শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

যশোরের গ্রামে গ্রামে মধুবৃক্ষ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্ততি

যশোর থেকে শাহেদ রহমান | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২০, ৩:৫৮ পিএম

যশোরের গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ। খেজুর গাছকে বলা হয় মধুবৃক্ষ। যশোরের যশ খেজুরের রস। শীতের আগমনী বার্তায় শুরু হয়েছে মধুবৃক্ষ পরিস্কার করা। ডালপালা কেটে পরিস্কার করার পরই দফায় দফায় চাচ দেয়া হবে। বসানো হবে কঞ্চির নলি। যা দিয়ে খেজুর গাছ থেকে বেয়ে আসবে সুমিষ্ট রস।

মাটির ভাড় বসিয়ে খেজুরের গাছ থেকে সংগ্রহ হবে রস। পুরো শীতে গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক এই উৎসব চলে আসছে আবহমান কাল ধরে। এর পেছনে লুকিয়ে আছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক বিরাট সম্ভাবনা। কিন্তু সরকারীভাবে কখনোই কাজে লাগানো হচ্ছে না। সরকারী পৃষ্টপোষকতা ও উদ্যোগ নেয়া হলে দেশের চাহিদা পুরণ ছাড়াও প্রতিবছর বিদেশে গুড় ও পাটালি রফতানী করে কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করা সম্ভব বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

যশোরের ডাকাতিয়া গ্রামের গাছি ময়না মন্ডল জানালেন, আমরা এখন গাছ পরিস্কার করছি। এরপরই কাটা শুরু হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পুৃরোদমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্ততি চলছে। গাছিরা ধারালো দা হাতে ছুটছেন খেজুর গাছের কাছে। মোটা দড়ি কোমরে বেধে পাখির মতো ঝুলে গাছি দা দিয়ে গাছ কেটে তাতে মাটির ভাড় ঝুলানো হবে।

এরপরই গ্রামে গ্রামে তৈরী হবে খেজুরের গুড় ও পাটালি। রস জ্বালিয়ে ভিজানো পিঠা ও পায়েস খাওয়ার ধুম পড়বে প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে। দানা, ঝোলা ও নলেন গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণই আলাদা। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই। খেজুরের রস, গুড় ও পাটালির কদর প্রতিবছরই বাড়ছে। রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে যায় গুড় ও পাটালি নিয়ে। বিশেষত্ব হচ্ছে যত শীত তত মিষ্টি ও সুস্বাদু হয় খেজুরের রস। ঠকঠকে শীতের গুড় ও পাটালির চাহিদা সবচেয়ে বেশী। অসময়ে হাজারো চেষ্টা করেও শীত মৌসুমের আসল গুড় পাওয়া যাবে না। পাওয়া গেলেও তা হবে ভেজাল কিংবা চিনি মিশানো। তাই শীত মৌসুমে সবাই খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি সংগ্রহের অপক্ষো করে থাকে। আর ক’দিন পরই শহর থেকে গ্রামে ঢুকলেই শীতের ঝিরঝিরে বাতাসে ভেসে আসবে রস-গুড়ের মিষ্টি গন্ধ। গ্রামীণ পরিবেশকে একরকম মাতিয়ে তুলবে রস-গুড়।
মৌসুমের শুরুতে খেজুর গাছীদের চোখে মুখে খুশীর চিহ্ন। তাদের খুশী ম্লান হয়ে যায় যখন উপযুক্ত মূল্য না পায় রস, গুড় ও পাটালির। তাছাড়া খেজুর গাছের সংখ্যাও কমে গেছে। আগের মতো বিরাট লাভজনক না হলেও মৌসুমী আনান্দ গাছীদের নতুন এক গতি সৃষ্টি করে থাকে। এবারও তার ব্যতয় ঘটছে না। তবে আগে প্রতিটি গ্রামে প্রায় বাড়ী বাড়ী রসও গুড় তৈরীর রমরমা অবস্থা ছিল। এবার একেবারেই কম। কোন কোন গ্রামে খেজুর গাছ খুঁজে পাওয়া কঠিন। গাছ থাকলেও গাছি নেই। অথচ খেজুরের গুড় শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। যা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সরকারী কোন পৃষ্টপোষকতা নেই।
গ্রামাঞ্চলে বাড়ীর আঙ্গিনায় ও মাঠে জমির আইলে কিংবা বাগানে অযতœ অবহেলায় ও সম্পুর্ন বিনা খরচে বেড়ে ওঠা ‘মধুবৃক্ষ’ খেজুর গাছ। প্রতিবছর শীত মৌসুমে মানুষের রসনা তৃপ্তির যোগান দিয়ে আসছে। এর জন্য বাড়তি খরচ কিংবা আবাদী জমি নষ্ট করার প্রয়োজন পড়বে না। দেশের সড়ক পথ, রেল পথ, জমির আইল, পতিত জমি ও বাড়ীর আঙ্গিনায় কোটি কোটি খেজুর গাছ লাগানো সম্ভব। তাতে উম্মোচিত হবে দেশের অর্থনীতির এক নতুন দ্বার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন