স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জঙ্গি সন্দেহে ৬ যুবককে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এরা হলোÑতাজুল ইসলাম ওরফে তাজুল (২৯), জিয়াবুল হক ওরফে জিয়া (২৪), মোস্তাফিজুর রহমান সিফাত (২৭), জাহিদ আনোয়ার পরাগ (২২), নয়ন হোসেন (২১) এবং জাহিদ হাসান মাইন (২১)। র্যাবের দাবি, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৫ জন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। অন্যজন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) প্রযুক্তি শাখার পরিচালক। তারা বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছিলো। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ৭ রাউন্ড গুলি, ১৩টি ডেটোনেটর, ৩৪টি সার্কিট, ৪টি চাপাতি, ৫টি ছোট চাকু, নয়টি আইডি কার্ড, ৫টি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১২টি চকলেট, ১শ’ গ্রাম বারুদ, ৪শ’ গ্রাম পাওয়ার জেল, ৮ গ্রাম সাদা গান পাউডার, ৫ গ্রাম লাল গান পাউডার ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল র্যাব সদরদফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান এ তথ্য জানান।
র্যাব জানিয়েছে, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে সিফাত আইএসের নামে দেশে চালানো ১১টি জঙ্গি হামলার দায় স্বীকারকারী একটি ওয়েব-সাইটের (আত-তামকীন) এডমিন। দেশে-বিদেশে আলোচনায় আসতেই এরা আইএসের নাম ব্যবহার করতো। গ্রেফতারকৃত জিয়াবুল হক জিয়া মাদারীপুরের এক শিক্ষক হত্যা চেষ্টার জন্য প্রাথমিক নির্দেশ পেয়েছিলেন।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, জেএমবি এবং এবিটি দাওলাতুল ইসলাম ব্যানার ব্যবহার করে যৌথভাবে কাজ করছে। এই ব্যানারে তারা হলি আর্টিজানসহ ১১টি হামলা ও তার দায় স্বীকার করে। জঙ্গিরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য থ্রিমা, ইমো ও টেলিগ্রাম অ্যাপস ব্যবহার করে। এছাড়াও ফেসবুকে গ্রুপ পেজ খুলেও যোগাযোগ করে। মুফতি মাহমুদ খান আরো বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে, জেএমবি’র বেশ কিছু গ্রুপ বিগত জঙ্গি হামলার মতো নাশকতার প্রস্তুতি নিয়েছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে জাহিদ আনোয়ার পরাগকে গ্রেফতার করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গাবতলীতে অভিযান চালিয়ে অন্যদের গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা নিজেদের জেএমবি এবং এবিটি সদস্য ও জেএমবি’র সদস্যরা নিজেদের দাওলাতুল ইসলামের সদস্য দাবি করেছে। এদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান জেএমবি’র দাওলাতুল ইসলামের মুখপাত্র ‘আত্-তামকীন’ জঙ্গি সাইটের এ্যাডমিন। এই ওয়েব সাইটের মাধ্যমে মিডিয়াতে নিজেদেরকে আইএস হিসাবে সম্প্রচার করে। বিভিন্ন সময় হত্যাকান্ডের পর পর আত্-তামকীন আইএস এর পক্ষে বাংলায় দায় স্বীকার করে। তবে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে এদের যোগাযোগের তথ্য প্রমান পায়নি র্যাব। জঙ্গিরা ফেসবুকের পোস্টের ওপর ভিত্তি করে মনোভাব যাচাই করে থাকে। কয়েকটি স্তর পেরিয়ে ও গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর যখন কোন সদস্য জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তখন ওই সদস্যকে পর্যবেক্ষণে রেখে বিশ¡স্ততার ভিত্তিতে তাকে চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এরপরই সে মিশনে বেরিয়ে পড়ে, যাকে তারা হিযরত নামে অভিহিত করে। সে হিযরতে বেরিয়ে গেলেই অফলাইন হয়ে যায়। অর্থাৎ আমীরসহ সকলের সাথেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মিশন শেষে সে নিরাপদে ফিরতে পারলে কিছুদিন পর পুনরায় দলের সাথে যোগাযোগ করেন।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, এরা নিজেরাই চাঁদা দিয়ে অথবা শুভাকাঙ্খিদের কাছ থেকে ইয়ানত সংগ্রহ করে সংগঠন পরিচালনা করে। ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকার কারণে তারা তাদের আর্থিক লেনদেনের প্রক্রিয়াটি ব্যাংক অথবা বিকাশের মাধ্যমে সম্পন্ন করে না। এক্ষেত্রে তারা স্বর্ণচোরাকারবারী প্রক্রিয়ায় অর্থ সংগ্রহ করে। এর সুবিধা হলো যদি কেউ কখনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে তাকে চোরাকারবারী হিসেবে চিহিৃত করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন