বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

হাঁচি আসলে আলহামদুলিল্লাহ কেন বলি

মুফতি জাওয়াদ তাহের | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

মহান আল্লাহ তাআলা এ ভূপৃষ্ঠের কোন কিছুই অযথা সৃষ্টি করেন নি। প্রতিটি জিনিসের মাঝে বান্দার জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ কল্যাণ কখনো আমরা উপলব্ধি করতে পারি আবার কখনো আমাদের বোধোদয় হয় না। চোট বড় প্রতিটি আদেশেই আমাদের কল্যাণের জন্য। এ বিশ্বাস একজন মুমিন তার হৃদয়ে লালন করে। অনেক বিষয় আমাদের দৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও তার গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম। 

ইসলামের একটি শিষ্টাচার হলো কেউ যদি হাঁচি দেয় তাহলে সে আলহামদুলিল্লাহ বলবে। এটা ইসলামের শিক্ষা। আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত: নবী (সা:) বলেন: কেউ হাঁচি দিয়ে যেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে। সে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে তার অপর (মুসলমান) ভাই বা সঙ্গী যেন ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলে। সে তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বললে (শুকরিয়াাস্বরূপ) সে যেন বলে, ‘ইয়াাহদিকাল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকা’ (আল্লাহ তোমায় সৎপথে চালিত করুন এবং তোমার অবস্থার সংশোধন করুন)।(বুখারী,হাদীস: ৬২২৪)
আলহামদুলিল্লাহ এটি একটি কোরআনিক শব্দ। যার অর্থ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। কোনো কিছু পাওয়ার পর কিংবা কোনো কিছু খাওয়ার পর সাধারণত আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলি। কোনো সুসংবাদ, রোগমুক্তি কিংবা অন্তর শীতল করা আবেগ-অনুভূতির ক্ষেত্রেও আলহামদুলিল্লাহ বলি। প্রশ্ন হচ্ছে বাহ্যত হাঁচির মাধ্যমে এগুলোর কোনটাই দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু প্রকৃত মুমিন তার বিশ্বাস যে এর মাঝে মুমিনের কল্যাণ রয়েছে তাই এমনটা আদেশ করা হয়েছে। কিন্তু সংশয়বাদীরা তা বিশ্বাস করে না। রাসূলের সেই আদেশকে তারা তাচ্ছিল্য করে। এটা তাদের প্রতিনিয়ত অভ্যাস। আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে রাসূল যে আদেশ দিয়েছেন বর্তমান বিজ্ঞান তার লাভ অকপটে স্বীকার করছেন।
আমাদের নাকের ভেতরের অংশের দিকে লোম থাকে। অনেকেরই কাছেই এগুলো বিরক্তিকর। এগুলো আসলে এমনি এমনি থাকে না । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাকের ভেতরের চুল কখনোই চিমটা দিয়ে ওঠানো উচিত নয়। এই লোম নাকের ভিতরে ধূলোবালি আটকাতে সাহায্য করে। এই লোম পার হয়ে যখন কোনো কিছু নাকের ভিতরে প্রবেশ করে তখন হাঁচি হয়। বিশেষ করে দেহে বাইরের জীবাণু প্রতিরোধে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঝাঁঝাঁলো বা কড়া গন্ধ থেকেও হাঁচি হতে পারে। আসলে ধূলোজাতীয় কোনো পদার্থ হোক আর কোনো গন্ধই হোক না কেন, আমাদের নাকের ভেতরে উত্তেজনা বা সুড়সুড়ি সৃষ্টি হলেই আমাদের হাঁচি হয়।
হাঁচি একটা বিস্ময়। হাঁচি আসলে মানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। একদম শেষের দিকে কোন দিকে মুখ করে হাঁচি দেবেন এটা শুধু মানুষের নিয়ন্ত্রণে!
চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণা আনুযায়ী আপনি যখন হাঁচি দেন ঘন্টায় প্রায় ১৬০ মাইল বেগে নাক দিয়ে বাতাস বেরিয়ে আসে। আর এর সাথে বেরিয়ে আসা জলীয়পদার্থ প্রায় পাঁচ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। হাঁচির স্প্রের কথা ভুলে গেলে চলবে না প্রায় ২০০০ থেকে ৫০০০ জীবাণুযুক্ত তরলপদার্থ নাক-মুখ দিয়ে হাঁচির মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। (উইকেপিডিয়া)
হাঁচি আপনার দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে। কারণ, এর মাধ্যমে আমাদের দেহ থেকে বিভিন্ন জীবাণু বের হয়ে যায়। কেউ যদি হাঁচি আটকে রাখে তাহলে বড় ধরণের বিপত্তি ঘটতে পারে। ঘণ্টায় ১০০ মাইল থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ মাইল এই চাপকে জোর করে শরীরের ভিতর গিলে নিলে ভিতরে বহু ক্ষতি হতে পারে। যেমন, ল্যারিংসে ফ্র্যাকচার, কোমরে ব্যথা, মুখের নার্ভে ক্ষত।
এখানেই শেষ নয়। জোর করে হাঁচি চাপলে এর থেকেও বড় বিপদ ঘটতে পারে। কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বধির হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। হাঁচির বহির্মুখী প্রেসার শরীরের ভিতরে গেলে পাঁজর পর্যন্ত গুঁড়িয়ে যেতে পারে। হাঁচি চাপলে যখন ত খন মাসলে মারাত্মক টান ধরতে পারে। হাঁচির প্রেসার বাইরে বেরিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক নিয়ম। বহির্মুখী সেই ফোর্স জোর করে শরীরের ভেতর চালান করলে তা মস্তিষ্ক ও দেহের বিভিন্ন জায়গায় তরঙ্গ তৈরি করে। ওই তরঙ্গের আঘাতে শরীরে প্রচুর ড্যামেজ হয়। ( মাইকেল বেনিঞ্জার)
হাঁচি আসলে মুখে হাত দেওয়ার ইহলৌকিক উপকার নোভেল করোনা ভাইরাস চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। যা আমাদের নবী দের হাজার বছর আগে শিখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হাই-হাঁচি দিলে মুখে হাত দেবে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বুঝতে সক্ষম হয়েছে যে, হাঁচির মাধ্যমে যেহেতু মানুষ মারাত্মক ক্ষতি থেকে মুক্তি লাভ করে এ কারণেই হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁচির পর শুকরিয়া স্বরূপ ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে শিখিয়েছেন। কতইনা সুন্দর ইসলামের শাস্বত বিধান

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন