শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

রংপুর নগরীর ৯০ ভাগ এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পানির নিচে

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

রংপুর থেকে হালিম আনছারী | প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:১২ পিএম

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে রংপুরের মানুষ। শত বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টির কারনে রংপুর মহানগরীর পানি নিষ্কাশনের একমাত্র অবলম্বন ‘শ্যামাসুন্দরী খাল’ উপচে গিয়ে বানের পানিতে ডুবে গেছে নগরীর ৯০ ভাগ এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নগরীর প্রায় লক্ষাাধিক মানুষ। কোথাও হাটু পানি, কোথাও কোমরপানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার ঘর-বাড়ি ও স্থাপনা। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ক্ষতি হয়েছে অপূরনীয়। পানিবন্দি মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে স্কুল-কলেজে। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশিদের বাড়ির ছাদে।
টানা ১০ ঘণ্টার ভারী বর্ষণে রংপুর মহানগরীসহ জেলার অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে রেলপথ ডুবে গেছে। ফলে এসব এলাকায় রেল ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার সব অলিগলি পানিতে ডুবে গেছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার রাত ১০টা থেকে রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪’শ ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা ় গত ১০০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। রাতভর অবিরাম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরীর পয়ঃনিষ্কানের একমাত্র অবলম্বন ‘শ্যামা সুন্দরী খাল’ ও ‘কেডি ক্যানেল’। ভেঙে পড়েছে নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা। পানি নিষ্কাশনের সুযোগ না থাকায় পানির মধ্যেই চলছে যাতায়াত। প্রবীণরা বলছেন, গত ৪০/৫০ বছরেও এমন বৃষ্টি দেখেননি তারা। ৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যাতেও এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়নি।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর বিভিন্ন এলাকার পানিবন্দি মানুষ ভোর রাতেই বিভিন্ন স্কুল কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন। ভোর রাতে হঠাৎ করে বাড়ি-ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় অনেকেই বাড়ির আসবাবপত্র, বিছানাপত্র সরিয়ে নিতে পারেননি। ফলে সেগুলো পানিতে ডুবে গেছে। বিশেষ করে তোষক, বালিশসহ কাপড়-চোপড় ভিজে যাওয়ায় চরম বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। নগরীর অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাগুলোতে সন্ধ্যা ৬ টায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোমর পানি কোন কোন এলাকায় বুক পর্যন্ত পানি রয়েছে। এসব এলাকায় ঘরের জানালার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বিশেষ করে নগরীর বাবু খা, গুড়াতিপাড়া, গণেশপুর, মুলাটোল, পাক পাড়া, গোমস্তা পাড়া, মুন্সিপাড়া, রাধাবল্লভ, ধাপ চিকলি, শাপলা, সেনপাড়া, চামড়াপট্টি, হাবিব নগর, মিস্ত্রিপাড়া, বালাটারী, দেওডোবা, পার্বতীপুর, কেরানীপাড়া, ধান, শিমুলবাগ, হাজীপাড়া, মেডিকেল পুর্বগেট, জুম্মাপাড়া, আদর্শপাড়া, কামার পাড়া, জলকর, কুকরুল, আমতলা, স্টেশন এলাকা, মুসলিম পাড়া, মন্ডলপাড়া, তাজহাট, ধর্মদাস, কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, কলাবাড়ি দর্শনা, মর্ডান মোড়, মেডিকেল পাকার মাথা, জলকর, নিউ জুম্মাপাড়া, খটখটিয়াসহ অধিকাংশ এলাকাতেই কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। পানিবন্দি লোকদের নিজ বাড়ি ছাড়া তাদের কোন যাওয়ার যায়গা নেই বলে অনেকেই বাধ্য হয়ে স্কুল কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, হঠাৎ করে এভাবে জলাবদ্ধতায় অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে তাদের। বাড়ির আসবাবপত্র থেকে শুরু করে মূল্যবান কাগজপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ বাড়ির পানির পাম্প, ফ্রিজ এবং ওয়াশিং মেশিনসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রাদি নষ্ট হয়ে গেছে। নগরীর বিভিন্ন মার্কেটে পানি ঢুকে পড়ায় দোকানের মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি।
বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আশ্রয় নেয়া লোকদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা জানান, এত বড় একটি দুর্যোগ অথচ আগে থেকে সিটি কর্পোরেশন অথবা আবহাওয়া অফিস কেউই কোন সতর্কবাণী বা পূর্বাভাস দেয়নি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। তাছাড়া এখন পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন থেকে কেউই কোন খোঁজ-খবর নেয়নি।
এদিকে হঠাৎ ভারী বর্ষণ এবং হাল্কা বাতাসের কারনে ভোর রাত থেকেই নগরীতে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। দুপুর নাগাদ কোন কোন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা সম্ভব হয়নি। এতে করে খাবার নিয়েও বিড়ম্বনায় পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কেউ কেউুুুুুুু হোটেল থেকে খাবার এনে খেলেও অনেকের পক্ষেই তা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া পানি উঠে পড়ায় অধিকাংশ হোটেলও বন্ধ রয়েছে। ফলে বিকেল পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হয়েছে অনেক পরিবারকেই। তবে এতে এলাকা ভিত্তিক অনেক তরুন-যুবক ও প্রতিবেশিদের এগিয়ে আসতে দেখা গেছে। তারা নিজেদের উদ্যোগে খাবার রান্না করে সরবরাহ করছেন।
এদিকে পানিবন্দীদের উদ্দ্বারে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি টিম। তারা নৌকায় করে মানুষদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, জেলার তিস্তা, ধরলা, করতোয়া, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী নদীসহ বিভিন্ন নদী বিধৌত এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলোতে আবারও দেখা দিয়েছে বন্যা। তিস্তার ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভারি বর্ষণ নদীর পানি বৃদ্ধিতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি জমি, ফসল আর পুকুর-বিল তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া জানিয়েছে, বৃষ্টি আরও দু-একদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এভাবে বৃষ্টিপাত হলে গোটা নগরী পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
সাদিকুর রহমান ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:১৯ পিএম says : 0
রংপুর মহানগর অপর্যাপ্ত, অপরিকল্পিত ও সংকীর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য বেশি বিপর্যস্ত হয়েছে l মাত্র একদিনের ভারী বৃষ্টি তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে l দক্ষিণাংশের কলেজ রোড হাবিবনগর ঠিকাদার পাড়া মাস্টারপাড়া বনানী পাড়া দক্ষিণ কামারপাড়া কামারপাড়া ও লালবাগের অবস্থা সবথেকে ভয়াবহl সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন l
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন