শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

নিরাপদ আশ্রয়স্থল নেই অধিকাংশ মানুষের

দুর্যোগ মোকাবিলায় অপ্রস্তুত কয়রায়

মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

আমফানের আতঙ্ক কেটে গেলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আতঙ্ক কাটেনি উপকূলবাসীর। কয়রা উপজেলার কাটকাাট গ্রামের ফুলবাসি মুন্ডা (৫৫) সে জানায় প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। প্রতিটি মুহুর্তেই তার যেন মৃত্যুর সংবাদ বয়ে আনে নদী ভাঙন, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে। তারপরও শত প্রতিকূলতা, সংগ্রাম আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাস করে আসছে।
শুধু ফুলবাসি নয়, উপকূলীয় অঞ্চল কয়রা, দাকোপ, শ্যামনগর, পাইকগাছা উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ বছরের প্রতিটি সময় আতঙ্কে কাটায়। এ সকল উপজেলার মানুষ সারা বছরই আতঙ্কে থাকে। জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, নদী ভাঙন ও অতিবর্ষণের সময় এ সকল উপজেলার ৮০ শতাংশ মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের স্থান নেই। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর উপকূলবাসী জানমাল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকে। বর্ষা মৌসুমে উপক‚লবর্তী উপজেলা কয়রা, দাকোপ, শ্যামনগরও পাইকগাছার মানুষের অন্যতম সমস্যা এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের দাবি উঠছে প্রয়োজনীয় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের।
কয়রা উপজেলা প্রশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান- আমাদী, বাগালী, মহেশ্বরীপুর, মহারাজপুর, কয়রা, উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ১৩১টি গ্রাম নিয়ে উপজেলার মানচিত্র। কপোতাক্ষ শাকবাড়িয়া, শিবসা ও আড়পাঙ্গাসীয়া নদী উপজেলা বেষ্টনী। কপোতাক্ষ শাকবাড়িয়ার প্রমত্তা ভাঙন উপজেলাবাসীকে আতঙ্কগ্রস্থ করে রেখেছে সারা বছর। আকাশে মেঘ, অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার সময় জলোচ্ছ্বাসে যে কোন গ্রাম প্লাবিত হয়। এ সময় মানুষ আশ্রয়স্থল খোঁজে। এই উপজেলার ২ লাখ ৯৫ হাজার অধিবাসীর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে ৩৭টি। এছাড়া সম্প্রতি ফায়েল খায়ের ও দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া মিলিয়ে ১৯ টি সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে। এ গুলো স্কুল,কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষ প্রতিষ্ঠানে অবস্থিত। জনসংখ্যার হিসাবে ২৫ শতাংশ মানুষের আশ্রয়স্থলের সুবিধা রয়েছে। প্রতিনিয়ত এ উপজেলায় দুর্যোগ লেগে আছে। গত ২০০৯ সালে ২৫ মে আইলার জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার ৪১ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তবে বেসরকারি হিসাব মতে প্রাণহানির সংখ্যা শতাধিকের ও বেশি। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আমফানে এ জনপদ বিধস্ত হয়েছে আরও। এখনও কয়রার মানুষ পানি বন্দি অবস্থায় জীবন যাপন করছে।
উপেজলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন সৈকত বলেন- দুর্যোগ মোকাবেলায় সার্বিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার অভাবে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসে প্লাবিত হওয়ার আতঙ্ক রয়েছে উপক‚লীয় অঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ মানুষ। যে জন্য দুর্যোগে হাইরেক্স জোন হিসেবে কয়রা এলাকায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।
কয়রা উপজেলা জলবায়ু পরিষদের সদস্য এস এম নুরুল আমিন নাহিন বলেন, উপকূলবর্তী কয়রাবাসী প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় অসহায় হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা গোলখালী, জোড়শিং, আংটিহারা, ৪নং কয়রা, গোবরা, গাটাখালী, হরিণখোলা, কাটকাটা, নয়ানী, তেতুলতলার চর, পাথরখালী, হরিহরপুর, ঘড়িলাল ও হড্ডা এলাকার মানুষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মানুষ দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। আশ্রয়কেন্দ্র গুলোর ধারণ ক্ষমতা অত্যান্ত কম। তিনি সরকারি প্রাথমিক ও মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুেেলাতে একটি করে আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়েছে।
দক্ষিণ বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান কবি জিএম শামছুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আমাদী ইউনিয়ন ছাড়া বাকী ৬টি ইউনিয়নের গোটা এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো। তার মতে কয়রা, মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর, বাগালী ইউনিয়নে যে সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে তা যথেষ্ট কিন্তু কয়রা সদর,দক্ষিণ ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে আরো সাইক্লোন সেন্টারের প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন,প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় উপকূলবাসীদের আশ্রয়ের জন্য সরকারের তত্ত্বাবধায়নে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাটানো হয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ঠ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন উপকূলবর্তী কয়রা উপজেলাবাসীদের জন্য এখনও অনেক আশ্রয় কেন্দ্র প্রয়োজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন