মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

আলহামদুলিল্লাহ

| প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২০, ১২:০৫ এএম

যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল আমফানের আঘাত ততটা প্রলয়ঙ্করী রূপে আর্বিভূত হয়নি। বিশেষত প্রাণহানি ও অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি আশঙ্কার চেয়ে অনেক কম হয়েছে। এ কারণে পরম করুণাময় আল্লাহতাআলার কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া, আলহামদুলিল্লাহ। প্রাণঘাতী করোনা মহামারীর এই সংকটকালে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় আমফান দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হেনেছে। বঙ্গোপসাগরের দূরবর্তী স্থানে থাকতেই এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আগাম সর্তকতামূলক প্রচার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট কাজে এসেছে। উপকূলীয় জেলাগুলোর প্রায় ২৪ লাখ মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার কারণে প্রাণহানির ঘটনা খুবই সীমিত ছিল। সুপার সাইক্লোনের আকারে ধাবমান এই ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত মোকাবেলা, উদ্ধার ও ত্রাণতৎপরতার প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজেই পালন করেছেন। বুধবার রাতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাতে বিচ্ছিন্নভাবে ৭-৮ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলে ১৬৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। এর সক্রিয় প্রতিক্রিয়ায় ৫ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালী, খুলনা-সুন্দরবন অঞ্চলসহ বিশাল এলাকার বিস্তীর্ণ উপকূলীয় নিম্নভূমি, দ্বীপ ও চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে এসব এলাকার কোথাও কোথাও বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে আবারো বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোনা পানি ঢুকে পড়েছে।

অতীতের মতো এবারো ভয়াল প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে আমাদের সুন্দরবন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অপেক্ষাকৃত বেশি তান্ডব সৃষ্টির পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর আগেই বুক পেতে দাঁড়িয়েছে সুন্দরবন। ঘূর্ণিঝড় আইলা ও সিডরের প্রলয়ঙ্করী আঘাতকেও সুন্দরবন মাথা পেতে নিয়েছিল। সে সময় সুন্দরবনের যে ক্ষতি হয়েছিল তা পূরণ হতে ৫০ বছর লাগতে পারে বলে পরিবেশবিদরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তবে সুন্দরবনের সে ক্ষত অনেকটাই পূরণ হতে চলেছিল। বুধবারের ঝড়ে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো জানা যায়নি। তবে গত দেড় দশকে আইলা ও সিডরে যে সব এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সামুদ্রিক লোনাপানি ঢুকে পড়েছিল সে সব ভাঙ্গা বেড়িবাঁধের শত শত কিলোমিটার এখন পর্যন্ত পুরোপুরি মেরামত করা হয়নি। সে সব দুর্বল ও ভাঙ্গা বেড়িবাঁধগুলো আমফানের আঘাতে আবারো ক্ষতিগ্রস্ত ও প্লাবিত হলো। এক দশকের বেশি আগে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো সময়মত মেরামত ও উন্নয়ন করা হলে আমফানের জলোচ্ছ্বাসে হয়তো এতটা বিস্তীর্ণ এলাকা লোনা পানিতে প্লাবিত হতো না। বাঁধ ভেঙ্গে নিজেদের ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় আবারে হয়তো লাখ লাখ কৃষিজীবী মানুষকে অনিশ্চিত জীবনের ফাঁদে পড়তে হলো। ঘূর্ণিঝড়টি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে এর প্রভাবে সারাদেশে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে রাস্তায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের যে আন্তর্জাতিক সুখ্যাতি রয়েছে, সুপার সাইক্লোন আমফান মোকাবেলায় তাৎক্ষণিক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয় শিবিরে নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে প্রাণহানি কমিয়ে আনার এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য আগে থেকেই মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আমফানের আগে লাখ লাখ মানুষকে ত্রাণশিবিরে নিয়ে আসা এবং দুযোর্গ পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার প্রয়োজনে সেনা ও নৌবাহিনীর সর্বোচ্চ প্রস্তুতির কথা জানিয়েছিল আইএসপিআর। আমফানের দুর্যোগ মোকাবেলায় সেবার মনোভাব নিয়ে দেশবাসীর পাশে দাঁড়ানোয় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তার বিচক্ষণতা ও সুদক্ষ নির্দেশনার কারণেই স্থানীয় প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সমন্বিত উদ্যোগে এমন একটি জাতীয় দুর্যোগ সফলভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলা ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের যে সুখ্যাতি রয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আমফান মোকাবেলা এক নতুন মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। তবে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারিসহ এ সম্পর্কে অতিরঞ্জিত প্রচারণা এক ধরনের ভীতি সৃষ্টি করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রস্তুতির ঘাটতির চেয়ে বেশি সতর্কতাই ভালো। তবে এমন অতিরঞ্জিত প্রচারণার কারণে ভবিষ্যতে মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনার প্রতি অনাগ্রহী বা আস্থাহীন হয়ে পড়ে কিনা তাও মনে রাখতে হবে। সমুদ্রোপকূলের প্রাণ-প্রকৃতি ও সম্পদ রক্ষায় সুন্দরবনের অসামান্য গুরুত্ব আবারো প্রমাণিত হলো। এখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণসহ সুন্দরবনের সুরক্ষা এবং উপকূলীয় প্রতিরক্ষা বাঁধগুলোর উন্নয়নে যথাযোগ্য উদ্যোগের পাশাপাশি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

সমুদ্রোপকূলের প্রাণ-প্রকৃতি ও সম্পদ রক্ষায় সুন্দরবনের অসামান্য গুরুত্ব আবারো প্রমাণিত হলো। এখন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণসহ সুন্দরবনের সুরক্ষা এবং উপকূলীয় প্রতিরক্ষা বাঁধগুলোর উন্নয়নে যথাযোগ্য উদ্যোগের পাশাপাশি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ২৩ মে, ২০২০, ১২:০৩ পিএম says : 0
সুন্দরবনের Protection will not be able to save us because, people under the assistance of the government the are cutting trees.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন