পিরোজপুরের বেকুঠিয়ায় কঁচা নদীর ওপর নির্মাণাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুতে কর্মরত চীনা নাগরিক লাও ফান ওরফে ফান ইয়াংজুন (৫৮) হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। প্রধান দুই আসামিকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা ইতোমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে পিরোজপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম। গ্রেফতারকৃত হোসেন সেখ পিরোজপুর সদরের মরিচাল এলাকার সোহরাব সেখের ছেলে এবং সাব্বির সেখ একই এলাকার হায়দার আলী সেখের পুত্র। দু’জনের বয়স যথাক্রমে ১৯ ও ২০ বছর।
ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় মাত্র ৬ দিনেই প্রধান আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত সাব্বির সেখ নির্মাণাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুতে কর্মরত একজন স্থানীয় শ্রমিক এবং হোসেন সেখ সাব্বিরের সুপারিশে গত মে মাসে ওখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ নেয়। হোসেনের কাজ ভালো না হওয়ায় তাকে মাত্র ১৪ দিন পরে কাজ থেকে বাদ দেয় চীনা নাগরিক ফান ইয়াংজুন। এসময় হোসেন তার ব্যবহৃত হেলমেটটি ফেরত না দিলে পরবর্তী মাসের বেতন থেকে ফান ইয়াংজুন ৫শ’ টাকা কেটে রাখেন। এরপর থেকেই সে চীনা নাগরিক ও প্রকল্পের প্রধান টেকনিশিয়ান ফান ইয়াংজুন কখন কিভাবে শ্রমিকদের বেতনের টাকা নিয়ে যায় তা পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। পরে সাব্বিরের সাথে যোগসাজশে দুজনে ফান ইয়াংজুন এর কাছ থেকে টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
গত ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় চীনা নাগরিক ফান ইয়াংজুন শ্রমিকদের বেতন দিতে ২ লাখ ৫৩ হাজার ২৩০ টাকা নিয়ে বাইসাইকেলে করে বাসস্থান থেকে মূল সেতুর দিকে যাচ্ছিল। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পথে ওঁৎপেতে থাকা হোসেন সেখ টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে লাও ফান বাঁধা দেয়। তখন হোসেন তাকে ছুরিকাঘাত করে একটি টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত লাও ফান পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায়। এদিকে বাড়ি গিয়ে হোসেন কাঁদা মাখা টাকা, ব্যাগ, জামা-কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে নেয় এবং ফোনে সাব্বিরকে জানায় কাজ শেষ। পরবর্তীতে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে পুলিশ ১২ অক্টোবর সাব্বিরকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে সকল ঘটনা পুলিশকে জানায়। পুলিশ ওইদিন রাতেই হোসেনকে তার বাড়ি থেকে আটক করে। এসময় তার খাটের নিচ থেকে ছিনতাইকৃত ১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ও ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত জিনিসপত্র উদ্ধার করে। এরপর তাদেরকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা দোষ স্বীকার করে গত রোববার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। সংবাদ সম্মেলনে পিরোজপুরের এসপি হায়াতুল ইসলাম খান জানান, তদন্তকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্যাগে ৬১ হাজার এবং আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আরো ৮শ’ টাকা উদ্ধার করে। মূল টাকা থেকে হিসাব অনুযায়ী ২ হাজার ৪৩০ টাকা পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, ফান ইয়াংজুনের অধীনে ১৪ জন শ্রমিক কাজ করত। ফান ইয়াংজুনের লাশ ময়নাতদন্তের পর চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় নির্মাণাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর সিকিউরিটি ইনচার্জ কাও চিয়েন হুয়া বাদী হয়ে ওই রাতেই অজ্ঞাত আসামিদের নামে পিরোজপুর সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন