শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও সহ ডিপিপি ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রস্তুত হচ্ছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০২০, ৪:২৯ পিএম

পায়রা সমুদ্র বন্দর ও কুয়াকাটা সহ বরিশাল বিভাগীয় সদর ছাড়াও পটুয়াখালীকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ধীরলয়ে এগুচ্ছে। প্রকল্পটির আওতায় পায়রা বন্দর থেকে আরো ২৪ কিলোমিটার লাইন নির্মানের মাধ্যমে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনানুযায়ী সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সহ জরিপ ও পথ নকশা নির্ধারনের কাজ শুরু হয়েছে। এলক্ষে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য বাড়তি ব্যায় বরাদ্বেরও অনুমোদন দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রনালয়। এ রেলে লাইন নির্মিত হলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাইল ফলক স্থাপিত হবে। পাশাপাশি রেল যোগাযোগ না থাকার অমর্জদাকর গ্লানী থেকেও মূক্তি পাবে দক্ষিণাঞ্চলবাসি।
তবে লক্ষ্যনুযায়ী আগামী মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমিক্ষা ও নকশা সহ উন্নয়ন প্রকল্প-সারপত্র, ডিপিপি প্রস্তুত করে মন্ত্রনালয়ে দাখিল করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল। ফলে আগামী বছরের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা-এডিপি’তে ২০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ফরিদপুরÑবরিশালÑপায়রা-কুয়াকাটা রেলপথ প্রকল্প’টি অন্তভর্’ক্তির বিষয়টি এখনো অনেকটা অনিশ্চয়তার কবলে। সে নিরিখে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার যে সময় নির্ধারন করা হয়েছিল, ডিপিপি অনুমোদন, তহবিলের সংস্থান সহ ভ’মি অধিগ্রহনের পরে ঐ সময়ের মধ্যে বাস্তব অবকাঠামো নির্মান কাজ শুরু নিয়েই যথেষ্ঠ অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে সরকার ইচ্ছে করলে ভাংগাÑবরিশাল সেকসনের ৯৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মান ৩ বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করে রেল যোগাযোগ চালু করা সম্ভব বলে মনে করছেন কারিগরি বিশেষজ্ঞগন।
প্রকল্পটির পরিচালক শহিদুল ইসলামের মতে, ‘সবকিছু সঠিক ভাবেই এগুচ্ছে। ডিসেম্বর না হলেও জানুয়ারীÑফেব্রুয়ারীর মধ্যে ডিপিপি প্রস্তুত সম্ভব হলে জুনের মধ্যে তা পরিকল্পনা কমিশনের চুড়ান্ত অনুমোদনের লক্ষে আমরা কাজ করছি। আগামী অর্থ বছরের এডিপি বা আরএডিপি’তে প্রকল্পটি অন্তভর্’ক্তির’ও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তবে তহবিলের সংস্থান সম্পর্কে তিনি কিছু বলতেনা চাইলেও সরকার অনেকগুলো উৎস থেকে ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে’ বলেও জানান তিনি।
তবে সম্ভাব্য প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পটির জন্য কোন দাতা এখনো সংগ্রহ না হলেও চীন সহ কয়েকটি দেশ ও প্রতিষ্ঠানের এক্ষেত্রে আগ্রহ রয়েছে বলে একাধীক সূত্র জানিয়েছে।
গত বছরে শেষেদিকে পরমর্শক প্রতিষ্ঠান ফরিদপুরÑবরিশালÑপায়রা-কুয়াকাটা প্রস্তাবিত রেলপথের একটি খসরা এলাইনমেন্ট রেলপথ বিভাগে জমা দেয়ার পরে তা সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে কিছু সংশোধনী সহ অনুমোদন প্রদান করেছে। প্রস্তাবিত ঐ রেলপথের বেশ কিছু বাঁক সোজা করে রেলের গতি বৃদ্ধি সহ অপ্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহন পরিহার করতে বলা হয়। এতেকরে রেলপথের দৈর্ঘও কিছুটা হৃাস পাবার সম্ভবনা রয়েছে। ভ’মির অপব্যবহারও কমবে বলে আশা করছে ওয়াকিবাহল মহল। সরকারী সিদ্ধান্তনুযায়ী পরমর্শক প্রতিষ্ঠানটি কয়েকটি স্থানে পুনরায় জরিপ পরিচালনা করে নতুন এলাইনমেন্ট তৈরী করেছে বলে জানা গেছে।
পরমর্শক প্রতিষ্ঠান ভাংগা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রস্তাবিত সিঙ্গেল লেন ব্রডগেজ রেলপথে মোট ১১টি স্টেশনের প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত ফরিদপুরÑবরিশাল-কুয়াকাটা রেলপথে ভাংগা’য় মূল জংশন থেকে টেকেরহাট, মাদারীপুর, গৌরনদী, বরিশাল বিমান বন্দর,বরিশাল মহানগর, বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, আমতলী,পয়রা বিমান বন্দর ও পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা স্টেশনে গিয়ে শেষ হবে। প্রস্তাবিত ঐ রেলপথ নির্মানে একশ মিটার প্রসস্ত ২১১ কিলোমিটার দীর্ঘ ভ’মি অধিগ্রহন করতে হবে। ভাংগা থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার রেলপথ ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। অপর একটি লাইন পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় এবং আরেকটি লাইন ভাটিয়াপাড়াÑকালনা-নড়াইল-যশোর হয়ে খুলনা ও বেনাপোল লাইনে সংযুক্ত হবে।
উল্লেখ্য, বিশে^ সর্বপ্রথম যাত্রীবাহী রেল গাড়ী চালু হয় ইংল্যান্ডে ১৮২৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর। এর ২৮ বছর পরে ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল ভারত উপমহাদেশে প্রথম রেলপথ চালু হয় মুম্বাই থেকে ২৪ মাইল দুরে থানে’তে। আর তৎকালীন পূর্ব বাংলায় ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর দর্শনা স্টেশন হয়ে ৫৭.২৫ কিলোমিটার রেল লাইন চালু করে ‘ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে’। এর কিছুদিন পরেই ঐ লাইন কুষ্টিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। ১৮৮৫ সালে ঢাকাÑনারায়নগঞ্জের মধ্যে বানিজ্যিকভাবে ১৪.৯৮ কিলোমিটার রেললাইন চালু হয় । আর ভারত উপমহাদেশে রেললাইন চালুর প্রায় দুশ বছর পরে দক্ষিণাঞ্চলকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার লক্ষে পুনরায় সমিক্ষা চলছে।
যদিও দেশ স্বাধিনের পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুরÑবরিশাল লাইন নির্মান কাজ শুরু করে তালমা পর্যন্ত ট্রেন চালুও করেছিলেন। পরবর্তিতে তা পুকুরিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। এমনকি ভাংগা পর্যন্ত মাটির কাজ শেষ করা হলেও এরশাদ সরকার ক্ষমতা দখলের পরে পুরো প্রকল্পটি বাতিল কলে অধিগ্রহনকৃত ভ’মি অবমূক্ত করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন