বড় অসময়ে সিলেটের মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা। করোনা কেড়ে নিয়েছে তাদের স্বচ্ছলতা। সেই স্বচ্ছলতার উপকারভোগী ছিল অসহায় আপনজনও। কিন্তু দিন বদলে খেলায় তারা নিঃস্ব রিক্ত এখন।
বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা মারাত্মক সঙ্কটে। গত ছয়মাস ধরে আটকে পড়া প্রবাসীরা এখন দিশেহারা। লন্ডভন্ড হয়েছে স্বচ্ছলময় জীবন। তাদের সংসারে ‘নুন আন্তে পান্তা ফুরোয়া’ অবস্থায়। ঋণের বোঝাও অনেকের ঘাড়ে। কর্মস্থলে ফেরার অনিশ্চয়তায় রয়েছেন প্রায় ১০ হাজার প্রবাসী। এদের অনেকে পেশা বদলিয়ে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়েছেন, অনেকে মাথা ছাপড়াচ্ছেন। এর মধ্যে ৫হাজার প্রবাসী সরকারীভাবে আর্থিক সহযোগীতা চেয়ে আবেদন করেছেন কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে।
জানা যায়, চলতি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী পরিবারের সাথে ছুটি কাটাতে দেশে ফিরেন। এই প্রবাসীরা বিভাগের ৪ জেলার-ই বাসিন্দা। নির্ধারিত ছুটি কাটিয়ে প্রবাস ফেরতকালে করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় ফ্লাইট। ফলশ্রুতিতে আটকা পড়ে যায় তারা। এতে করে নিরূপায় হয়ে পড়েন প্রবাসীরা। এভাবে ছয় মাসে আয় রোজগারহীন হয়ে পড়েন ওইসব প্রবাসী। মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত হওয়ায় সংসারে দেখা দেয় অভাব। এই অবস্থায় আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ করে চলতে হচ্ছে তাদের।
সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতি সহনশীল হয়ে উঠায় হয়ে আসলেও এখনো মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সাথে ফ্লাইট শুরু না হওয়ায় ফিরে যেতে পারছেন না তারা । এছাড়া অনেকের ভিসা ও আকামার মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। অনেকে আবার ফিরে যাওয়ার জন্য কফিলের সাথে যোগাযোগ করলেও ফেরার কোন আশ্বাস পাচ্ছেন না তারা। করোনা সঙ্কটের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ায় এখন লোকবল দরকার নেই বলে জানাচ্ছেন কফিল। এছাড়া বিদেশে অবস্থানরত অনেক প্রবাসীও হয়ে পড়েছেন কর্মহীন। এই অবস্থায় প্রবাসীদের পরিবারগুলোতে বিরাজ করছে নিরব হাহাকার।
অপরদিকে, দেশে আটকা পড়া ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসীদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে আবেদন করার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। সরকারি এই আহবানের পর সিলেটে প্রায় ৫ হাজার প্রবাসী কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন। তবে প্রবাসীদের কি পরিমাণ সহায়তা করা হবে তা এখনো বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সিলেট জেলা জনশক্তি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের নির্দেশ মতো তারা শুধু আবেদনপত্র গ্রহণ করছেন। পরবর্তীতে সরকারি ঘোষণা আসলে সে অনুযায়ী সহযোগিতা করা হবে প্রবাসীদের। কাতার ফেরত সিলেটের দক্ষিণ সুরমা প্রবাসী লুৎফুর রহমান জানান, দেশে আড়াই মাস ছুটি কাটিয়ে ফিরে যাওয়ার থাকলে ফ্লাইট বিড়ম্বনায় পড়ে যেতে পারেননি তিনি। ছয় মাস ধরে দেশে অবস্থান করায় ঋণ করে চলতে হচ্ছে তাকে।
সিলেট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মীর কামরুল হোসেন জানান, সহায়তার ব্যাপারে এখনো কোন নির্দেশনা আসেনি। ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসীদের আবেদন গ্রহণ করতে তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে কেবল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন