মুন্সীগঞ্জে চলতি বন্যা মৌসুমে প্রায় ১৩শ’ ৬৮ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি টাকা। পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়েছে প্রায় ৭০৮ হেক্টর ফসলি জমি। এছাড়া পদ্মার বালু জমে কয়েকশ’ হেক্টর ফসলি জমি আবাদ অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে আগামী মৌসুমে জেলায় প্রায় ১০ হাজার টন খাদ্যশস্য উৎপাদন কম হবে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বন্যা মৌসুমে জেলায় প্রায় ১৩শ’ ৬৮ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে সবজি ২৬৬ হেক্টর, আউশ ২৬২ হেক্টর, বোনা আমন ৩১৪ হেক্টর, রোপা আমন ৪৮৬ হেক্টর এবং ৫০ হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হয়েছে। জেলায় মোট আবাদের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৭শ’ ৬৩ হেক্টর জমি। চলতি বন্যা মৌসুমে পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে ৭০৮ হেক্টর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে সবচেয়ে বেশি লৌহজং উপজেলায় প্রায় ৭শ’ হেক্টর, শ্রীনগরে ৩ হেক্টর এবং টঙ্গীবাড়ীতে ৫ হেক্টর ফসলি জমি।
লৌহজং উপজেলার গাওদিয়া গ্রামের আবুল কাশেম বলেন, পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে গত ২ বছরে তার প্রায় ৩০ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পৈত্রিক ভিটা হারিয়ে এখন অন্যের জায়গায় ঘর উঠিয়ে থাকতে হচ্ছে। টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া গ্রামের সালমা বেগম বলেন, অর্ধ একর জমি বর্গার টাকা দিয়ে তিনি মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন। বর্ষায় জমিতে বালু পড়ায় ফসল না হবার আশঙ্কায় এখন বর্গার টাকা ফেরৎ দিতে বলা হচ্ছে। টাকা ফেরৎ না দিলে মেয়ের ক্ষতি হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। মেয়ের ক্ষতির আশঙ্কায় সালমা বেগম এখন দিশেহারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শাহ আলম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সরকার থেকে ৫৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ২ হাজার ৮০ জন কৃষককে ১৯শ’ ৩৫ টাকা করে নগদ প্রায় ৪০ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং ২০ জন কৃষককে ভাসমান বীজতলা তৈরির জন্য ৮০ কেজি ধান, ২ হাজার জনকে ১৩ রকমের শাক-সবজির বীজ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া প্রনোদণা হিসেবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহজশর্তে কৃষি ঋণ প্রদান করা হবে। তিনি আরও জানান, জমিতে এক দেড় ফুট বালু ও পলি পড়লেও জমির কোন ক্ষতি হবে না। চলতি বর্ষা মৌসুমে যে সব জমিতে বালু এবং পলি পড়েছে সেসব জমিতে আগামীতে আরো ভালো ফসল হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন