বাগেরহাটে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলার দুবলার চরে শুরু হচ্ছে শুটকি তৈরির মৌসুম। এ লক্ষ্যে গত সপ্তাহের শেষদিকে জেলেরা বন বিভাগ থেকে পারমিট নিয়ে সুন্দরবনের পথে যাত্রা শুরু করেছে। বন বিভাগ এ ব্যাপারে বিভাগীয় কার্যালয়ে সভা করে নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলে পল্লী টহল ফাঁড়ির আওতাধীন বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী আলোরকোল, মেহেরআলী, মাঝের কিল্লা, অফিস কিল্লা, নাড়িকেলবাড়িয়া ও শেলারচরে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে মৌসুমি জেলেরা সাগরে থেকে মাছ ধরে শুটকি করে থাকে।
প্রতি বছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার জেলে শুটকি প্রক্রিয়াজাত কাজে নিয়োজিত হয়। দেশের সবচেয়ে বড় এ জেলে পল্লীর শুটকি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হয়ে থাকে। বন বিভাগ গত বছর শুধুমাত্র শুটকি থেকে পৌনে চার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে। চলতি মৌসুমেও একই লক্ষমাত্রা নিয়ে জেলেদের পারমিট দেয়া হয়েছে।
শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন ইনকিলাবকে জানান, বন বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মৌসুমে শুটকি প্রক্রিয়াজাত করেনের জন্য ৫০টি ডিপো ও ৯৫০টি অস্থায়ী শুটকি ঘর তৈরির অনুমোতি দেয়া হয়েছে। তবে এসব ঘর তৈরির মালামাল জেলেদের সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হবে। সুন্দরবনের কোনো কাঠ জেলেরা ব্যবহার করতে পরবেন না। তিনি আরো জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা গত মৌসুমের তুলনায় এবার বৃদ্ধি পেতে পারে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন জানান, জেলেদের মহাজন ও বহাদ্দারদের নিয়ে এ সংক্রান্ত এক সভায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করাতে বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার মতো ওষুধপত্র সঙ্গে নেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহম্মেদ জানান, দুবলার মেহের আলীর চরের মিষ্টি পানির বড় পুকুরটি সাগরে ভেঙ্গে যাওয়ায় এবার জেলেরা চরম পানি সঙ্কটে পড়বেন। এছাড়া চরগুলোতে স্বল্পসংখ্যক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র থাকলেও সেগুলো এখন মেরামতের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তিনি জেলেদের কথা বিবেচনা করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানিয়েছেন।
এদিকে ইলিশ প্রজনন মৌসুমের কারনে জেলেদের মাছ ধরার উপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা গত সপ্তাহেই শেষ হয়েছে। এ কারনে জেলেরা তাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে তারা মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে সাগরে যাত্রা শুরু করেন।
কমপক্ষে সপ্তাহ কাটিয়ে তারা ট্রলারভর্তি মাছ নিয়ে ফিরবেন উপকূলে। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যাবে শুটকি প্রক্রিয়াজাত করার কাজ। এবার নিম্নচাপের কারনে সময় এক মাস কমে গেছে। চলতি নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে শুটকি প্রক্রিয়াজত করা। চলবে নতুন বছরের মার্চ পর্যন্ত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন