রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যানকোভিড

গ্লোব বায়োটেকের সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ‘ব্যানকোভিড’ প্রাণিদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে নিরাপদ ও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। মানবদেহে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিক স্বদিচ্ছার প্রয়োজন। সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে কোভিড-১৯’র ভ্যাকসিন বাজারে আনতে চায় গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছেন গ্লোব বায়োটেক।

তারা বলছেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এই সংক্রমণে ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টটি শতভাগ দায়ী বলে সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদও (বিসিএসআইআর) বাংলাদেশে সংক্রমণের জন্য ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী বলে নিশ্চিত করেছে। গ্লোব বায়োটেক এর নিজস্ব প্রদ্ধতিতে উদ্ভাবিত ব্যানকোভিড ভ্যাকসিনটি ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রথম এবং একমাত্র আবিস্কৃত টিকা। প্রিক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যা সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং কার্যকর হিসবে প্রমাণিত হয়েছে। যার বিস্তারিত ফলাফল বায়ো-আর্কাইভে প্রি-প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। মাত্র ৬ সপ্তাহে বায়ো আর্কইভে ৫ হাজার ৮৫টি গবেষণাপত্র জমা পড়েছে। যারমধ্যে ৬৯তম গবেষণা হিসবে গ্লোব বাায়োটেকের ভ্যাকসিন সংক্রান্ত গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের সিইও ড. কাকন নাগ। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশীদ।

ড. কাকন বলেন, বর্তমান বিশ্বে ৬৬টি ভ্যকাসিন ডেভেলপ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৪টি ভ্যাকসিন ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। গ্লোব বায়োটেক এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমআরএনএ-এলএনপি-তে রুপান্তির করে ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। অ্যানিমেল ট্রায়ালে প্রমাণ হয়েছে এই ভ্যাকসিন শরীরে কোন বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে না। এমনকি রক্তেও কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। গ্লোব আবিস্কৃত ‘ব্যানকোভিড’ যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানা আবিস্কৃত ভ্যাকসিনের সমপর্যায়ের বলে দাবি করেন তিনি বলেন, এটি প্রয়োগে স্বল্প সময়ে প্রাণিদেহে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রমাণ মিলেছে।

ড. কাকন বলেন, বর্তমানে বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে একটি শক্তিশালী কার্যকর ভ্যাকসিন প্রয়োজন। বিশ্বকে করোনামুক্ত করতে হলে প্রায় ৭ বিলিয়ন ভ্যাকসিন প্রয়োজন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা মাত্র দেড় বিলিয়ন। যদিও এই উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ বাড়িয়ে ইতোমধ্যে ৩ বিলিয়ন করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আমাদের দেশ ভ্যাকসিনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাত্র ৩ শতাংশ ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। অথচ দেশের কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। এক্ষেত্রে গ্লোবকে সুযোগ দেয়া হলে সবার আগে দেশের মানুষের ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

ভ্যাকসিনটির নামকরণ প্রসঙ্গে গ্লোব বায়োটেক এর সিইও ড. কানক নাগ বলেন, তাদের উদ্ভাবিত ব্যানকোভিড নামেরই বিএএন একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামকে প্রতিনিধিত্ব করে, যা করোনাকে ব্যান বা প্রতিহত করতে সক্ষম। দ্রুততম সময়ে ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসীর সেবায় ব্যানকোভিডকে উন্মুক্ত করারও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

গ্লোব বায়োটেকের চেয়ারম্যান হারুনর রশীদ বলেন, আমার দৃষ্টিতে এই বাংলাদেশকে যে জায়গায় আনা হয়েছে-এটা আর কোনো নেতা অথবা নেত্রী পারতো না। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক চেষ্টা ও নিজের সেক্রিফাইজ বাংলাদেশকে এই পর্যায়ে এনেছে। আমার বক্তব্যগুলো উনি শুনবেন, জানবেন আমাদের ভ্যাকসিনটা যেন দ্রুত ফেস-১, ফেস-২ যেতে পারি। কারণ, এখানে অনেকগুলো নির্ভর করবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার উপরে। যখন যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি মডার্না ভ্যাকসিন আনলো অ্যানিমেল ট্রায়াল ছাড়াই হিউম্যান ট্রায়ালের পারমিশন দিয়ে দিয়েছে, আমেরিকার মতো জায়গায়। আমরা তিন মাস অ্যানিম্যাল ট্রায়াল করে এখানে আসছি এবং ভালোভাবে আসছি। আমাদের এটা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। আমেরিকা থেকে অনেক বিজ্ঞানী ফোন করেছে, উনারা দেখেছেন। বলেছেন এক্সিলেন্ট, তুলনা করার মতো নয়। এখানে যে ডাটা তৈরি ব্যবহার করা হয়েছে এতো ডাটা ব্যবহার করার দরকার ছিলো না। যেহেতু আমরা গরীব দেশ, সউদী আরব বলে মিসকিনের দেশ। মিসকিনের দেশে ভ্যাকসিন বানাতে পারবে-এটা বড়। প্রথমে তো অনেকে বিশ্বাসই করেনি। বাংলাদেশের অনেক সাইন্টিস্টও বিশ্বাস করতে পারেনি। ডাক্তারও বিশ্বাস করেনি, পাগল নাকি, কীভাবে তারা ভ্যাকসিন বানালো।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অসম্ভবকে সম্ভব করেছি। এই ভ্যাকসিন পৃথিবীর অন্যতম ভ্যাকসিনের মধ্যে একটা হবে। এই ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ। সরকার ফ্রি অব কস্টে জনগণকে দেয়; পৃথিবীতে যেভাবে দেয়। সরকার যদি বাহির থেকে আনে ১০ হাজার ডোজ আনে কাকে দেবে। পুলিশ, বিজিবি, সচিব কাকে দেবে? আমরা যদি দিতে পারি তাহলে ১৮ কোটি জনগণের কাছে পৌঁছাবে। আশা করি যারা মিডিয়াতে আছেন তারা সক্রিয় থাকবেন, যে যে অবস্থানে আছেন সে অবস্থানে থেকে আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা একটা জিনিস দিতে চাচ্ছি। আমরা যেন ঠিক মতো দিতে পারি। মানুষ যেন উপকৃত হয়। একটা মানুষের জীবনও যদি বাঁচাতে পারি-এর চাইতে বেশি কী আছে। এটা ফেক জিনিস না; ফেক জিনিস নিয়ে আমরা অনুরোধ করছি না। আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন। আশা করি সরকারও থাকবে, সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। সবাই মিলে যদি চেষ্টা করি ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে সারা দেশে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করতে পারব। জানুয়ারির মধ্যে টিকা প্রস্তুত হয়ে যাবে বলেও জানান গ্লোব বায়োটেকের চেয়ারম্যান হারুনর রশীদ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন