বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

সিলেটে পুলিশী নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০২০, ৮:৫৩ পিএম

সিলেট নগরীতে গণপিটুনিতে যুবকের মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। নিহত রায়হান আহমদের পরিবারের দাবি পুলিশী নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। পরিবারের অভিযোগ আটকের পর দাবিকৃত টাকা না পেয়ে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন মেরে ফেলার হয়েছে। প্রথমে ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করলেও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
রোববার (১১ অক্টোবর) ভোরে মৃত্যুর এ ঘটনা ঘটে। নিহত রায়হান আহমদ (৩৪) সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার নেহারিপাড়ার গুলতেরা মঞ্জিলের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। সে এক সন্তানের জনক। নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটস্থ ডা. আবদুল গফ্ফারের চেম্বারে সে চাকুরি করতো।
রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম ও চাচা হাবিবুল্লাহ অভিযোগ করেন, কর্মস্থল চিকিৎসকের চেম্বার থেকে ফিরতে দেরি দেখে শনিবার রাত ১০টায় রায়হানের মোবাইলে ফোন দেন মা ও স্ত্রী। কিন্তু ফোন বন্ধ পান। ভোর ৪টা ২৩ মিনিটের দিকে মায়ের মোবাইল ফোনে অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে কল দিয়ে রায়হান জানায় পুলিশ তাকে ধরে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নিয়ে এসেছে। এখন তার কাছে ১০ হাজার টাকা ঘুষ চাচ্ছে। টাকা দিলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিবে।
এ কথা শুনে রায়হানের মা তার চাচাকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পাঠান। রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ রবিবার ফজরের সময় টাকা নিয়ে ভাতিজা রায়হানকে ছাড়িয়ে আনতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যান।
এসময় সাদা পোষাকে ফাঁড়িতে থাকা এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আপনার ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা। আপনি ৫ হাজার টাকা নিয়ে আসলেন কেন? চলে যান, রায়হান এখন ঘুমাচ্ছে এবং যে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ধরে নিয়ে এসেছেন তিনিও ফাঁড়িতে নেই। আপনি ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল ৯টার দিকে আসেন। আসলেই তাকে নিয়ে যেতে পারবেন। তাকে আমরা কোর্টে চালান করবো না। ’
এ কথা শুনে রায়হানের চাচা বাসায় চলে যান এবং পরে সকাল ৯টার দিকে টাকা নিয়ে ফের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যান। এসময় পুলিশ সদস্যরা জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ায় সকাল ৭টার দিকে রায়হানকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ খবরে হাবিবুল্লাহ উদ্বিগ্ন হয়ে তৎক্ষণাৎ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন রায়হানের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। ময়না তদন্তের পর বিকেল ৩টার দিকে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।
‘পুলিশি নির্যাতনে’ রায়হানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় লোকজন রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় আধাঘন্টা সড়ক অবরোধের পর পুলিশ গিয়ে তাদেরকে শান্ত করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
এদিকে স্থানীয় কাউন্সিলর সহ এলাকার মানুষজন বলছেন নিহত রায়হান অত্যন্ত ন¤্র, ভদ্র ছেলে ছিল। তাকে মিথ্যা নাটক বানিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে রবিবার ভোরে রায়হানের মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল ছিনতাইকালে নগরীর কাস্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ তোলার পর তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোর্তিময় সরকার জানান, রায়হানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে পুলিশের কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
এক পথিক ১১ অক্টোবর, ২০২০, ১০:৫১ পিএম says : 0
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা খুনের মামলা যেভাবে কচ্ছপ গতিতে এগুচ্ছে; তাতে মনে হয়না রায়হানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত বেশিদূর এগুবে। তবে মহান আল্লাহর তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে; মহান আল্লাহ তাঁর ইচ্ছানুযায়ী যথাসময়ে এর রায় দেবেন; এটা সুনিশ্চিত।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন