শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

পায়রা সমুদ্রবন্দরের সম্ভাবনা

প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পদ্মাসেতুর পাথর খালাস কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে দেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক সমুদ্রবন্দর পায়রা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত নিজস্ব উদ্যোগে এটির যাত্রা শুরু হওয়ায় আমরা তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। গত শনিবার ঢাকায় গণভবনে বসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রা বন্দরে বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মাসেতু নির্মাণের পর এই সমুদ্রবন্দরটি দক্ষিণ জনপদের মানুষের জন্য নব দিগন্তের উন্মোচন করল। অতঃপর এই বন্দরকে ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, সমগ্র বাংলাদেশে এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জন্যও এটি একটি শুভ সূচনা। উদ্বোধনের সময়ে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পায়রা বন্দরের নাম আমি দিয়েছি। পায়রা নামটাও খুব সুন্দর। পায়রা শান্তির প্রতীক। বন্দরের পাশাপাশি ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নৌবাহিনীর ঘাঁটি ও সেনানিবাস স্থাপনের কথাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেছেন, বিভিন্ন সময়ে দক্ষিণাঞ্চল সফর করার সময় ওই অঞ্চলের সম্ভাবনার বিষয়টি নজরে আসার পর পায়রা বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেই। এখানে জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পাশাপাশি রেল যোগাযোগ পায়রা পর্যন্ত নিয়ে যাবার পরিকল্পনা রয়েছে। এই সমুদ্রবন্দরটি ব্যবহারে প্রতিবেশী দেশ ভারতেরও আগ্রহের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী- যা থেকে বাংলাদেশও উপকৃত হবে। উত্তরে আসামের করিমগঞ্জ পর্যন্ত নৌ পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি করা যাবেÑ যেটি ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ভবিষ্যতে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।
পায়রা সমুদ্র বন্দর নিঃসন্দেহে আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি সুসংবাদ। সরকারের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ১০টি প্রকল্পের মধ্যে পায়রা একটি। ২০১৩ সালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের রামবাদ চ্যানেলের পশ্চিমতীরে ১৬ একর জমির উপর পায়রা বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে এই পুরো সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে। বন্দর ও অন্যান্য শিল্প গড়ে তুলতে অধিগ্রহণকৃত জমির সঠিক মূল্য প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, তিন বছর আগে পায়রা বন্দরের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সবাই যাতে জমির সঠিক মূল্য পায় সেদিকে সরকার দৃষ্টি রাখছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরও যাতে বন্দর বা আশেপাশে শিল্পাঞ্চলে কর্মসংস্থান হয় সে নির্দেশনাও সংশ্লিষ্টদের দেয়া হয়েছে। এই বন্দর প্রকল্প গড়ে ওঠার ফলে ইপিজেড, জাহাজ নির্মাণসহ নতুন নতুন শিল্প গড়ে ওঠার সুবাদে বরিশাল, পটুয়াখালী, কলাপাড়া, বরগুনা, কুয়াকাটা, কলাপাড়া, লালুয়া, রামনাবাদসহ পায়রা বন্দর এলাকার ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার অভূূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটবে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বন্দরে তৈরি হচ্ছে কন্টেইনার, বাল্কহেড, সাধারণ কার্গো, এলএনজি, পেট্রোলিয়াম ও যাত্রী টার্মিনাল। সেই সাথে অর্থনৈতিক অঞ্চল, তৈরি পোশাক, ওষুধশিল্প, সিমেন্ট, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, সার কারখানা, তেল শোধনাগারসহ অনেক শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এর ফলে এই বন্দরকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলের জন্য অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টির অবারিত সুযোগ এবং সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। একদিকে পদ্মাসেতু অন্যদিকে পায়রা বন্দর এবং সেই সাথে রেল সংযোগ স্থাপিত হলে রাজধানীর সাথে যে যোগাযোগ স্থাপিত হবে, তা ঐ অঞ্চলের মানুষের জীবনমানে সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
একটি নৌবন্দর একটি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের চাকাকে ঘুরিয়ে দিতে যথেষ্ট। সিঙ্গাপুর ও হংকং এর বড় উদাহরণ। যেসব দেশে বন্দর নেই বা ল্যান্ডলকড কান্ট্রি তারা অনুভব করে বন্দরের প্রয়োজনীয়তা কতটা তীব্র। নেপাল ও ভুটান ল্যান্ডলকড কান্ট্রি হওয়ায় তাদের পরনির্ভরশীল হতে হচ্ছে। এদিক থেকে আমরা ভাগ্যবান। এ সুযোগ যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি, তবে দ্রুতই অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে পারব। পায়রা বন্দর সে সম্ভাবনার কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই বন্দরটির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জমির ন্যায্যমূল্য পরিশোধ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের আশপাশের শিল্পাঞ্চলে কাজ দেয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। নির্মাণের বিবেচনা থেকে এটি একটি ইতিবাচক দিক। এরপরেও বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, যখন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে তখন অবশ্যই আগামীর কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। এমনভাবে প্রকল্প তৈরি করতে হবে যাতে অন্তত ২৫/৩০ বছরের মধ্যে তাতে পরিবর্তনের জন্য হাত দিতে না হয়। সুপরিকল্পিতভাবে বন্দরটিকে গড়ে তুলতে হবে। এটিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে হবে। সামগ্রিকভাবে এ বন্দর থেকে দেশ ও জাতি যাতে উপকৃত হতে পারে, সে ভাবনাকে সক্রিয় রাখাই সময়ের দাবি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন