মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

ভাইরাসজনিত ক্যান্সার-ক্যাপোসিস সারকোমা

| প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৯ এএম

ভাইরাসের মাধ্যমে ক্যান্সারের কথা শুনলে অনেকেই অবাক হবেন। ক্যাপোসিস সারকোমা সাধারণত এইডস্ রোগীদের হয়ে থাকে। কিন্তু যখন ক্যাপোসিস সারকোমার সাথে ভাইরাসের সম্পৃক্ত থাকার কথা সাধারণ মানুষ শুনবে তখন সেটি অবশ্যই নতুন কোনো তথ্য মনে হবে। কিছু ধরনের ভাইরাস নির্দিষ্ট ক্যান্সার সৃষ্টির সাথে সম্পৃক্ত। এ সব ভাইরাস স্বাভাবিক কোষকে ক্যান্সার কোষে পরিবর্তন করতে সক্ষম। উদাহরণ স্বরূপ প্যাপিওলোমা ভাইরাসের কারণে মেয়েদের সারভাইক্যাল ক্যান্সার হতে পারে। হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের কারণে লিভার ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে।

এপস্টেনবার ভাইরাসের কারণে বারকিটস্ লিম্ফোমা হতে পারে। বারকিটস্ লিম্ফোমা এক ধরণের নন হজকিনস্ লিম্ফোমা যেখানে ক্যান্সার শুরু হয় ইমিউন বি’সেল থেকে। অর্থাৎ বারকিটস্ লিম্ফোমা লিম্ফেটিক সিস্টেম এর একটি ক্যান্সার যার সৃষ্টি হয় বি’লিম্ফোসাইট থেকে। বারকিটস্ লিম্ফোমা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অকার্যকর করে ফেলে। ক্যাপোসিস সারকোমা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি বিরল ক্যান্সার যা উৎপত্তি হয় সে সব কোষ থেকে যা লসিকা নালী এবং রক্তনালীর আবরণ সৃষ্টি করে থাকে। হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৮ কে ক্যাপোসিস সারকোমা সম্পৃক্ত হারপিস ভাইরাসও বলা হয়। ধারণা করা হয় ভাইরাসটি অনিরাপদ যৌন মিলন, রক্ত সঞ্চালন অথবা জন্মের সময় মা থেকে শিশুতে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। এইডস সনাক্ত করণে ক্যাপোসিস সারকোমা মারাত্মক একটি টিউমার। এইচ.আই.ভি ভাইরাস সংক্রমিত হলে আপনার ক্যাপোসিস সারকোমা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এইচ.আই.ভি ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। ফলে হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৮ দ্রুত বংশ বিস্তার করে। যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত দূর্বল থাকে বা থাকে না বললেই চলে। এই হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৮ ক্যাপোসিস সারকোমা সৃষ্টি করে থাকে। অতএব সার্বিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এইডস রোগীদের ক্ষেত্রে হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৮ ক্যাপোসিস সারকোমা নামক ক্যান্সার সৃষ্টি করে থাকে। এই ক্যান্সারের মাধ্যমে এইডস রোগী সনাক্ত করা যায়।

ক্যাপোসিস সারকোমার উপসর্গ ঃ (১) প্রাথমিক পরিবর্তনে ক্যাপোসিস সারকোমা সৃষ্টির কোনো ব্যথা থাকে না। (২) মিউকোসা অথবা মাঢ়ির পিগমেন্টেশনযুক্ত সমান স্থান বা এলাকা। (৩) সংক্রমণ আকৃতিতে বৃদ্ধি পেলে সংক্রমন স্থান উঁচু হয়ে থাকে। (৪) বড় সংক্রমনের কারণে খাবার গ্রহণ করার সময় এবং কথা বলতে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। (৫) ধীরে ধীরে আলসারের সৃষ্টি হয় এবং রোগের বিরতিহীন ব্যথা থাকতে পারে।

রোগের চিহ্ন সমূহ ঃ (১) ক্যাপোসিস সারকোমা একটি বা অনেকগুলো হতে পারে। নীল, লাল, পার্পল, বাদামী ম্যাকুউলস্, প্যাপুউলস্, নডিউলস্ অথবা আলসার। (২) পুরোনো সংক্রমনের মধ্যবর্তী স্থানে আলসার বা ঘাঁ দেখা যেতে পারে।

ক্যাপোসিস সারকোমা সাধারণত: মুখের তালুতে হয়ে থাকে, যা উপরের মোলার দাঁতের উল্টোপাশে অবস্থান করে থাকে। ক্যাপোসিস সারকোমার শুরু হয় সমান, নীল অথবা লাল, পার্পল অথবা ম্যাকুউলস্ রূপে। সংক্রমন যত বাড়তে থাকবে তখন ক্যাপোসিস সারকোমা নডুলার আকৃতির হয় এবং উঁচু হয়। সংখ্যায় একটি বা অনেকগুলো হতে পারে। ক্যাপোসিস সারকোমা কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত সাইজ হতে পারে। আলসারের ফ্লোর ধূসর, পঁচনশীল এবং রক্তপাত হতে পারে। ক্যাপোসিস সারকোমার লিশন বা সংক্রমন মিউকাস মেমব্রেনের উপর বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। যেমন-মুখের এবং গলার অভ্যন্তরে এবং চোখের বাহিরে এবং চোখের পাতার ভিতরের অংশে। ক্যাপোসিস সারকোমার লিশন ফুসফুসের অভ্যন্তরে এয়ারওয়েতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এবং শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে। পাকস্থলীতেও লিশন বা সংক্রমন হতে পারে এবং অন্ত্রের অ্যাবডোমিনাল ব্যথা এবং ডায়রিয়া সৃষ্টি করে থাকে।

এজেস বা কিনারা ঃ লাল কিন্তু শক্তভাব অর্থাৎ ইনডুরেশন নাই। মাঝে মাঝে ওরাল ক্যাপোসিস সারকোমা অন্য ইমমিউনোসাপ্রেসিভ অবস্থায় দেখা যায় অর্থাৎ তখন এটি এইচ.আই.ভির সাথে সম্পৃক্ত নয়। উদাহরণস্বরূপা দীর্ঘমেয়াদী সাইক্লোসপরিন সেবন করলে এমনটি হতে পারে।

তাই মুখের অভ্যন্তরে কোনো শক্তস্থান, ফোলাভাব বা আলসারযুক্ত স্থান লক্ষ করলে বা দীর্ঘদিন অবস্থান করলে অবহেলা না করে দ্রুত যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ ধরা পড়লে সুচিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ dr.faruqu@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন