শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

গৃহবধূর বিবস্ত্র ভিডিও ও ছবি ভাইরালের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০২০, ৬:৪৫ পিএম

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে প্রবাসীর স্ত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিবস্ত্র ভিডিও ও আপত্তিকর ছবি ভাইরালের মাধ্যমে জিম্মি করে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে মঞ্জুর রহমান নামের এক লম্পট যুবকের বিরুদ্ধে।

এই ঘটনায় সুবচারের না পেয়ে ওই গৃহবধু শিশু সন্তান নিয়ে স্বামী সংসার থেকে বাবার বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। গ্রাম্য মাতাব্বরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অবশেষে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে ওই গৃহবধু।

লম্পট ওই যুবক মঞ্জুর রহমান (২৬) উপজেলার ভাওড়া ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের ইন্নছ আলীর ছেলে। ঘটনার পর ওই যুবক এলাকাতেই দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রতারণার শিকার প্রবাসীর স্ত্রী জানায়, তার স্বামী বিদেশ থাকার সুবাদে হাড়িয়া গ্রামের ইন্নছ আলীর বখাটে পুত্র মঞ্জুর রহমানের ক-ুনজর পড়ে তার ওপর। মঞ্জুর তাকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। তিনি বখাটের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় হুমকি এবং ভয়ভীতি দেখাতো।এক পর্যায় ওই বখাটের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যান ওই গৃহবধু। প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার বাড়িতে গিয়ে গোপনে কৌশলে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারন করে এবং আপত্তিকর ছবি তুলে।

পরে গৃহবধু তার ভুল বুজতে পেরে মঞ্জুরকে তার পথ থেকে সরে দাড়াতে বললে সে অস্বীকৃতি জানায়। মঞ্জু গৃহবধুর নিকট টাকা দাবি করে। গৃহবধু কয়েক দফায় মঞ্জুরকে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করে। কিন্তু এতেও বখাটে মঞ্জুর ক্ষান্ত হয়নি। সে বিদেশে যাবার পুরো ৬ লাখ টাকা দাবি করে ওই গৃহবধুর নিকট। তা না হলে সব ভিডিও ও ছবি ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকিও দেয়।ওই টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে প্রবাসে থাকা ওই গৃহবধুর স্বামীকে ভিডিও ও ছবির কথা বলে দেয় মঞ্জুর। এই ভিডিও ও ছবি সে গৃহবধুর কয়েকজন আত্মীয়ে ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠায়। এই অবস্থায় সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে পরেন গৃহবধূ। গ্রাম্য মাতাব্বরদের দ্বারে দ্বারের ধন্যা দেয় ওই গৃহবধু। একাধিকভার গ্রাম্য সালিশে ওই বখাটেকে শাস্তি দিলেও সে সংশোধন হয়নি, বরং আরো কয়েকজনকে ভিডিও ও ছবি পাঠায়।। গ্রাম্য সালিশে মাতাব্বর শাহীন, ফিরোজ আল মামুন, হেলাল উদ্দিন এবং জাহাঙ্গীরসহ আর অনেকেই উপস্থিত ছিলেন বলে গৃহবধূ জানিয়েছেন। বিবস্ত্র ছবি ও ভিডি প্রচার হওয়ার কারনে অবশেষে স্বামীর বাড়ি থেকে শিশু সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হন প্রতারনার শিকার ওই গৃহবধু।

এদিকে প্রবাসীর স্ত্রী অভিযোগ করেন, ন্যায় বিচার চেয়ে প্রথমে মির্জাপুর থানায় মামলা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু ভাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন এবং এলাকার কয়েকজন মাতাব্বর গ্রামে বিষয়টি মিমাংসা করার কথা বলেন।কিন্তু এতে কালক্ষেপন হওয়ায় নিরুপায় হয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মির্জাপুর আমলী আদালতে প্রতারক মঞ্জুর রহমানকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মামলা হওয়ার পর প্রতারক মঞ্জুর রহমান ও তার সহযোগীরা প্রবাসীর স্ত্রী ও তার পরিবারকে হত্যাসহ নানা ভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে আজ বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদককে বলেন ওই গৃহবধু।

এ ব্যাপারে বখাটে মঞ্জুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফেনে যোগাযোগ করা হলে প্রবাসীর স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টি জেনেছেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর মোবাইল ফোনের লাইনটি কেটে দেন।

অসহায় গৃহবধূ. তার মা মালেকা বেগম, খালা আছমা বেগম ও ইউপি মেম্বার রফিকুল ইসলাম রফিক প্রতারক ও বখাটে মঞ্জুর রহমানকে গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী করেছেন।

এ ব্যাপারে ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন ওই ভিডিও ও ছবি তিনি দেখেছেন। গ্রাম্য সালিশের তারিখ দেওয়া হয়। তার আগেই ওই গৃহবধু টাঙ্গাইল আদালতে মামলা দায়ের করেছে বলে তিনি শুনেছেন।

মির্জাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রবাসীর স্ত্রী ও মঞ্জুর রহমান নামে যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কারণে আপত্তিকর অবস্থার বিবস্ত্র ছবি ভাইরাল হয়েছে। গৃহবধূ পর্নোগ্রাফী আইনে মামলা করেছেন। আদালত থেকে মামলার তদন্ত চেয়েছেন। তদন্ত কাজ চলছে। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে তিনি বলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন