শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

মতিঝিলের রাস্তায় অবৈধ কারপার্কিং

প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর মতিঝিলের সবচেয়ে ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা হচ্ছে দিলকুশা। এ এলাকায় বেশিরভাগ অফিস বা কার্যালয় হলোÑ ব্যাংক, বীমা, ব্রোকারেজ হাউসসহ অন্যান্য কর্পোরেট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিলকুশায় যানবাহনে চলাচল তো দূরের কথা হেঁটে চলাও দায়। অতিরিক্ত গাড়ি চলাচল ও রাস্তার ওপর গাড়ি পার্ক করে রাখাই এর মূল কারণ বলে মনে করছেন ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারীরা। এ ছাড়া ফুটপাতের ওপরও যত্রতত্র পার্ক করে রাখা হয় মোটরসাইকেল।
ভুক্তভোগীরা জানান, দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নির্ধারিত স্থান রয়েছে। যা কিনা বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী ও দখলদারদের দখলে। এ এলাকায় কর্পোরেট অফিসগুলোর কর্মকর্তারা এবং বাইরে থেকে যারা এখানে কাজে আসেন, তারা গাড়ি পার্কিংয়ের নির্ধারিত জায়গা না পেয়ে রাস্তার ওপরই পার্ক করে রাখেন। আর এ সুযোগে যত্রতত্র পার্কিংয়ের জন্য জরিমানা গুনে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই এলাকার দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন থেকে শাপলা চত্বর হয়ে নটর ডেম কলেজ ও দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত সড়ক এবং পুরো দিলকুশা এলাকার প্রতিটি সড়কের দুই দিকে অসংখ্য ছোট-বড় গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি গাড়ি দুই-তিন ঘণ্টা থেকে শুরু করে বিকেলে অফিস ছুটি না হওয়া পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। অপ্রশস্ত জায়গা দিয়ে অন্যান্য গাড়ির এলোপাতাড়ি চলাচলের ফলে গোটা বাণিজ্যিক এলাকায় যানজট লেগেই থাকছে। দিলকুশায় সাধারণ বীমা টাওয়ারের আশপাশেও অনেক গাড়ি রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে। ওই এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্টদেরকেও এ ক্ষেত্রে নির্বিকার দেখা যায়। ফুটপাতে যে যেমন খুশি পার্কিং করে রাখছে মোটরসাইকেল। এতে সাধারণ মানুষের হাঁটাচলাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। অনুসন্ধানে জানা যায়, রাস্তায় পার্কিং নিষেধ থাকলেও বেশিরভাগ ভবনের নিচে পুলিশ বা ট্রাফিক সার্জেন্টদের টাকা দিয়ে ওই ভবনের কর্মকর্তারা গাড়ি রাখছেন। এটাকে তারা এক ধরনের সিকিউরিটি মানি বলে চালাচ্ছেন। বাইরের অন্য কেউ যদি কোনো কাজে দিলকুশা এলাকায় এসে অন্যদের দেখাদেখি গাড়ি পার্কিং করেন তাহলেই পুলিশ সার্জেন্ট এসে চাকায় লকার (তালা) লাগিয়ে দিচ্ছেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত জরিমানা আদায় হচ্ছে, ততক্ষণ লকার লাগানো থাকে। লকার ছাড়াতে গেলে বলা হয়, র‌্যাকারের (যেটি দিয়ে অন্য গাড়িতে শিকল লাগিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়) বিল দিতে হবে। অথচ লকার লাগানোর সময় তারা র‌্যাকার কল (ডাকা) করেন না। র‌্যাকার তখন কল করা হয় যখন কোনো গাড়ি থানায় নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু তার আগেই সাধারণ গাড়ির চালক বা মালিক জরিমানা পরিশোধ করে দেন।
অবৈধ সিন্ডিকেট
রাস্তার ওপর অবৈধ পার্কিং থেকে টোল তুলছে একটি সিন্ডিকেট। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে ওঠা এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত আছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অবৈধ পার্কিং করা গাড়ি থেকে পুলিশ নিয়মিত টাকা নেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাই তো তাদের গাড়িতে পুলিশ লকার লাগায় না। দিলকুশার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের বাইরে গাড়ি পার্কিং নিষেধ লেখা থাকলেও বেশিরভাগ জায়গায় তা লেখা নেই। গাড়ি পার্কিং করলেই কিছু কিছু গাড়ির মালিককে জরিমানা গুণতে হয়, অথচ পাশেই অন্য গাড়ি রাস্তায় পার্কিং করা থাকলেও সেগুলোকে অদৃশ্যকারণে জরিমানার আওতায় না আনার কারণে ওই এলাকার ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকায় পার্কিং করা এক প্রাইভেটকার চালক জানান, গাড়ির মালিকের পরিবার দিলকুশার অটবি ফার্নিচারের দোকানে গেছেন। গাড়ি রাস্তায় পার্কিং করেছি দেখে কিছু না বলেই পুলিশ চাকায় লকার লাগিয়ে দিয়েছে। আমার সামনে এভাবে হঠাৎ করে কিছু না বলেই পুলিশ আরও দুটি গাড়ির চাকায় লকার লাগিয়ে দেয়। পরে তারা একেক জন ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে গাড়ি ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
জানা যায়, ব্যাংকপাড়া হিসেবে খ্যাত দিলকুশায় সাধারণ বীমা টাওয়ারে ২০০৬ সালে পার্কিং ব্যবস্থা চালু করা হলেও সেখানে গাড়ি উঠছে না। মতিঝিল-দিলকুশার ব্যস্ত সড়কের দুইপাশে হাজার হাজার গাড়ি দিনভর পার্ক করে রাখা হয়। সেগুলো থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলা হয়। এর পাশাপাশি ৩৭তলা সিটি সেন্টারেও প্রায় সাড়ে ৫০০ গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানেও গাড়ি উঠছে না।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য সিটি সেন্টারে ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এই পার্কিং স্পট ফাঁকা পড়ে থাকে। একাধিকবার লিফলেট বিতরণ এবং মাইকিং করা হয়েছে। তবুও আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। এ জন্য দরকার গণসচেতনতা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন জানান, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য মতিঝিল সিটি সেন্টারে ব্যবস্থা আছে। সেখানে গেলে দেখা যাবে, সব খালি পড়ে আছে, গাড়ি নেই। কিন্তু রাস্তায় অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখছে। একটু কষ্ট করে পার্কিংয়ের জায়গায় গাড়ি রেখে অফিসে আসলে যানজট কমে যায়, তবে সেটা কেউ করতে চান না।
সরেজমিনে দেখা যায়, ইউনুস টাওয়ারের উল্টো দিকে ফিনিক্স টাওয়ারের পেছনে গাড়ি পার্কিংয়ের বিশাল স্থান অস্থায়ী ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীদের দখলে। স্থানীয় টোকাইরা বিভিন্ন জিনিস কুড়িয়ে এসব ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করছে। পার্কিংয়ের বেশিরভাগ স্থানই ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীদের দখলে। পাশেই রয়েছে গাড়ি মেরামতের একটি দোকান। ওই দোকানের বেশিরভাগ মালামাল পার্কিংয়ের স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে একটি খাবার হোটেল। এ স্থানে মতিঝিল-দিলকুশা এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা ওই সব দোকান থেকে ভাড়া আদায় করেন এবং উচ্ছেদ অভিযান হলে ব্যবসায়ীরা সবকিছু সরিয়ে নেয়। কিছুদিন পর আবার একই স্থানে ফের টাকা দিয়ে ওই ব্যবসায়ীরা বসে পড়েন।
মতিঝিল-দিলকুশা এলাকার যানজট ও অবৈধ পার্কিং প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহম্মেদ জানান, আমরা প্রকৌশল বিভাগকে সমস্যাগুলো জানিয়েছি, কিন্তু এসব সমস্যা সমাধান তাদের দায়িত্ব না বলে তারা আমাদের জানিয়ে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলাল জানান, রাজধানীর মতিঝিল ও দিলকুশার যানজট এবং অবৈধ কার পার্কিংয়ের সমস্যা সমাধানে সকলের সহযোগিতা ছাড়া কিছুই করা সম্ভব নয়। সিটি সেন্টারের যে ১০তলা পার্কিং সুবিধা রয়েছে পরপর তিনবার দরপত্র আহ্বান করেও কোনো ইজারাদার পাইনি আমরা। অবশেষে আমরা নিজেদের তত্ত্বাবধায়নে সিটি সেন্টারের পার্কিং চালু করি। এখানে ঘণ্টায় পার্কিংয়ের জন্য ১০ টাকা এবং একদিনের জন্য ৬০ টাকা দিতে হয়। কিন্তু আপনারা গিয়ে খোঁজ নেন দিনে ৫০টি গাড়িও সেখানে কেউ পার্ক করে না। অথচ ওই ভবনের সামনেই অবৈধভাবে শত শত গাড়িপার্ক করা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন