বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সিলেটে রায়হান হত্যা মামলায় যেকোন মুর্হুতে গ্রেফতার হতে পারেন এসআই আকবর!

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০২০, ৩:৩৫ পিএম

সিলেটে ছিনতাইকারী সাজিয়ে ও গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে রায়হানের। এমন তকমা এঁকে বাচতে চেয়েছিল বন্দর বাজার ফাঁড়ি পুলিশ। কিন্তু দিন শেষে দাঁড়ালো পুলিশ নিজেই এ হতভাগা যুবকের হত্যাকারী। এরপর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠে সিলেট। এখন জোরালে হচ্ছে গ্রেফতারের দাবী। যেকোন মুর্হুতে গ্রেফতার হতে পারেন হত্যা ঘটনার নায়ক বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (সদ্য সাময়িক বরখাস্ত হওয়া) এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, এমনটিই নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। তবে আকবর এখন পলাতক রয়েছেন বলেও জানিয়েছে একটি দায়িত্বশীল সূত্র।
এদিকে, পুলিশী নির্যাতনে যুবক রায়হানের মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে এ সংক্রান্ত গঠিত তদন্ত কমিটি। বন্দরবাজার ফাঁড়িতে এ নির্যাতন চালানো হয়েছে বলেও এমন তথ্য মিলেছে ইনচার্জ আকবর হোসেন ভূইয়া সহ সহ ৭ পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে। এ ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। সোমবার আকবরসহ ৪ পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত এবং ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অপরদিকে রোববার রাতেই নিহত রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামী কওে, একটি মামলা দায়ের করেছেন কতোয়ালী মডেল থানায়। রোববার রায়হানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে এসএমপির উপকমিশনার (ডিসি-উত্তর) আজবাহার আলী শেখের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন : এসএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি ক্রাইম দক্ষিণ) এহসানুদ্দিন চৌধুরী, এডিসি ক্রাইম উত্তর শাহরিয়ার আল মামুন ও সহকারী কমিশনার (এসি এয়ারপোর্ট) প্রভাশ কুমার সিং। কমিটির একটি সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বন্দর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ সে সময় দায়িত্বে থাকা ৭ পুলিশ সদস্যকে। ইনচার্জ আকবর প্রথমে রায়হানকে ফাঁড়িতে নেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। পরে সিলেট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত কমিটি। সেই ফুটেজ দেখানোর পর সবাই মুখ খুলতে শুরু করেন। ফুটেজে শনিবার রাত ৩টা ৯ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে দেখা যায়, দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা এসে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে এসে থামে। সামনের অটোরিকশা থেকে তিন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে রায়হানকে দেখা যায়। তিনি হেঁটে হেঁটেই পুলিশের সঙ্গে ফাঁড়িতে প্রবেশ করেন। এর প্রায় তিন ঘণ্টা পর সকাল ৬টা ২২ মিনিটে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা আসে বন্দর ফাঁড়ির সামনে। এর দুই মিনিট পর ৬টা ২৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে দুই পুলিশের কাঁধে ভর করে রায়হানকে সেই অটোরিকশায় তুলতে দেখা যায়। ইনচার্জ আকবর সহ অন্যরা তদন্ত কমিটিকে জানান, শনিবার রাত আড়াইটার দিকে দু’জন লোক সোবহানীঘাট থেকে কাস্টঘর রোড দিয়ে যাচ্ছিল। পথে সুইপার কলোনির গেটের পাশে তাদের আটক করে ছিনতাইকারীরা। চাকু দিয়ে টাউজারের পকেট কেটে তাদের টাকা-পয়সা নিয়ে পাশের সুইপার সুলাইলালের ঘরে ডুকে যায় তিন ছিনতাইকারী। এরপর ছিনতাইয়ের শিকার লোকজন মহাজনপট্টি দিয়ে বের হয়ে নগরীর বন্দরবাজারের মশরাফিয়া রেস্টুরেন্টে দুই পুলিশকে (কোতোয়ালি থানার মুন্সি ও এক অপারেটর) নাশতা করতে দেখে। তারা পুলিশকে ছিনতাইয়ের বিষয়টি জানায়। পুলিশ ইকো-১-কে মোবাইলে কল দিয়ে এ খবর জানায়। এরপর ইকো-১-এর ওয়্যারলেস অপারেটর কনস্টেবল আবু তাহের এএসআই আশিক এলাহীর টিমকে খবর পাঠায়। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন : কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও হারুনুর রশিদ। তারা গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ভিকটিমের উপস্থিতিতে রায়হানকে আটক করে। তার সঙ্গে থাকা দু’জন দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে রায়হানকে ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় এএসআই আশিক এলাহী ছিনতাইয়ের শিকার লোকের নাম-পরিচয় রাখেননি বলে তদন্ত কমিটিকে জানান। ইনচার্জ আকবর চুপ থাকলেও আটককারী সদস্যরা কমিটিকে জানান, ফাঁড়িতে নিয়ে আসার পর এসআই আকবরের নেতৃত্বে রায়হানকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। তার নির্দেশেই তৌহিদের ফোনে রায়হান তার মায়ের সঙ্গে কথা বলে ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসতে বলেন।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বরখাস্ত ও প্রত্যাহার করা সাত পুলিশ সদস্যকে নিয়ে আরেক দফা তদন্ত চলছে। এই তদন্তের পর এদের মধ্য থেকে রায়হান হত্যা মামলায় আসামি করা হতে পারে। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে বলা হয়েছিল, নগরীর কাস্টঘর এলাকায় ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন