ঘটনার সাথে ভিসেরা প্রতিবেদনের মিল না থাকায় মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলা মোড় নিচ্ছে অন্যদিকে। এ ঘটনায় দোষী ব্যক্তিরা কৌশলে হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। ময়নাতদন্তে (ভিসেরা) প্রতিবেদন সঠিক না আসার কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার অভিযোগ করেছে। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার পশারগাতি ইউনিয়নের কাউলদিয়া গ্রামের নিহত মুক্তিযোদ্ধা সাহেব আলী খন্দকারের ছেলে উজ্জ্বল খন্দকার এ অভিযোগ করেছেন। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী অছিয়া বেগম ভিসেরা প্রতিবেদনে চিকিৎসকদের সঠিক মতামত প্রদানের জন্য গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনে বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ফারুক আহমেদ, সঞ্জিব কুমার ধর ও হরিদাস রায় আসামিদের সাথে যোগসাজশে এ কাজ করেছেন।
নিহত সাহেব আলীর ছেলে উজ্জ্বল খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা চলতি বছরের ১২ জুন গ্রামের বিবাদমান দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব-সংঘাত মীমাংসার জন্য সালিশ বৈঠকে বসেন। ওই সময় একপক্ষ উত্তেজিত হয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা আমার বাবার ওপর হামলা করে। তারা বাবার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। তাকে মাটিতে ফেলে ২০-২৫ জনে লাথি দিয়ে মেরে ফেলে। ঘটনার পর মুকসুদপুর থানা পুলিশ এসে সুরাতহাল রিপোর্ট করে। সেই প্রতিবেদনে বাবার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে পুলিশ উল্লেখ করে। যখন গোপালগঞ্জ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয় সেখানে চিকিৎসকরা তাদের বর্ণনায় উল্লেখ করেন, ফুসফুসে রক্ত জমাট, বাম ফুসফুস ও ফুসফুসের আবরনীর পাশে অত্যাধিক রক্ত জমাট এবং হৃদপিন্ডে রক্ত জমাট ও ফুলা অবস্থা পাওয়া গেছে। পরে রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠান চিকিৎসকরা। ওই প্রতিবেদনের ফলাফলে লেখা আছে বিষ পানে তার মৃত্যু হয়নি। এখানে বিষ পানে মৃত্যুর বিবরণ কেন আসলো? তাছাড়া ওই প্রতিবেদনে গোপালগঞ্জের চিকিৎসকরা সেখানে পুনরায় বর্ণনা করেন হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে। হৃদক্রিয়া বন্ধ হওয়ার প্রকৃত কারণ কেন তারা উল্লেখ করেননি? আমি চাই বাবার মৃত্যুর সঠিক কারণ প্রকাশ করা হোক। ঘটনার দিনই মুকসুদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করি।
মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী অছিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, প্রতিপক্ষ মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে চিকিৎসকদের দিয়ে এ কাজ করেছে। তাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে আমরা সঠিক ভিসেরা প্রতিবেদন চাই। জানতে চাইলে ময়নাতদন্তকারি চিকিৎসক ও গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, অপরপক্ষের দ্বারা ম্যানেজ হয়ে আমরা ময়নাতদন্ত করিনি।
এ বিষয় নিয়ে এগিয়ে লাভ হবে না মন্তব্য করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের কাছে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে পারেন।
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে সহকারী পরিচালক অসিত কুমার মল্লিক বলেন, আমি ওই বিষয়ে অবগত নই। প্রতিবেদন থেকে যতটুকু জানা যায় তা হলো নিহত মুক্তিযোদ্ধা সাহেব আলী রাসায়নিক পরীক্ষায় শুধু বিষ প্রয়োগ হয়েছে কিনা এতটুকু জানতে চাওয়া হয়েছে। সেই জন্যই রাসয়নিক পরীক্ষার ফলাফল শুধু লিখেছে ভিসেরা পরীক্ষায় কোন বিষ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সঠিক প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আমার কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছে নিহত মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। আবেদনপত্রটি দেখেছি। এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের নিয়ে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন