কক্সবাজারের মহেশখালীতে করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত পান চাষিরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় প্রাণপণ যুদ্ধে নেমেছেন। নতুন করে চাষে নেমেছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। করোনাকালীন সময়ে উৎপাদিত পান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ দিতে না পারায় বড় ধরণের লোকসানে পড়েছিল পান চাষিরা। মহেশখালী মিষ্টি পান দেশে সমাদৃত। বিদেশেও রফতানি হয়েছে।
এক বিড়া (৮০টি) বড় পান চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রæয়ারি ও মার্চ মাসে বিক্রি হয়েছে ৩শ’ টাকা থেকে ৪শ’ টাকায়। কিন্তু করোনার সময় সেই পান বিক্রি হয়েছে বিড়া ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকায়। আর ছোট ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেই পান এখন বিক্রি হচ্ছে বিড়া প্রতি ১০ টাকা দরে। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে পানের দাম কমে যাওয়ায় মহেশখালীতে লোকসানে পড়েছেন পানচাষিরা। কয়েকগুণ লোকসান গুণে তাদেরকে পান বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে মূলধন তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা। তবুও ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নতুন ভাবে পান চাষ শুরু করেছে পান চাষিরা।
চাষিরা বলছেন, আগে যে দামে পান বিক্রি হতো তার থেকে কয়েকগুণ কম দামে এখন বিক্রি করতে হচ্ছে। এ ছাড়া বরজ থেকে পান ভাঙতে যে শ্রমিক খরচ হয় পান বিক্রি করে সেই টাকা উত্তোলন কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও আগামী বছর পানের দাম পাবেন এমন আশায় নতুন ভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন চাষিরা।
পান ব্যবসায়ী বড় মহেশখালীর মোক্তার আহমদ জানান, করোনাভাইরাসের কারণে পান সরবরাহ না থাকায় মানুষ পান খাওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া বিদেশে পান রফতানি বন্ধ রয়েছে। উৎপাদিত এলাকায় পানের সরবরাহ বেশি থাকায় সামগ্রিক কারণে বাজারে পানের দাম কম।
এছাড়াও উৎপাদন ভালো হলেও বড় যে পান করোনার আগে বিক্রি ৩শ’ টাকা থেকে ৪শ’ টাকা দরে। সেই পান করোনাকালীন যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বিক্রি হয়েছে বিড়া প্রতি ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকায়। চরম ক্ষতিতে পড়ে চাষীরা। মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের পানচাষি সরওয়ার আলম জানান, ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত পান ভাঙতে খাওয়া দাওয়াসহ একজন শ্রমিককে খরচ দিতে হয় ৫শ’ টাকা। এখন অবস্থা এমন, পান ভেঙে বিক্রি করে তাতে শ্রমিকের মজুরি হয়না। দাম কমার বিষয়ে কালারমার ছড়া আবদুর রহিম নামে এক কৃষক জানান, করোনার কারণে দূরদুরান্ত থেকে পাইকারী ক্রেতারা আসতে পারছেন না। ফলে পান বিক্রয় কমে গেছে।
হোয়ানকের নাছির উদ্দীন নামে আরেক কৃষক জানান, এক বিঘা জমিতে বছরে পান উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও শ্রমিকের খরচ পড়ে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। সেখানে সর্বনিম্ন তিন লাখ টাকা পর্যন্ত পান বিক্রি হয়। এ বছর খরচের টাকা তুলতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
মহেশখালী কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি স¤প্রাসারণ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আকন্দ জানায়, চলতি বছর মহেশখালীতে ১৬০০ হেক্টর জমিতে পান উৎপাদন হয়েছে ৪০ হাজার টন। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানচাষে জড়িত। করোনার কারণে চাষিরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন