নামের মিলে ভুল ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণের দায়ে গলাচিপা থানার এএসআই আলআমীনকে ক্লোজ করে পটুয়াখালী পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম।
এদিকে আজ দুপুর ১২ টায়পটুয়াখালীর প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক মোঃ আবুল বাসার মিয়ার কোর্টে ৮0 বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের পক্ষে অ্যাডভোকেট এটিএম মোজাম্মেল হোসেন তপন বৃদধ হাবিবুর রহমানের মুক্তি চেয়ে বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের সাথে সংঘঠিত অন্যায়ের প্রতিকার চেয়েছেন।এ বিষয়ে আদালত আজই আদেশ দিবেন বলে দুপুর সাড়ে বারোটায় জানান এডভোকেট এটিএম মোজাম্মেল হোসেন তপন
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, গলাচিপা পৌর শহরের মুজিব নগর রোডের নূর মোহাম্মাদ মাস্টারের ছেলে ও গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোডের নাহার গার্মেন্টসের মালিক মো. হাবিবুর রহমান ২০১২ সালের ৬ আগস্ট ব্র্যাক থেকে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। সে সময় তিনি ব্র্যাকের অনুকূলে উত্তরা ব্যাংক গলাচিপা শাখায় তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টের (হিসাব নম্বর ২২০০) ঋণের সমপরিমাণ অর্থের একটি চেক জমা দেন। কিন্তু, তিনি ওই ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ হাবিবুর রহমানের জমাকৃত চেকটি ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ওই ব্যাংকে জমা দিলে তাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ডিজঅনার হয়।
পরে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের ২ মে তাকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। কিন্তু, তিনি ব্র্যাক থেকে ঋণ নেননি মর্মে ওই বছরের ১৬ জুন লিখিতভাবে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমানের বিরদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পটুয়াখালীর বিজ্ঞ যুগ্ম দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ রায় দেন। রায়ে হাবিবুর রহমানকে এক বছরের কারাদন্ড ও ঋণের দ্বিগুণ অর্থ, অর্থাৎ দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা দন্ডের আদেশ দেন। রায়ের দিন ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমান আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
গ্রেফতারী পরোয়ানা অনুযায়ী গলাচিপা থানার সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) আল-আমিন শুধুমাত্র নামের মিল থাকায় গলাচিপা বনানী এলাকার ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর দুপুরে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে এবং ওই দিনই তাকে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠায়। কারাগারে পাঠানো হাবিবুর রহমানের পিতার নাম নূর মোহাম্মাদ পন্ডিত।
এদিকে প্রকৃত ঋণগ্রহীতা হাবিবুর রহমান প্রায় পাঁচ বছর আগে গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোড থেকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে মহিলা কলেজ সড়কে নতুন করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। তিনি ব্যবসার ধরন পাল্টে এখন মুদি-মনোহরির ব্যবসা করছেন।
এ বিষয়ে কারাগারে পাঠানো হাবিবুর রহমানের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করা হয় ‘হাবিবুর কোনোদিন ব্যবসা করেননি, কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণও নেইনি। তার দুই ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করে এবং তারা বাবা,মায়ের ভরণ-পোষণের জন্য প্রতি মাসে যে টাকা দেয়, তা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী গলাচিপায় বসবাস করে। পুলিশকে বিষয়টি বলা হয়েছিল কিন্তু, তারা শোনেনি।’
এ দিকে নিরাপরাধ বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে জেলে পাঠানোর পর তার সন্তানরা ঢাকা থেকে পটুয়াখালীতে এসে কোর্টের কাগজ পত্র উঠানোর পর দেখেন শুধূ মাত্র নামের মিল থাকার কারনে অন্য লোকের পরিবর্তে তাদের বাবাকে কারাগারে পাঠিয়েছে গলাচিপা পুলিশ।পরবর্তিতে তারা কাগজপত্র নিয়ে গলাচিপা থানায় গেলে প্রকৃত বিষয়টি উন্মোচিত হয়।
এ বিষয়ে গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন বলেন, আদালত থেকে একটি মামলার গ্রেফতারী পরোয়নায় ব্যাক্তির নাম ও বাবার নাম একই থাকায় গ্রেফতার করি। তবে পরিবারের লোকজন নথি উঠানোর পরে সেখানে দেখা গিয়েছে নাহার গার্মেন্টসের নাম রয়েছে ,নাহার গার্মেন্টেসের ঠিকানায় খোজ নিয়ে গতকাল মূল হাবিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।তিনি তার সাথে ব্রাক ব্যাংকের লেনদেন ও মামলার কথা স্বীকার করেছেন। বিষয়টি দুঃখজনক এবং আমার ভুল হয়েছে। তবে, নিরপরাধী ওই বৃদ্ধকে জেল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছি।
গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরল ইসলাম বলেন, ‘আসামির নাম ও পিতার নামে মিল থাকায় সরল বিশ্বাসে এএসআই আল-আমিন তাকে গ্রেপ্তার করে।প্রকৃত বিষয়টি অবগত হওয়ার পর আসল ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে গতকাল। ইতোমধ্যে আমরা সংশোধন করে চিঠি পাঠিয়েছি এবং ওই বৃদ্ধকে দ্রত কারামুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন