ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ইসতিসিনা আক্তার ঐশিসহ চার ‘সন্দেহভাজন নারী জঙ্গি’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাব বলেছে, তারা জেএমবির সদস্য। অন্য তিনজন মানারত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী। র্যাব ৪-এর অধিনায়ক জানিয়েছেন, মানারত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি (সম্মান) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী আকলিমা রহমান মনি ইসতিসিনা আক্তার এবং মানারত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ছাত্রী ইসরাত জাহান মৌসুমি ওরফে মৌ ও খাদিজা পারভিন মেঘলাকে দলে ভেড়ান। শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ইসতিসিনার পিতা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিচষদের সাবেক সভাপতি বিশ্বাস আক্তার হোসেন একটি দৈনিককে জানিয়েছেন, তার মেয়ে ছোটবেলা থেকেই খুব ধার্মিক। ইসলামী বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করত। আটককৃত মানারতের শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি বলেছেন, আমি মর্মাহত, দুঃখিত। তারা যে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছে সে খবর আমি জানতাম না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার হোক, এটাই আমি চাই।
জঙ্গিবাদী নাশকতা প্রতিরোধে পরিচালিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছাত্রী আটক হবার খবর এই প্রথম নয়। এর আগে রাজধানীর ইডেন কলেজের হোস্টেল থেকে কয়েকজন ধর্মপরায়ণ পর্দানশিন ছাত্রীকে আটক করার পর কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে তিনছাত্রীকে কথিত জিহাদী বইসহ আটক করেছিল পুলিশ। তারা নাশকতামূলক কর্মকা-ের পরিকল্পনার সাথে জড়িত ছিল বলে পুলিশ সন্দেহ করেছিল। এবারেও র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মুঠো ফোন থেকে জঙ্গিবাদ ও জিহাদ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। আলোচ্য ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে কি পাওয়ো গেছে, তার কোন পূর্ণ বিবরণ নেই। তবে প্রকাশিত রিপোর্ট ও বাস্তবতা মেলালে কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয় অবশ্যই উঠে আসতে পারে। বর্তমানে এমন একটা প্রবণতা লক্ষ্যনীয় হয়ে উঠেছে, কোরআন-হাদিস ও ইসলাম সম্পর্কিত বই প্রস্তককে জিহাদী বই বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ প্রবণতাও পরিলক্ষিত হচ্ছে, গত কয়েক বছর বিভিন্ন সময়ে পর্দানশিন নারীরা পুলিশি হয়রানীর শিকার হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটাও দেখা যাচ্ছে, দাড়ি-টুপিওয়ালা মানুষজনও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক হয়রানির শিকার হচ্ছে। পর্দানশিন মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ সমাজে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সাধারণত গ্রাম বা ঐতিহ্যবাহী পরিবার থেকে যারা শহরে আসছে তারা হলে-হোস্টেলে থাকছে। এটা আমাদের সামাজিক রীতি-নীতি এবং ঐতিহ্যও বটে। এহেন বাস্তবতায় সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ব্যতীত শুধু সন্দেহের বশতবর্তী হয়ে পর্দা করা কাউকে গ্রেফতার করা হলে এর নেতিবাচক প্রভাব সমাজে পড়তে বাধ্য। কেবলমাত্র অভিযোগের বলে এধরনের গ্রেফতার সমর্থনযোগ্য নয়। এসব মেয়ের ভবিষ্যতের কথাও চিন্তা করতে হবে। এধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হবে কি হবে না, তা এখনই স্পষ্ট করে বলা যায় না। অথচ তাদের যা ক্ষতি হবার তা হয়ে গেছে। এর দায় কে নেবে? এই বাস্তবতায় সারাদেশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া হাজার হাজার মেয়ে, যারা ছাত্রী হোস্টেল বা মেসে থেকে পড়াশোনা করছে এবং যারা পর্দা মেনে চলাফেরা করছে, তাদের অভিভাবকরা এখন চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এধরনের ঘটনা আগে বাংলাদেশে ছিল না বললেই চলে। এখন দেখা যাচ্ছে, সন্দেহ সৃষ্টিকারী এধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এ আলামত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার। প্রকৃত বিষয় কি সে সম্পর্কে জনগণ সম্যক অভিহিত না হতে পারলেও বোঝা যাচ্ছে, জনমনে একটা বড় ধরনের অবিশ্বাস ও আস্থার সংকট দানা বেঁধে উঠছে। শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমানের সন্তান নামাজ-রোজা করবে, পর্দা মেনে চলবে, ইসলামধর্মীয় বই-পুস্তক পড়বে, এটাই স্বাভাবিক এবং সঙ্গত। তবে কারো অপরাধের সাথে যুক্ত হওয়া যেমন কাম্য নয়, তেমনি এসব ধর্মীয় আচার-আচরণকারী কাউকে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছাড়া সন্দেহবশত হয়রানি করা অনভিপ্রেত। জঙ্গিদমন নিয়ে আপোষের কোন সুযোগ নেই। এনিয়ে সন্দেহের জাল বিস্তৃত হয়, এমন কর্মকা- গ্রহণযোগ্য নয়। সন্দেহের পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করাই সঙ্গত ও উচিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন