ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের ট্রাকে প্যাকেজ জটিলতায় নিম্ন আয়ের মানুষ কেনাকাটা করতে পারছেন না। মোট ৬২০ টাকার প্যাকেজে টিসিবির ট্রাকে বিক্রি হচ্ছে। এই প্যাকেজে আছে পাঁচ লিটার তেল, তিন কেজি পেঁয়াজ, এক কেজি চিনি, এক কেজি ডাল ও এক কেজি আলু। প্যাকেজের বাইরে কেউ যদি পেঁয়াজ, আলু ও ডাল কিনতে চান তাহলে তা তিনি পাচ্ছেন না। ৬২০ টাকার প্যাকেজের বাইরে খুচরা পণ্য ট্রাকে বিক্রি করা হচ্ছে না। এতে রিকশা চালক, ঠেলাগাড়ি ওয়ালা বা সবজি বিক্রেতার মতো নিম্ন আয়ের গরীব মানুষ টিসিবির ট্রাকে পণ্য কিনতে পারছেন না।
আরামবাগ টিএন্ডটি কলেজের উল্টো পাশে রাস্তার উপর টিসিবি পণ্যের ট্রাকের সামনে ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি। অপেক্ষাকৃত কম দামে আলু, পেঁয়াজ, ডাল কিনতে বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির এলাকা থেকে সকাল ৮টায় এসেছেন কাশেম। পেশায় তিনি রিকশা চালক। প্রায় ঘন্টা খানেক লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তিনি যখন পণ্যের কাছাকাছি গেলেন তখন বিকেতা বললেন ৬২০ টাকা দেন। কাশেম তখন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেন আমিতো শুধু দুই কেজি আলু আর দুই কেজি পেঁয়াজ নেব। বিক্রেতা তখন বলেন, আপনি লাইন ছাড়েন। এখানে প্যাকেজের বাইরে খুচরা বিক্রি হয়না। লাইন ছেড়ে কাশেম তখন রাগে দুখে বলতে থাকে, এই রহম করলে আমরা গরীবরা তাইলে কই যাইয়াম?
‘প্যাকেজ ছাড়া খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে না কেন’ টিসিবির ট্রাক থেকে যিনি ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করছিলেন তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ভাই দেখতাছেন না কি ভিড়। প্যাকেজে মাল বেইচ্চ্যাইতো কুলাইতে পারতাছি না। খুচরা বেচুম কখন।
শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনী থেকে এসেছেন গৃহবধু শরিফা। দীর্ঘলাইন পেরিয়ে তিনি যখন ৬২০ টাকা প্যাকেজের সব পণ্য হাতে পান তখন তার মুখে কিছুটা হাসি ফুটে উঠে। স্বামী ও তিন সন্তানসহ শরিফার সংসারে সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। স্বামী একটি শাড়ির দোকানে সেলসম্যানের চাকরি করেন। শরিফা বলেন, স্বামীর একার আয়ে সংসার আর চলে না। জিনিসপত্রের যে দাম, খুব কষ্টে সংসার চালাতে হচ্ছে। টিসিবির ট্রাকে কম দামে জিনিস কিনতে পেরে তবু কিছুটা রক্ষা। তবে ৬২০ টাকার প্যাকেজের জিনিস অনেকে কিনতে পারছে না। আমিও আমার এক প্রতিবেশির সাথে ভাগে এই প্যাকেজের জিনিস কিনেছি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সীমানা প্রাচীরের উত্তরপূর্ব দিকে সচিবালয়ের সামনে টিসিবি পণ্যের ট্রাকেও ক্রেতার দীর্ঘ লাইন। এ সময় লাইনের বাইরে থেকে পাশ দিয়ে এসে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য হাত বাড়িয়ে পণ্য কিনতে চান। তখন লাইনে দাঁড়ানো শত শত মানুষ প্রতিবাদে চিৎকার শুরু করেন। সুফিয়া নামের এক বয়স্ক নারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওই সদস্যকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি আইনের লোক তো কি হয়েছে। লাইন ভাইঙা আইলে জিনিস দিব না।
টিসিবির পণ্য কিনতে সাধারণ ক্রেতাদের ভিড় প্রতিদিনই বাড়ছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি একবারেই এখানে মানা হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের পরামর্শ দেয়া হলেও টিসিবির ট্রাকের সামনের লাইনে সবাই বলতে গেলে গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। দু’একজনের মুখে মাস্ক থাকলেও বেশির ভাগই মাস্ক ছাড়া।
ধানমন্ডি শংকর থেকে প্রেসক্লাবের সামনে টিসিবি পণ্য কিনতে এসেছেন জাহানারা বেগম। ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে প্যাকেজ বুঝে নিলেন। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, ওই এলাকায় টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক নিয়মিত যায় না। তাই এখানে এসেছেন। টিসিবির পণ্য তার মতো গরিবদের কোনোভাবে বেঁচে থাকার ব্যাপারে সাহায্য করছে। তবে প্যাকেজের সব পণ্য কেনা অনেকের জন্য কষ্টকর। শুধু আলু পেঁয়াজ ও ডালের একটা প্যাকেজ থাকলে ভাল হতো। পাঁচ কেজি তেল এক সঙ্গে কেনার সামর্থ অনেকেরই নাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন