কর্মচঞ্চল্য হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছু খুলেছে। রাজধানীর বিপণিবিতান, শপিংমল, মার্কেট, হাটবাজার, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, দোকানপাট, রাস্তাঘাট, গণপরিবহন, লঞ্চ-স্টিমার, ট্রেনে মানুষের সমাগম ফিরেছে আগের চেহারায়। কিন্তু কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষকে বাধ্য করারও কেউ নেই। গতকালও মন্ত্রী পরিষদ সচিব শপিংমল, মার্কেটও গণপরিবহনে মাস্ক পরতে বাধ্য করার কথা জানিয়েছেন। জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে বিপদের ঝুঁকি আরও বাড়বে। শীতে সংক্রমণের আশঙ্কা আছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, সেটি অফিসের ভেতরে এবং বাইরে থেকে কঠোর ভাবে তদারকি করা দরকার। নজরদারি না বাড়ালে সামনে বিপদে পড়তে হবে। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, আগামী শীত মৌসুমে করোনা নতুন করে হানা দিতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশে নতুন করে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। বাংলাদেশেও বাড়তে পারে। সংক্রমণ পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে সর্বস্তরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জরুরি প্রয়োজনীয় কাজের পরিসর বাড়ানো যেতে পারে। তবে সবকিছু উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলে বিপদের ঝুঁকি আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে।
গণপরিবহন তথা বাস, ট্রেন, লঞ্চ, স্টিমারে যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব মানতে বাধ্য করার কথা থাকলেও কেউ সেটা মানছেন না। পরিবহনের ড্রাইভার, হেলপার স্বাস্থ্যবিধি নামছে না। গণপরিবহনে সামাজিক দূরত্ব তুলে দেয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কোথাও স্বাস্থ্যবিধি নেই। রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, গুলিস্তান, বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট, রাজধানী মার্কেটসহ কয়েকটি মার্কেট, শপিংমল ও বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায় ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ স্বাস্থ্যবিধি নামছেন না। কারো কারো মুখে মাস্ক দেখা গেলেও অধিকাংশ ক্রেতা মাস্ক ছাড়াই কেনাকাটা করছেন। ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় নেই।
গতকালও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৭০৫ জন। এ সময়ে মারা গেছেন ৪০ জন। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে মানুষ উদাসীন। কয়েক মাস আগেও সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন কার্যকর ছিল। স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সেক্টর বন্ধ রাখায় রাজধানীতে স্থবির ছিল জীবনযাত্রা। এখন মানুষের জীবনযাত্রা পুরোটাই কর্মচঞ্চল্য। রাজধানীর ফুটপাতজুড়ে চলছে হকারদের রমরমা বাণিজ্য। রাজপথে এখন নিয়মিত যানজট। হাটবাজার, মার্কেট, বিপণিবিতান, বাস, লঞ্চ সর্বত্রই মানুষের প্রচÐ ভিড়। বাস ও ট্রেনে আগে অর্ধেক সিট খালি রাখা হলেও এখন সবগুলো সিটে যাত্রী আনা নেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে বাসস্ট্যান্ডে শুরু হয় অফিসগামী মানুষের দীর্ঘ লাইন, ভিড় এবং চিরচেনা গাড়িতে ওঠার ঠেলাঠেলি। বাসে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করছে মানুষ।
বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা করপোরেট হাউসগুলো এখন চলছে পুরোনো নিয়মে। পাড়া-মহল্লায় চায়ের দোকানগুলোয় মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে আড্ডা। আগের মতোই স্টেশনগুলোর চায়ের দোকান, হোটেল চলে সারা রাত। কোথাও স্বাস্থ্যবিধি নামার বালাই নেই।
রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে প্রচÐ ভিড়। কাঁচাবাজারের মাছ-সবজির অনেক দোকান এবং স্টল পুরোটাই পূর্ণ হয়ে গেছে। ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে কোনো সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই নেই। গতকাল টিসিবির খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির সময় দেখা যায় সাধারণ ক্রেতারা একজনের গায়ে অন্যজন ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ-তেল-ডাল সংগ্রহ করছেন। বিক্রেতারা ক্রেতাদের সচেতন করছেন না; ক্রেতাদের মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন