শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ট্রেনে যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতা, ভাঙা রাস্তার ঝক্কি, যানজটসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে নিরাপত্তা, মূল্যসাশ্রয় এবং পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন হিসেবে মানুষ অবশেষে রেলওয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে সার্বিক বিচারে রেলওয়েই হচ্ছে আদর্শ ব্যবস্থা। শত বছর ধরে সারাবিশ্বে রেলওয়ে একটি জনপ্রিয় এবং ক্রমোন্নতিশীল যোগাযোগ মাধ্যম। পুরনো স্টিম এবং কয়লাচালিত লোকমোটিভগুলো বিবর্তিত হয়ে এখন ইলেক্ট্রিক ও ম্যাগলেভ ট্রেনে পরিণত হচ্ছে। নানাবিধ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার সংযোগ ঘটেছে আধুনিক ট্রেনের কোচ বা বগিগুলোতে। গতি ও সেবার পাশাপাশি পরিবর্তন এসেছে ট্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও। তবে গত ৬০ দশকেও বাংলাদেশ রেলওয়ে এসব যুগোপযোগী ব্যবস্থাকে আত্মস্থ করার চেষ্টা করেনি। দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ করা হলেও রেলওয়ের প্রতি ছিল সরকারের সীমাহীন অবহেলা ও পরিকল্পনাহীনতা। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের অবহেলা ও অপরিণামদর্শিতার সুযোগে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর ধরে একে দুর্নীতি ও লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছে। প্রতিবেশী দেশ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি জনবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে উন্নীত করার কোন বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার রেলওয়েকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলেও দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা, নিরাপত্তাহীনতা ও সিডিউল বিপর্যয়ের গ্যাঁড়াকল থেকে বেরোতে পারছে না বাংলাদেশ রেলওয়ে।
গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেশের রেল বিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকটের কথা জানা যায়। যেখানে সড়ক পথের বিড়ম্বনা ও দুর্ঘটনাজনিত নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে মানুষ নিরাপদ বিকল্প হিসেবে রেলপথকে বেছে নেয়, সেখানে ট্রেনের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের হাতে বছরে শতাধিক যাত্রীর প্রাণনাশের এক ভয়ঙ্কর চিত্র বেরিয়ে এসেছে রিপোর্টে। বিশেষত, রাতের ট্রেনে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীচক্র সুযোগ বুঝে একা ভ্রমণকারী যাত্রীকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে, অজ্ঞান করে অথবা শ্বাসরোধ করে মেরে পকেট ও ব্যাগ থেকে টাকা-পয়সা, মোবাইলসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিয়ে ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। ছিনতাই ও নৃশংসতার শিকার এসব যাত্রীর অনেকেই হয়ে যায় ট্রেনেকাটা বেওয়ারিশ লাশ। গত কয়েক বছরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে থেকে এ ধরনের দেড়শ’ বেওয়ারিশ লাশ উদ্ধার করা হলেও রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তা’ স্বীকার করতেও নারাজ। নিরাপত্তা সমস্যা অস্বীকারের মধ্য দিয়ে সমস্যা জিইয়ে রাখা বা গুরুত্বহীন মনে করার প্রবণতা শোভনীয় নয়। ঔপনিবেশিক আমল থেকেই রেলওয়েকে স্থানীয় উন্নয়নের একটি মানদ- হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সময়ের বিবর্তনে রেলওয়ের সম্ভাবনা ও অগ্রযাত্রা আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ অবহেলা ও পরিকল্পনাহীনতার শিকার রেলওয়েকে ঢেলে সাজাতে বর্তমান সরকারও নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু রেলইঞ্জিন ও বগি ভারত এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে রেলবহরে সংযুক্ত করা হয়েছে। কিছু নতুন রেলপথ নির্মাণ এবং পুরনো রেলওয়ের উন্নয়ন ও সংস্কারের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে রেলওয়ে তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে এবং সাধারণ মানুষও রেলে ভ্রমণের উপর আস্থাশীল হয়ে উঠবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা।
সব ধরনের উন্নয়নের পরও রেলের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা না হলে সরকারের সব পরিকল্পনাই ব্যর্থ হতে বাধ্য। রেলের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করার পর নিরাপত্তাহীনতার কারণে সাধারণ মানুষ আস্থাহীন হয়ে পড়লে রেলওয়েকে জনবান্ধব ও লাভজনক সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলা অসম্ভব হবে। রেলে নতুন ইঞ্জিন ও বগি সংযোজন করা হলেও কয়েক দশকে রেল বিভাগে বহু পদ খালি হলেও এসব পদ পূরণের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বর্তমানে রেলের অর্ধেক পদই খালি আছে বলে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়। প্রশিক্ষিত-দক্ষ চালক, সহকারী, পয়েন্টম্যান, গেটম্যান, স্টেশন মাস্টারসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাকর্মী ও মনিটরিং ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে রেলওয়েকে নিরাপদ ও জনবান্ধব করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সাথে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার বাস্তবতাকে সামনে রেখে আমাদের রেলওয়ের দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা দূর করে সামগ্রিক সংস্কার ও উন্নয়ন দ্রুতায়িত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন