হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার পর দ্বিতীয় প্রাচীনতম দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফটিকছড়ির ‘নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা’র মুহতামিম পদ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যে কোন মূহুর্তে অঘটন ঘটে যেতে পারে। উদ্ভূদ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে গত বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অনুষ্ঠিত উপজেলা আইন শৃংখলা সভায় স্থানীয় এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ‘ফটিকছড়িতে হাটহাজারী মার্কা কোন অবস্থা তৈরী হতে দেব না’ মর্মে হুঁসিয়ারী দেয়ার পর দু’পক্ষই রাতে উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমঝোতা বৈঠকে বসতে বাধ্য হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৮ মে আল-জামিয়াতুল আরবিয়া নছিরুল ইসলাম ‘নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা’র মুহতামিম আল্লামা সাইয়্যেদ মুহাম্মদ ইদ্রিছ ইন্তিকাল করলে মুহতামিমের পদটি শুন্য হয়। তারই প্রেক্ষিতে একজন মুহতামিম নিয়োগ দেয়ার প্রয়োজনীয়তা হেতু দায়িত্বপ্রাপ্ত নায়েবে মুহতামিম মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমীকে মজলিশে শুরার সভা আহবান করার অনুরোধ জানান ওই মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লী এবং সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফি। কিন্তু তিনি কোন উদ্যোগ নেননি বরং গড়িমসি করে সময়ক্ষেপণ করছিলেন বিধায় মাদ্রাসা শুরা কমিটির সভাপতি ও মুতাওয়াল্লীর ক্ষমতাবলে আল্লামা শফি গত ৭ জুন বার্ধক্যজনিত কারণে তাঁর নিজ কার্যালয়ে মজলিশে শুরার সভা আহবান করেন। উক্ত সভায় উপস্থিত শুরা সদস্যগণের সর্বসম্মতিক্রমে এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে অনুপস্থিত সদস্যগণের সম্মতি নিয়ে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার শিক্ষা বিভাগীয় প্রধান মাওলানা মুহাম্মদ ছলিম উল্লাহকে ওই মাদ্রাসার মুহতামিম নিযুক্ত করা হয়। পরে নবনিযুক্ত মুহতামিম মাওলানা ছলিম উল্লাহ ‘মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, ৭৮ মাসের বাসা ভাড়া বকেয়াসহ নানা অভিযোগে নায়েবে মুহতামিম মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমীকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দিয়ে দেন’। এর পূর্বাপর অবস্থা থেকেই মাওলানা ছলিম উল্লাহ এবং হাবিবুর রহমান কাসেমীর পক্ষে এলাকাবাসী বিভক্ত হয়ে পাল্টা-পাল্টি প্রচার-অপপ্রচার প্রতিযোগিতা শুরু করে। তাই সরকার মাদ্রাসার নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরা বসিয়েছে। এরিমধ্যে মাওলানা ছলিম উল্লাহকে মুহতামিম নিয়োগ বৈধ নয় বলে অব্যাহতিপ্রাপ্ত নায়েবে মুহতামিম মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী আদালতের আশ্রয় নেন। কিন্তু আদালত দু’পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয়। ইত্যবসরে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় ছাত্র অসন্তোষে আল্লামা আহমদ শফী পুত্র আনাস মাদানীর পতন এবং মুহতামিম পদ থেকে আল্লামা শফীর পদত্যাগ পরবর্তী চিরবিদায়ে মূল কর্তৃত্বে অলংকৃত হয় দীর্ঘদিন নিগৃহীত হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। এতে করে আরব বসন্তের ন্যায় পুরো কওমী অঙ্গনেও পরিবর্তন হাওয়া শুরু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আল্লামা শফীর অনুসারী খ্যাত নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা ছলিম উল্লাহকে সরিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারী খ্যাত মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমীকে ওই পদে বসাতে ২৫ সেপ্টেম্বর জুমাবার (আজ) কতিপয় এলাকাবাসী এবং বহিরাগত লোকজন মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে জমায়েত কর্মসূচী ঘোষণা করেছিল। পাল্টা হিসেবে মাওলানা ছলিম উল্লাহ’র লোকজনও ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। এমনতর পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ফটিকছড়ি উপজেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় স্থানীয় এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ঘোষণা দিতে বাধ্য হন; আল্লামা শফীকে শ্রদ্ধা করতাম। ওনি মারা গেছেন। ওখানে জুনায়েদ বাবুনগরী আছেন; ওনাকেও শ্রদ্ধা করি। মুরুব্বী হিসেবে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকেও শ্রদ্ধা করি। হাটহাজারী মাদ্রাসায় কোন গন্ডগোল হোক- আমরা চাইনি; সরকারও চায়নি। এখন দেখছি- আমার ফটিকছড়িতে হাত দিচ্ছে! সোজা কথা- আমার ফটিকছড়িতে আমি কোন কিছু করতে দেব না। আমি সবার এমপি; ওনারা দু’পক্ষেরও এমপি। আমি আল্লামা শফী গ্রæপ এবং জুনায়েদ বাবুনগরী গ্রæপেরও এমপি। আমি আলিয়া মাদ্রাসা কিংবা সুন্নীদেরও এমপি। আমি সবার কথা শুনব। শুনেছি দু’গ্রæপ নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার সামনে হাজির হবে। আমার সুস্পষ্ট নির্দেশ- রাস্তায় যাকেই পাবেন; গ্রেফতার করে জেলে দেবেন। দায়-দায়িত্ব আমার। মাদ্রাসার আশ-পাশে কেউ অবস্থান নিতে পারবে না। আমি যতক্ষণ এমপি আছি; সরকারকেও এ নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। সরকার হাটহাজারী মাদ্রাসার বিষয়ে স্বীকৃতি দিলে আমি শুনব; এখনো ম্যাসেজ আসেনি। যখন আসে; তখন তাদের কথা শুনব। এর আগে নয়। আর বাড়াবাড়ি করলে আমি সোজা মাদ্রাসায় তালা মেরে দেব।
স্থানীয় এমপির এমন হুঁসিয়ারী বার্তা পেয়ে গত বৃহষ্পতিবার রাতেই দু’পক্ষ ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমঝোতা বৈঠকে বসতে বাধ্য হয়। বৈঠকে উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সায়েদুল আরেফীন, নাজিরহাট পৌর মেয়র এসএম সিরাজুদ্দৌল্লাহ, ফটিকছড়ি থানার ওসি মোঃ বাবুল আকতার ও নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা ছলিম উল্লাহ এবং বরখাস্ত নায়েবে মুহতামিম মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমীসহ উভয় পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী চলা এ বৈঠকে লিখিত সিদ্ধান্ত হয় যে; স্থানীয় এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বে উভয় পক্ষের সম্মতিতে নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার চলমান সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করা হবে। এমপির মধ্যস্থতায় সমস্যা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষ কোন প্রকার সভা-সমাবেশ, মিছিল বা আইন শৃংখলার অবনতি হয়- এমন কোন কার্যকলাপ করবে না। কোন পক্ষ করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুন্ন হয়- এমন কোন কাজ উভয় পক্ষ করবে না। বিশেষ করে- ফেসবুকে পোস্ট, লাইক, লাইভের মাধ্যমে মাদ্রাসার সুনাম বিনষ্ট হয়; এমন কোন বিষয়ে উভয় পক্ষ কোন বক্তব্য দিবে না। লিখিত এ অঙ্গিকারনামায় আল্লামা শফী গ্রæপের মাওলানা ছলিম উল্লাহ ও জুনায়েদ বাবুনগরী গ্রæপের মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী এবং উভয় পক্ষের ৩ জন করে সাক্ষী স্বাক্ষর করেন। ফলশ্রæতিতে শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) কোন পক্ষই রাস্তায় নামতে পারেনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন