শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

বিদেশী কূটনীতিকদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে

প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পর সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত পদক্ষেপ সত্ত্বেও নিরাপত্তা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে, সেকথা বলা যাবে না। দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, হামলা পরবর্তী পরিস্থিতি এখনো সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছেন বিদেশী ক্রেতারা। তবে উদ্বেগ-আতঙ্ক থাকলেও বাংলাদেশ থেকে ক্রয়াদেশ বাতিল করছে না বিদেশী ক্রেতারা। অন্য খবরে বলা হয়েছে, গুলশান-বনানীতে বেড়েছে র‌্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা তৎপরতা। তবু মানুষের মনে নানা ভয়-ভীতি। গুলশান-বনানীবাসীকে তাড়া করে ফিরছে এক অজানা আতঙ্ক। কখন কি ঘটে যায়, এই ভয়ে তারা হোটেল-রেস্টুরেন্টে যাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বিদেশীরা তো আসছেনই না, স্থানীয় বাসিন্দারাও এখন তেমন একটা আসছেন না খাবার খেতে। একটি ইংরেজী দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা সত্ত্বেও বিদেশী কূটনীতিক ও নাগরিকদের অনেকেই নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। নিরাপত্তার বিবেচনা থেকে অনেকেই তাদের পরিবার-পরিজনদের নিজ দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, জার্মানী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঢাকায় কর্মরতদের পরিবারকে স্বেচ্ছাভিত্তিক দেশে যাবার অনুমতি দিয়েছে। গত রোববার সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে দৈনিকটিতে বলা হয়েছে, অনেক দেশই আরো হামলার আশঙ্কাকে উড়িয়ে না দিয়ে তাদের নাগরিকদের পরিবারকে স্বেচ্ছাভিত্তিক বা বাধ্যতামূলকভাবে দেশে পাঠিয়ে দেবার কথা ভাবছে।
হামলা পরবর্তী সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা নিয়ে অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করছেন। তবে কেউই নিশ্চিত আস্থা স্থাপন করতে পারছেন না। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার দরুন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ পশ্চিমা কূটনীতিক ও স্টাফদের অনেকেই ইতোমধ্যে তাদের পরিবার সরিয়ে নিয়েছেন। সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের ঢাকাস্থ মিশন তাদের কূটনীতিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবারের সদস্যদের ইচ্ছা করলে চলে যাওয়ার সুযোগ অবারিত করেছে। জাপান সরকার নিরাপত্তার বিবেচনায় তার সকল কূটনীতিককে অধিকতর নিরাপদ মনে করায় বসুন্ধরাসিটিতে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছে। সেই সাথে গুলশান এবং অন্যান্য এলাকায় তাদের সকল ভাড়া বাসা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে। পরিস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে আমেরিকান সিটিজেন সার্ভিসের সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং কাউন্সিলর জেনারেলের থাকার কথা রয়েছে। এদিকে মার্কিন সরকার যেহেতু হামলার ব্যাপারটিতে গভীর উদ্বিগ্ন তাই তার নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রকাশ্য চলাফেরা করতে পদব্রজে, মোটরসাইকেলে, সাইকেলে, রিকশায় অথবা যেকোন খোলাযানে যেতে নিষেধ করেছে। যুক্তরাজ্য থেকেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। তারা মনে করছে বিদেশী বিশেষ করে পশ্চিমাদের উপর হুমকি রয়েছে। কানাডাও পুনরায় হামলার আশঙ্কা করছে। অস্ট্রেলিয়া তার নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণ পুনঃবিবেচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে আমেরিকান-কানাডিয়ান-অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি এই দাঁড়াচ্ছে যে, নিরাপত্তা ভাবনা যাই থাকুক আস্থার সংকট কাটেনি বা কাটার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অয়ের অন্যতম বড় খাত তৈরি পোশাকশিল্পের উপর এখন পর্যন্ত পুরো ঝুঁকি না এলেও এখাত যে বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে সেকথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বিষয়টি কেবল পোশাক খাত নিয়ে নয়। ভাববার রয়েছে, সামগ্রিক বিনিয়োগের দিক নিয়েও। কারণ কোন দেশের নাগরিকরা যদি চলাফেরা করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করেন, খাবার-দাবার খেতে যেতেও যদি নিরাপদ বোধ না করেন তাহলে বিনিয়োগের প্রত্যাশা অর্থহীন। আর বিদেশী বিনিয়োগ বন্ধ বা প্রতিরোধের মুখে পড়ার নেতিবাচক প্রভাব দেশীয় বিনিয়োগকারীদের উপর পড়তেও বাধ্য। বিদেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার কারণেও তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। সেকারণেও দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত ত্বরান্বিত হতে পারে।
আস্থার সংকট দূর করার ব্যাপার নিয়ে অনেকদিন থেকেই বিশিষ্টজনেরা কথাবার্তা বলে আসছেন। সরকারের পক্ষ থেকে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা সত্ত্বেও বিদেশীদের সন্তুষ্ট না হতে পারার ব্যাপারটিও গভীর বিবেচনার দাবি রাখে। অবশ্যই ভেবে দেখার রয়েছে, কোথায় ত্রুটি রয়েছে অথবা কি করা দরকার। সেই সাথে এটাও ভাববার রয়েছে, দেশের অবস্থা অতীতে কখনো এমনতর ছিল না। এখন যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতিতে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। এ অবস্থার অবসান প্রয়োজন। সরকার বিদেশীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই জনগণ প্রত্যাশা করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন