আমলকী টক কষ যুক্ত একটি ছোট ফল। দেখতে ছোট হলে কি হবে এর যে গুনের শেষ নেই। কোন খাদ্যের মধ্যে সব ধরনের গুনাগুন থাকলে তাকে সুপার ফুড বলে। এই জাতীয় খাদ্য কোথাও না থাকলেও আমলকীতে কিন্তু ঠিকই আছে। আমলকীকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে অমৃত ফল বলা হয়। আমলকী আয়ুর্বেদ ও ইউনানী ঔষধ তৈরীতে খুবই ব্যবহার করা হয়। প্রায় ১০০ প্রকার আয়ুর্বেদ ও ৫০ প্রকার ইউনানী ঔষধে আমলকীর ব্যবহার হয়। পৃথিবীতে এমন কোন ঔষধ নেই যা সব ধরনের রোগ সারাতে ব্যবহার করা হয়। আমলকী এমন একটি ফল যা সব রোগ তাড়াতে পারে না বটে তবে তা সব রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। নিয়মিত আমলকী খেলে আপনাকে প্রতিদিন এক মুঠ ঔষধ খেতে হবে না।
১০০ গ্রাম আমলকীতে ভিটামিন সি আছে ৪৬৩ মিঃ গ্রাঃ। আমলকীতে পেয়ারার তিনগুন, কাগজী লেবুর ১০ গুন, কমলা লেবুর চেয়ে ১৫ গুন আপেলের চেয়ে ১২০ গুন আমের চেয়ে ২৪ গুন ও কলার চেয়ে ৬০ গুন বেশী ভিটামিন সি রয়েছে। আমলকী শরীর ও ত্বক দুষন মুক্ত করে। রক্ত পরিস্কার করে। ত্বককে লাবণ্যময় করে। এই মৌসুমেই বাজারে প্রচুর আমলকী পাওয়া যায়। আমরা নিয়মিত আমলকী কিনতে পারি। তবে আমলকী সুস্বাদু ফল নয় তাই অনেকেই কিনতে চায় না। শীত চলছে, তাপমাত্রা কম। অনেকেরই এই সময়ে ঠান্ডা জনিত রোগ পেয়ে বসে। আর এই সময়ে আমলকী বেশী পাওয়া যায়। প্রতিদিন ১ চামচ আমলকীর রস খেলে ঠান্ডা সর্দি থেকে মুক্ত থাকা যায়। আমরা একনজরে আমলকীর গুনাগুন জেনে নিতে পারি। এতে নিজের বা অন্য কারো উপকারেও লাগতে পারে।
১। অনিদ্রা: যে কোন কারনেই হোক ঘুম না এলে কাঁচা বা শুকনো আমলকী কাঁচা দুধে বেটে একটু মাখন মিশিয়ে তালুতে লাগালে তাড়াতাড়ি ঘুম আসে।
২। পিত্ত বেদনা: পিত্ত বেদনায় এক থেকে দেড় চামচ আমলকীর রসের সাথে সামান্য চিনি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৩। চোখ উঠা: কারো চোখ উঠলে দুটি শুকনো আমলকী ভালো করে ধৌত করে আধাকাড় পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন সকালে পানি ছেঁকে ২-৩ ফোটা করে চোখে কয়েকবার দিলে চোখ উঠা সেরে যাবে।
৪। কোলেস্টেরল কমাতে: আমলকী-হরতকি-বহেড়া এই তিনটিকে ত্রিফলা বলা হয়। এই তিনটির সমপরিমাণ গুড়ার শরবত কোলেস্টেরল কমার মহৌষধ হিসেবে পরিচিত। কোলেস্টেরল কমাতে প্রতিদিন ত্রিফলা শরবত খান।
৫। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে: উচ্চ রক্তচাপ কমাতে প্রতিদিন ত্রিফলা শরবত সেব্য।
৬। পেট ফাঁপা ও অতিরিক্তি অম্লতায়: কারো পেট ফাঁপা ও অতিরিক্তি অম্লতা দেখা দিলে ৩-৪ গ্রাম শুকনো আমলকী এক গ্লাস পানিতে আগের দিন ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন খাওয়ার সময় সাধারণ পানি পানের বিপরীতে আমলকী ভিজানো পানি পান করলে উপকার হবে। তবে আমলকী যেন কোন ধাতব পাত্রে ভিজানো না হয়।
৭। প্রস্রাবে সমস্যা: প্রস্রাবে সমস্যা হলে প্রতিদিন কাঁচা আমলকীর রস বা চিবিয়ে ৩-৪ গ্রাম আমলকী খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৮। দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া: অল্প বয়সে যাদের দৃষ্টি শক্তি কমে যাচ্ছে। কয়েকদিন পর পর চশমা পাওয়ার বদলাতে হয়। এই অবস্থায় প্রতিদিন ২-৩ চা আমলকীর রসের সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিতি আমলকী খেলে দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া রোগ ভাল হয়ে যায়।
৯। চুলপড়া: চুল পড়া রোধের জন্য বাজারে অনেক প্রকার আমলকীর আমলা তেল পাওয়া যায়। তারচেয়ে বরং নিজের ঘরে খাটি নারিকেল তেল এনে আমলকীর বীজ ফেলে দিয়ে আমলকী ছেঁচে ঐ তেলে মিশিয়ে গরম করুন। তেল যখন একটু কুঁচো রং ধারণ করবে তখন উঠিয়ে তেল ঠান্ডা করে নিন। এই তেল মাথায় ব্যবহার করুন। প্রতিদিন ১-২ চামচ আমলকীর রস খান। দ্রুত চুল পড়া বন্ধ হবে।
১০। শ্বেতপদর: শ্বেতপদরে ছোট আমলকী হলে দুটি আর বড় হলে একটি বীজ সহ রস করে একটু চিনি বা মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা আমলকী না পেলে শুকনো আমলকীর গুঁড়া এক গ্রাম একটু মধু সহ খেতে হবে।
১১। প্রস্রাব আটকে যাওয়া: আমলকী বেটে নাভীর নিচে প্রলেপ দিলে উপকার হয়।
১২। বমি: কোন ঔষধেই বমি বন্ধ হচ্ছে না, ৩-৪ গ্রাম শুকনো আমলকী পানিতে ভিজিয়ে রেখে দুই ঘন্টা পর পর ছেঁকে নিয়ে সে পানির সাথে শ্বেত চন্দন ঘষা আধা চামচ পানি নিয়ে সামান্য চিনি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
১৩। ত্বকের কালো দাগ: প্রতিদিন সকালে আমলকীর রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে ত্বকে পড়া কালো দাগ ভাল হয়ে যায়। এতে ত্বকের লাবণ্যতা বৃদ্ধি পায়।
১৪। ব্রংকাইটিস এ্যাজমা কাশি: আমলকীর জুস খেলে ব্রংকাইটিস এ্যাজমা ও কাশির উপশম হয়।
১৫। মুখের দর্গন্ধ ও দাঁত ভাল রাখা: প্রতিদিন আমলকীর রস খেলে মুখের দুর্গন্ধ চলে যায় এবং দাঁতের উপকার হয়।
১৬। স্থুলতা: নিয়মিত আমলকী খেলে শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য হয়। এটি হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফুসফুসকে শক্তিশালী করে। মস্তিস্কের শক্তি বৃদ্ধি করে।
১৭। ডায়াবেটিস: নিয়মিত আমলকী খেলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে।
১৮। অরুচি: আমলকী খেলে রুচি বৃদ্ধি পায়। ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। হজম শক্তি বাড়ায়।
১৯। অম্লতা: এক গ্লাস দুধ বা পানিতে এক চামচ আমলকীর গুড়ো মিশিয়ে সাথে সামান্য চিনি দিয়ে সকাল বিকাল পান করলে অম্লতা চলে যায়।
২০। আলসার: নিয়মিত আমলকী খেলে আলসার ভাল হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দুর হয়। এমনকি পাইলস রোগও সেরে যায়।
২১ । ক্ষুধামন্দা: খাওয়ার আগে আমলকীর গুড়ার সাথে মাখন মিশিয়ে খেলে ক্ষুধামন্দা রোগ ভাল হয়ে যায়।
২২। রক্ত বৃদ্ধি করে: আমলকী খেলে শরীরে রক্তের লোহিত কনিকা বৃদ্ধি করে।
২৩। নাসা রোগ: কারো নাক দিয়ে রক্ত পড়লে শুকনো আমলকী পানিতে ভিজিয়ে বেটে মাথায় প্রতিদিন আধা ঘন্টা প্রলেপ দিয়ে রাখলে নাক দিয়ে রক্ত পড়া কমে যাবে। এভাবে ১ মাস দিলে এই রোগ ভাল হয়ে যাবে।
২৪। মাথা ধরা: আমলকী বেটে তার সাথে সাদা চন্দন মিশিয়ে কপালে ঘষলে মাথা ধরা ভাল হয়ে যায়।
২৫। আমাশয়: অনেকে ক্রনিক আমাশয়ে ভোগেন। কোন ভাবেই সারতে চায় না। তাছাড়া পায়খানা চাপ আসা সত্বেও পায়খানা পরিস্কার হয় না । তারা প্রতিদিন দুটি আমলকী খান আমাশয় সহ পেটের সকল রোগ ভাল হয়ে যাবে।
২৬। ব্রণ: গোসলের পূর্বে আমলকী বেটে সামান্য পানি মিশিয়ে মুখে মেখে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে ১ সপ্তাহ ব্যবহার করলে ব্রণ ও চেহারার কালো দাগ দুর হয়ে যাবে।
২৭। লিভার সুরক্ষা: নিয়মিত আমলকী খেলে লিভার ভাল থাকে। সেই সাথ খাদ্য পাঁচক রস বৃদ্ধি করে হজমে বিশেষ ভ’মিকা রাখে।
মুন্সি আব্দুল কাদির
সিনিয়র অফিসার ও জিবি ইনচার্জ
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ
লালদিঘীরপাড় শাখা, সিলেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন