পায়রা সমুদ্র বন্দর, কুয়াকাটা ও বরিশাল বিভাগীয় সদরকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে ধীরে ধীরে। প্রকল্পটির আওতায় পায়রা বন্দর থেকে আরো ২৪ কিলোমিটার লাইন নির্মাণের মাধ্যমে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনার সম্ভাব্যতা, সমীক্ষা, জরিপ ও পথ নকশা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের জন্য বাড়তি ব্যয় বরাদ্ধেরও অনুমোদন দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ রেললাইন নির্মিত হলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাইলফলক স্থাপিত হবে।
লক্ষ্যনুযায়ী আগামী মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, নকশা, উন্নয়ন প্রকল্প-সারপত্র, ডিপিপি প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা সম্ভব নাও হতে পারে। ফলে আগামী বছরের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা-এডিপিতে ২০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ফরিদপুর-বরিশাল-কুয়াকাটা রেলপথ প্রকল্প’টি অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি এখনো অনেকটা অনিশ্চিত। ২০২৩ সালের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। ডিপিপি অনুমোদন, তহবিলের সংস্থান ও ভূমি অধিগ্রহণের পরে ওই সময়ের মধ্যে বাস্তব অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু নিয়েই অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে সরকার ইচ্ছে করলে ভাঙ্গা-বরিশাল সেকশনের ৯৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ ৩ বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব বলে মনে করছেন কারিগরি বিশেষজ্ঞরা।
প্রকল্পটির পরিচালক শহিদুল ইসলামের মতে, সবকিছু সঠিকভাবেই আগাচ্ছে। ডিসেম্বর না হলেও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুত সম্ভব হলে জুনের মধ্যে তা পরিকল্পনা কমিশনের চূড়ান্ত অনুমোদনের লক্ষ্যে কাজ করছি। আগামী অর্থবছরের এডিপি বা আরএডিপিতে প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্তিরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তবে তহবিলের সংস্থান সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে না চাইলেও সরকার অনেকগুলো উৎস থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি। তবে সম্ভাব্য প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পটির জন্য কোন দাতা এখনো সংগ্রহ না হলেও চীনসহ কয়েকটি দেশ ও প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
গত বছরের শেষ দিকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা প্রস্তাবিত রেলপথের একটি খসড়া এলাইনমেন্ট রেলপথ বিভাগে জমা দেয়। পরে তা সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে কিছু সংশোধনীসহ অনুমোদন প্রদান করে। প্রস্তাবিত রেলপথের বেশ কিছু বাঁক সোজা করে রেলের গতি বৃদ্ধি ও অপ্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ পরিহার করতে বলা হয়। এতে রেলপথের দৈর্ঘ্য কিছুটা হ্রাস পাবার সম্ভবনা রয়েছে। ভূমির অপব্যবহারও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি কয়েকটি স্থানে পুনরায় জরিপ করে নতুন এলাইনমেন্ট তৈরি করেছে বলে জানা গেছে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রস্তাবিত সিঙ্গেল লেন ব্রডগেজ রেলপথে মোট ১১টি স্টেশনের প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত রেলপথে ভাঙ্গায় মূল জংশন থেকে টেকেরহাট, মাদারীপুর, গৌরনদী, বরিশাল বিমানবন্দর, বরিশাল মহানগর, বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, আমতলী, পায়রা বিমানবন্দর ও পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা স্টেশনে গিয়ে শেষ হবে। এ রেলপথ নির্মাণে একশ’ মিটার প্রসস্ত ২১১ কিলোমিটার দীর্ঘ ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার রেলপথ ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। অপর একটি লাইন পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় এবং আরেকটি লাইন ভাটিয়াপাড়া-কালনা-নড়াইল-যশোর হয়ে খুলনা ও বেনাপোল লাইনে সংযুক্ত হবে। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর-বরিশাল রেললাইন নির্মাণ কাজ শুরু করে তালমা পর্যন্ত ট্রেন চালুও করেছিলেন। পরবর্তীতে তা পুকুরিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। ভাঙ্গা পর্যন্ত মাটির কাজ শেষ হলেও এরশাদ সরকার পরে পুরো প্রকল্পটি বাতিল করে অধিগ্রহণকৃত ভ‚মি অবমুক্ত করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন