শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ চরমে

দ্বিতীয় দিনেও নগরীর ৭০ ভাগ এলাকা পানির নিচেঃ পাশে নেই সিটি কর্পোরেশন

রংপুর থেকে হালিম আনছারী | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:২১ পিএম

শত বছরের ইতিহাস ভঙ্গ করে রেকর্ড পরিমান বৃষ্টির দ্বিতীয় দিনেও নগরীর ৭০ ভাগ এলাকা পানির নিচে রয়েছে। ইতিমধ্যে নগরীর প্রধান সড়কসহ কিছু এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও এখনও নগরীর অধিকাংশ এলাকাই পানির নিচে তলিয়ে আছে। ফলে পানিবন্দি এসব এলাকার মানুষের দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে। পানিবন্দি এলাকাগুলোর প্রতিটি বাড়িরই পানির পাম্প, ফ্রিজসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রাদি নষ্ট হয়ে গেছে। এমন দুঃসময়েও পাশে পাচ্ছেন না সিটি কর্পোরেশন তথা মেয়র বা কাউন্সিলরদের।
সোমবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর মুলাটোল, গুড়াতিপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, গনেশপুর, বাবুখাঁ, আদর্শপাড়া, হাবিবনগর, বালাটারী, দেওডোবা, পাঠানটারী, পার্বতীপুর, কেরানীপাড়া, শালবন, তাজহাট, মাহিগঞ্জ, রবার্টসন্সগঞ্জ, মুসলিমপাড়া, বাবুপাড়া, ঠিাকাদারপাড়া, নুরপুর, মরিচটারী, জুম্মাপাড়া, শালবন, দখিগঞ্জ, মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা এলাকা, সেনপাড়া, হাজিপাড়া, মুলাটোল, মুন্সিপাড়া, গোমস্তপাড়া, গুপ্তপাড়া, খলিফাপাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সর্দারপাড়া, ঈদগাহপাড়া, ধাপ, লালকুঠি, রাধাবল্লভ, হনুমানতলাসহ অনেক এলাকায় এখনো হাঁটুপানি রয়েছে। কোথাও কোথাও এখনও কোমরপানি রয়েছে। এখনো পানির নিচে এসব এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে এসব এলাকার অনেক পরিবার আশ-পাশের স্কুল-কলেজের উঁচু ভবনে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই আত্মীয়দের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলোর মাঝে চরম খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। তবে গতকাল এসব পরিবারকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীরা নিজ উদ্যোগে খিচুড়িসহ শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। তবে তা চাহিদার তুলনায় অতি নগন্য। বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ায় ঘরে ফিরছেন স্থানীয়রা। নষ্ট হয়ে যাওয়া আসবাবপত্র শুকিয়ে নিচ্ছেন তারা। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারেনি তারা। এদিকে ২য় দিনেও এমন জলাবদ্ধতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পানিবন্দি মানুষ। স্কুল-কলেজে আশ্রয় নেওয়া মানুষরা উৎকন্ঠায় সময় অতিবাহিত করছেন। তাদের অভিযোগ সিটি কর্পোরেশনের অবহেলায় অপূরণীয় ক্ষতি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। পানিবন্দি হয়ে দু’দিন ধরে মানবেতর জীবন যাপন করলেও এখন পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন থেকে তাদের কোন খোঁজ খবর নেয়া হয়নি। তারা মেয়র এবং কাউন্সিলরদের প্রতি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নগরীর মুলাটোল এলাকার বাসিন্দা আজমল হোসেন জানান, স্কুলে রোববার থেকে পরিবার নিয়ে আছি। বাড়ির বিছানার ওপরে এখনো পানি। কেউ কোন খোঁজ নিচ্ছে না। অসহায় হয়ে এখানে পড়ে রয়েছি। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আশ্রয় নেয়া ছাড়াও নিজ বাড়িতেই থাকা অনেক নি¤œ আয়ের মানুষ খাদ্যাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পানিবন্দি থাকায় তারা কাজে যেতে পারছেন না। তাছাড়া নগরীর অধিকাংশ রাস্তা এখনও পানির নিচে থাকায় রিক্সা বা অটো রিক্সা নিয়ে বেরুতে পারছেন না। ফলে তাদের ঘরের খাবার ফুরিয়ে গেছে। অনতিবিলম্বে এসব পরিবারে খাদ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন।
এদিকে, শত বছরের ইতিহাসে এমন ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে নগরীর ‘শ্যামাসুন্দরী খাল’ সংস্কার এবং পূনঃ খনন না করাসহ অপরিকল্পিত নগরায়ন ও ড্রেন নির্মাণে ধীরগতিকেই দায়ী করছেন নগরবাসী। তাদের দীর্ঘদিন ধরে একমাত্র খালটির অনেকাংশ বেদখল হয়ে থাকাও সংস্কার না করার কারনকেই দায়ী করছেন তারা। তাদের মতে দীর্ঘদিন ধরে এটি সংস্কার না করায় এটি এখন ভরাট হয়ে গেছে। যার কারনে এই খাল পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন করতে পারছে না।
নগরীর প্রবীন নাগরিকগন জানিয়েছেন, নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ পরিষ্কার করতে হবে। শ্যামাসুন্দরী খালসহ বিভিন্ন খালগুলোর সঙ্গে নদীর সংযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে দ্রুত পানি নেমে যাবে। নাহলে আবারও এমন চিত্র দেখতে হতে পারে।
এ বিষয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে রসিকের প্যানেল মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রংপুর সিটি করপোরেশনের এলাকা ২ শ’বর্গ কিলোমিটার এলাকা ব্যাপী। বিশাল এই নগরীতে অন্তত ৫০ হাজার হতদরিদ্র মানুষ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি জানান, জরুরি ভিত্তিতে পানিবন্দি মানুষদের জন্য খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জরুরি কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন