেলেছে। তিনি বলেন, অনিয়ম ভাবে ক্লিনিক পরিচালনা করার অপরাধে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ক্লিনিক সংশ্লিষ্ট অবিনাস রায় বলেন, ক্লিনিকে এ পর্যন্ত ৩টি শিশু মারা গেছে।
এ ব্যপারে জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মাহাফুজুর রহমান সরকার জানান, তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে যে সব ক্লিনিক ইতোমধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেননি তাদের তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন