গোপালগঞ্জে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শে বন্যার মধ্যে লাউ চাষ করে ভাগ্য বদলেছে অনেক কৃষকের। উচ্চফলনশীল জাতের চারা রোপনের পাশাপাশি আধুনিক কাটিং পদ্ধতি প্রয়োগে এসেছে এই সাফল্য। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারবিহীন অর্গানিক এই চাষ পদ্ধতিতে উৎপাদন খরচ কম লাগছে। ফলে কৃষক লাভবান হচ্ছেন।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে, এ বছর জেলার ৫ উপজেলার ৫০ কৃষক উঁচু জমিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এনএটিপি প্রোগ্রামের আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শে বন্যার মধ্যেই লাউ চাষ করেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরগোবরা গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শে বন্যার মধ্যেই জুনের শেষের দিকে ৫২ শতাংশ জমিতে সারা বছর ফলন দিতে সক্ষম উচ্চফলনশীল জাতের লাউয়ের আবাদ করি। লাউ চাষে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে গাছের গোড়ায় কোকো ডাস্ট ব্যবহার করেছি। ভালোভাবে মালচিং করায় লাউ গাছ হয়েছে খুবই সজীব। কৃষি বিভাগের পরামর্শে আধুনিক ডগা কাটিং পদ্ধতি প্রয়োগে এসব লাউ গাছে ফলও ধরেছে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি। বাজারে লাউয়ের ভালো দাম পেয়ে অনেক লাভ হয়েছে।
ওই কৃষক আরো বলেন, এ পদ্ধতিতে ৫৫ দিনে লাউ গাছে ফলন ধরার কথা। কিন্তু ৩৮ দিনের মাথায় ফলন পেয়েছি। গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে লাউ বিক্রি শুরু করি। এ পর্যন্ত ৮০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি। শীতের আগেই আরো অন্তত ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করবো। তারপর এ ক্ষেতে অন্য ফসলের আবাদ করেবো। প্রচলিত লাউ চাষ পদ্ধতির পরিবর্তে এ পদ্ধতিতে লাউ চাষ করে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি ফলন পেয়েছি। এ পদ্ধতিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার নেই। তাই লাউ চাষে খরচ কম। অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্বতী বৈরাগী বলেন, আইয়ুব আলীর মতো লাউ চাষে জেলার আরো ৫০ কৃষকের ভাগ্য খুলেছে। তারা কৃষি সম্প্রসারণের আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শে অর্গানিক পদ্ধতির সেক্স ফরোমেন ফাঁদের ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রযুক্তির লাভজনক লাউ চাষ করেন। তিনি আধুনিক কাটিং, মালচিং পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। এ পদ্ধতিতে লাউ চাষ করে তিনি প্রত্যাশার চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি ফলন পেয়েছেন। এ লাউ খেতে সুস্বাদু। তাই বাজারে এ লাউয়ের চাহিদা বেশি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সেকেন্দার শেখ বলেন, করোনা ও বন্যার মধ্যে নতুন এ পদ্ধতিতে লাউ চাষ করে ৫০ কৃষক মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। আমরা এ পদ্ধতির চাষাবাদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। এটি সম্প্রসারিত হলে নিরাপদ সবজির উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের ডিডি ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, এ পদ্ধতিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। নতুন প্রযুক্তির এ চাষ পদ্ধতি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা লাভবান হবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন