শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

নদীভাঙন রোধ করে ভূখন্ডগত কাঠামো অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৬ এএম

এবারের ভয়াবহ ও দীর্ঘ বন্যায় দেশ অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়েছে। হাজার হাজার একর জমিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, বসত-ভিটা নদীভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। অসংখ্য মানুষ বানভাসি হয়ে পড়েছে। বাড়িঘর, ফসলিজমি, গবাদিপশু হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। পত্র-পত্রিকায় বন্যার ভয়াবহ রূপ তুলে ধরে বলা হয়েছে, দুইশ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। অনেক এলাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শূন্য হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। একদিকে করোনার ভয়াবহ থাবা, অন্যদিকে বন্যার ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বি। সাধারণ মানুষ এক অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্দশার অন্ত নেই। তারা সহায়তা পাচ্ছে কি পাচ্ছে না, এ সংবাদ খুব একটা পাওয়া যায় না। অন্যদিকে বাঁধ ও নদীভাঙ্গনে জনপদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি বিলীন হয়ে ভূখন্ডগত পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের মানচিত্র বদলে যাচ্ছে।

দুই.
বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো একসময় আশীর্বাদ হলেও কালক্রমে তা বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক নদী হারিয়ে গেছে। অনেক নদী নাব্য হারিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে পরিবেশ-প্রতিবেশকে মরুকরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং বর্ষায় ডুবিয়ে দিচ্ছে। এজন্য আমাদের যেমন দায় রয়েছে, তেমনি প্রতিবেশি ভারতের বৈরী পানিনীতিও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর তার অংশে একের পর এক বাঁধ, আন্তঃনদী সংযোগ ও গ্রোয়েন নির্মাণ করে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, আবার বর্ষায় বাঁধের সব স্লুইস গেইট খুলে দিয়ে পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছে। ভারতের খেয়াল-খুশির উপর বাংলাদেশের পানি পাওয়া-না পাওয়া নির্ভর করছে। অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে যুগের পর যুগ ধরে দুই দেশের মধ্যে পানি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছেই। তাতে কোনো সমাধান হচ্ছে না। এর সমাধান কবে হবে বা আদৌ হবে কিনা, তা অনিশ্চিত। জনগণ এক প্রকার ধরেই নিয়েছে, এ সমস্যার সমাধান সহসা হচ্ছে না। এই যখন পরিস্থিতি, তখন আমাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বন্যায় যাতে ডুবে যেতে না হয় এবং শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে মরতে না হয়, এই ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এজন্য পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও নদীর তীর রক্ষা বাঁধ রয়েছে। ৫৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন নতুন বেড়িবাঁধ ও নদীর তীর রক্ষার কাজ করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দেয়া মোট বাজেটের প্রায় ৭০ শতাংশই ব্যয় হয় এসব বাঁধ ও নদী তীর রক্ষার কাজে। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানির যে সংকট দেখা দেয়, তার জন্য কোন ব্যবস্থাই করা হয় না। অর্থাৎ নদ-নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করে বন্যা থেকে বাঁচার উপায় এবং বন্যার পানি ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে কাজে লাগানোর কোন প্রকল্প নেয়া হয় না। এ নিয়ে মাঝে মাঝে মহাপরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও তার বাস্তবায়ন অনিশ্চয়তার দোলাচালে রয়ে যায়। এক সময় বিকল্প গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণের কথা শোনা গিয়েছিল। রাজবাড়ির পাংশায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ৩২ হাজার কোটি টাকার বাজেট করার কথাও বলা হয়েছিল। তবে ভারতের আপত্তির কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। অথচ এর বাস্তবায়ন হলে কি কি উপকার হতে পারে, তা নিয়ে এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ব্যারেজ থেকে উজানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাংখা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকবে ২৯শ’ মিলিয়ন মিটার কিউব পানির বিশাল রিজার্ভার। শুষ্ক মৌসুমে এই রিজার্ভার থেকে ২ হাজার মিলিয়ন কিউসেক পানি ৮টি সংযোগ খালের মাধ্যমে ছাড়া হবে। এর ফলে গঙ্গা নির্ভর ১৬টি নদী শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা ফিরে পাবে। একই সাথে গঙ্গা অববাহিকা নির্ভর ৫১ লাখ হেক্টর জমির মধ্যে ১৯ লাখ হেক্টর জমি সরাসরি সেচের আওতায় আসবে। ব্যারেজের দৈর্ঘ্য হবে দুই কিলোমিটারের উপরে। এর গেইট থাকবে ৯৬টি। থাকবে একটি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখান থেকে ১১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এই ব্যারেজের মূল কাজ হচ্ছে, এর মাধ্যমে সারা বছরই পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এতে দেশের আর্তসামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে বিপ্লব সাধিত হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা থেকে শুরু করে মরুময়তা ও লবনাক্ততা থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকা মুক্ত থাকবে। প্রকল্পটি আর বাস্তবায়ন হবে কিনা, তা অনিশ্চিত। অথচ ভারত ইতোমধ্যে বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি পানির রিজার্ভার গড়ে তুলেছে। তাদের অংশের এক ব্র‏হ্মপুত্র নদীতেই ৩৩টি রিজার্ভার গড়ে তোলার মাধ্যমে ৫০ লাখ কিউসেক পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। অন্যান্য নদীতেও এরকম আরও অনেক রিজার্ভার গড়ে তুলছে। এসব রির্জাভার পরিপূর্ণভাবে চালু হলে বাংলাদেশের কি অবস্থা হবে, তা কল্পনাও করা যায় না।

তিন.
এবারের বিলম্বিত বর্ষায় বানভাসি মানুষের যতটা না ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে দেশের ভূখন্ডের। বাঁধ ও নদীভাঙ্গন এতটাই তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমন ভাঙন দেখা যায়নি। আভ্যন্তরীণ নদীভাঙ্গনের পাশাপাশি সীমান্ত নদীর ভাঙ্গনও ঠেকানো যাচ্ছে না। এতে একদিকে যেমন দেশের আভ্যন্তরীণ ভৌগলিক কাঠামো পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সীমান্তভাঙ্গনে মানচিত্রও বদলে যাচ্ছে। পদ্মার ভাঙ্গনে রাজশাহীর পবা উপজেলার চর খানপুর ও চর খিদিরপুর মৌজা বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। চর দু’টি বিলীন হলে আন্তর্জাতিক পানি আইন অনুযায়ী, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী পদ্মায় বাংলাদেশের অংশে প্রবেশের সুযোগ পাবে। গত কয়েক বছরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বিজিবি’র একটি বর্ডার আউট পোস্ট, ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও গাছপালা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আশংকা প্রকাশ করেছে, চর দুটিতে যেভাবে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে, তা রোধ করা না গেলে পদ্মার অর্ধেক অংশের নিয়ন্ত্রণ বিএসএফ-এর হাতে চলে যাবে। তখন বাংলাদেশীদের চলাচলে তারা বাধা দিতে পারবে। আন্তর্জাতিক পানি আইন অনুযায়ী বিএসএফ তা করতে পারে। আন্তর্জাতিক পানি আইন অনুযায়ী, দুই দেশের সীমান্ত নদীর মাঝ স্রোত বরাবর বা মাঝিমাঝি সীমান্ত রেখা টানা হয়। দেখা যাচ্ছে, পদ্মাসহ দেশের অন্যান্য সীমান্ত নদীগুলোর ভাঙ্গনের ফলে নদীর স্রোতধারা বাংলাদেশের দিকে ক্রমশ এগুচ্ছে আর ভারতের দিকে চর জাগছে। ভারত এসব জেগে উঠা ভূখন্ড রক্ষা এবং তাদের অংশে ভাঙন রোধে বাঁধ দিচ্ছে। শুধু পদ্মাই নয়, সীমান্ত সংলগ্ন সুরমা, কুশিয়ারা, ইছামতি ও অন্যান্য নদীর ভাঙ্গনেও বাংলাদেশ ভূখন্ড হারাচ্ছে। এভাবে বাংলাদেশের মানচিত্র ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত চার দশকে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীর ভাঙনে দেড় লাখ হেক্টর জমি হারিয়ে গেছে, যা ঢাকা শহরের আয়তনের চেয়ে বেশি। এর বিপরীতে চর জেগেছে মাত্র ৫৩ হাজার হেক্টর। অর্থাৎ প্রতি বছরই নদ-নদীর ভাঙ্গন তীব্র হচ্ছে। এই ভাঙন রোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না। যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়, তা টেকসই হচ্ছে না। বাঁধ নির্মাণ ও ভাঙ্গন রোধে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়, তার নির্মাণ ও স্থায়িত্ব এত কম যে নদীর পানির স্রোত ঠেকানোর মতো সক্ষমতা থাকে না। কোন কোন এলাকার বাঁধ বালির বাঁধে পরিণত হয়। অথচ প্রতি বছর বাঁধগুলো পুননির্মাণ ও সংস্কারে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। বছর ঘুরতে না ঘুরতে অনেক বাঁধ ভেঙ্গে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের গাফিলতি ও টাকা লুটপাটের ফলে টেকসই বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। তারা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকে অর্থ লুটপাটের স্থায়ী প্রজেক্টে পরিণত করেছে। একে দেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন-মরণ সমস্যা নিয়ে ব্যবসা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে! দায়সারাগোছের কাজের ফলাফল দেখা গেছে এবারের বন্যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা কবলিত এলাকায় পানির প্রবল স্রোতে বাঁধ ভেঙ্গে গ্রাম, ফসলি জমি, গবাদি পশু তলিয়ে গেছে। নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ, কৃষি জমি ও জনপদ। নদী ভাঙন শুধু ভূখন্ড গত কাঠামো পরিবর্তন নয়, হাজার হাজার মানুষকেও উদ্বাস্তুতে পরিণত করছে। পরিবার নিয়ে কৃষক ও কাজের লোক বেকার হচ্ছে। এদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কি সরকার করছে? অর্থনীতির ভাষায়, দেশে একজন লোকও যদি বেকার থাকে, তবে তার ভরণপোষণের চাপ পরিবার থেকে রাষ্ট্রের অর্থনীতির উপর পড়ে। আর রাষ্ট্রের প্রশাসনিক দুর্বলতা ও অবহেলায় যদি কর্মক্ষম শত শত কৃষক ও ব্যক্তি বেকার হয়, তবে তাদের কর্মসংস্থানের চাপ অর্থনীতির উপর কি পরিমাণ পড়ে, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার যে স্বপ্ন দেখছি, এবারের বন্যায় বাঁধ ও নদী ভাঙনে লাখ লাখ মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে, তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া যে সেই স্বপ্নের উপর পড়বে তাতে সন্দেহ নেই। এত বড় ক্ষতির দায় কে নেবে? এই দায় কি বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের দায়িত্বে নিয়োজিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঐসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ঠিকাদার নেবে? তাদের দুর্নীতি, গাফিলতি ও করি-করছি মনোভাবের কারণে দেশের মানচিত্র বদলে যাওয়া, আভ্যন্তরীণ ভূখন্ড হারানো এবং মানুষের উদ্বাস্তু হওয়া কোনভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশ জিডিপি’র ১.৮ শতাংশ হারাচ্ছে। ১৯৭০ সালের তুলনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ এখন ৫ গুণ বেড়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে ৯ গুণ। আর জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড রিস্ক রিপোর্ট অনুযায়ী, দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের ১৭৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। এসব তথ্য-উপাত্ত থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বাংলাদেশ কতটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকার সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাসের ফলে কৃষি জমিতে ঢুকে পড়া লবনাক্ত পানির হাত থেকে কৃষিজমি রক্ষা করতে উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ ও পুনর্বাসনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এছাড়া আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি হ্রাস ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সরকার ৫০ থেকে ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করেছে। সরকারের এসব উদ্যোগ ইতিবাচক। তবে এসব পরিকল্পনা যে মন্ত্রণালয় এবং যেসব প্রকল্প বিভাগ বাস্তবায়ন করবে, তাদের আন্তরিকতা ও সততা এবং যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটর করা না হলে এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার নিয়ে চলমান প্রকল্পগুলোতে এর নজির রয়েছে। বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি ও যথাসময়ে সংস্কারের উদ্যোগ না নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল উল্লেখিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব।

চার.
নদীভাঙ্গনের যে ভয়াবহতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিকল্প নেই। এবারের ভাঙ্গনে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। তবে ভঙ্গন রোধে আগাম ব্যবস্থা নেয়া যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে যদি আগাম ব্যবস্থা নেয়, তবে ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব। যথাসময়ে যথাযথভাবে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া এখন সময়ের দাবী। এই নির্মাণ ও সংস্কার যাতে স্থায়ী হয়, বালির বাঁধে পরিণত না হয়, এজন্য কঠোর মনিটরিং এবং জবাদিহির ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে এবং দুর্বলভাবে নির্মিত হয়েছে, কেন এমন হলো এ নিয়ে সেসব এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার এবং নদীভাঙ্গন রোধ প্রকল্প নিয়ে বছরের পর বছর ধরে কিছু লোকের অসৎ বাণিজ্য চলতে পারে না। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধু বাঁধ নির্মাণ করলেই হবে না, বন্যার পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করে শুষ্ক মৌসুমে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। পানির রিজার্ভার গড়ে তুলতে হবে। এজন্য, নদীর নাব্য বজায় রাখার কার্যক্রম জোরদার, খাল খনন কর্মসূচি, লেক, হাওর-বাওর, বিল-ঝিল-পুকুর সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। এসব উদ্যোগ সফল করতে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষদের উদ্বুদ্ধ করে কাজে লাগাতে হবে। এতে যেমন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, তেমনি পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও হবে। দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে ক্রাইসিস ব্যবস্থাপনার চেয়ে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ব্যবস্থায় ১ ডলার ব্যয় করলে ১০ ডলার পরিমাণ সম্পদ রক্ষা পায়। অর্থাৎ ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়ার চেয়ে ক্ষতি হওয়ার আগে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশে বন্যা, ঝড়-ঝঞ্ঝা, নদীভাঙ্গনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যবস্থাপনার উপর জোর দিতে হবে।
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন