শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

ডায়াবেটিস সেবায় পার্থক্য গড়ে দেন নার্সিং

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ২০২০

| প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন এ দিবসটির উদ্যোক্তা, জাতিসংঘ এ দিবসটির সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করেছে; তাই পৃথিবীর সবক’টি দেশ প্রত্যেক বছর ১৪ নভেম্বরে এ দিবসটি পালন করে আসছে। আশা করা হচ্ছে এটি আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন তাল মিলিয়ে সকল দেশের নীতি নির্ধারক মন্ডলী তাদের দেশের স্বাস্থ্য সেবা পরিকল্পনা উন্নয়ন কাঠামো তৈরি করবে। ‘ডায়াবেটিস সেবায় পার্থক্য গড়ে দেন নার্সিং’ এ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ২০২০ পালিত হচ্ছে।

ডায়াবেটিস পৃথিবীতে মহামারি আকারে বিরাজ করছে। আান্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের হিসাব মতে ২০১৯ সনে প্রতি ১১ জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিল (মোট ৪২৫ মিলিয়ন); ২০৪৫ সনে ৪৮ শতাংশ বেড়ে তা ৬২৯ মিলিয়ন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পৃথিবীর মোট ডায়াবেটিসের রোগীর ৮৭ শতাংশই উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে বসবাস করছেন।

গড়ে প্রতি ৬ টি সন্তান প্রসবের ১টি মায়ের ডায়াবেটিস থেকে আক্রান্ত। ২০১৬ সনে পৃথিবীর মানুষের স্বাস্থ্য খাতের মোট ব্যয়ের ১২% এর বেশি চিকিৎসার ব্যয় হলেও চার ভাগের তিন ভাগ ডায়াবেটিস রোগী নিম্ন অর্থবিত্তের দেশগুলোতে বসবাস করে। ডায়াবেটিস যে পরিবারের উপর গোত্রীয় প্রভাব বিস্তার করে এবং এর জন্য পরিবারের সকল সদস্যের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রোগীর পরিবারের সদস্যের অংশ জরুরী।

বাংলাদেশে যেমন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেশি, তেমনি ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হারও বেশি। ২০১৯ সনে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ ডায়াবেটিস সংখ্যাধিক্য দেশের মধ্যে দশম। কিন্তু আরও ভয়াবহ হলো ২০৩০ ও ২০৪৫ সনে বাংলাদেশ নবম অবস্থানে থাকবে। পৃথিবীতে বর্তমানে সবচেয়ে উচ্চহারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনে। বাংলাদেশসহ সব উন্নয়নশীল দেশে খুব দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে, মানুষের দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে আনুপাতিক ও কাঙ্খিত হারের চেয়ে বেশি, মানুষের দৈহিক শ্রম দিনে দিনে কমে যাচ্ছে, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে মানসিক চাপ বেড়েছে অনেকগুণ। উন্নত দেশগুলোতে ডায়াবেটিস রোগীর হার কমলেও তবে তা খুব উল্লেখযোগ্য হারে নয়।

অঞ্চল ভেদে মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার কিছুটা চরিত্রগত ভিন্নতা রয়েছে। এ এলাকায় প্রধানত টাইপ ২ ও অন্যান্য বিশেষ ধরণের ডায়াবেটিস দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় প্রথমবার ডায়াবেটিস ধরা পড়ার হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে এ এলাকার দেশসমূহে। উন্নত দেশে মহিলাদের বেশি সংখ্যায় টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ভুগতে দেখা যায়, আর উন্নয়নশীল দেশে পুরুষরা টাইপ ২ ডায়াবেটিসে বেশি সংখ্যায় ভোগেন। বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। আগের তথ্যটি কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বৈশিষ্ট্যেরই প্রকাশ ঘটায়। যেমন- খাদ্যভ্যাস, শারীরিক শ্রম বা ব্যায়াম, আনুপাতিক হারে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ইত্যাদি। তাছাড়া বিভিন্ন সামাজিক অবস্থায় কিছুটা ভিন্নতর ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ/অভ্যাস দেখা যায়। আর টাইপ ২ ডায়াবেটিসজনিত জটিলতায় ভোগার হার এবং প্রাবল্যও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম।
এই বিপুল সংখ্যক ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসা ও আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা করতে এখনই আমাদের সচেতন হওয়া জরুরী।

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যেটিকে প্রতিরোধ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে, কিন্তু একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে বাকি জীবন ডায়াবেটিস নিয়েই কাটাতে হবে এবং প্রহর গুণতে হবে যে, কখন ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতাগুলো দেখা দেয়। তাই সকল স্তরের মানুষকে জেনে বুঝে সচেতনভাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের কর্মযজ্ঞে নিজের সামর্থ অনুসারে অংশগ্রহণ করতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে, নতুন নতুন ওষুধ যেমন আবিস্কৃত হয়েছে, তেমনই প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার কৌশলও পরিবর্তীত হচ্ছে। কিন্তু সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রে আছেন বর্তমানে ডায়াবেটিসের রোগী ও যাদের ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা আছে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস চিকিৎসা যেমন জরুরি, তার চেয়েও বেশি জরুরি ডায়াবেটিস প্রতিরোধের সর্বাত্বক সুগভীর কর্মকান্ড। রাষ্ট্রকেই ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞদের সাথে নিয়ে এ কাজে নেতৃত্ব দিতে হবে যাতে সকল স্তরের মানুষকে যুক্ত করতে হবে। পাঠ্য সূচী থেকে শুরু করে নগর পরিকল্পনা, বিদ্যালয় স্থাপনসহ সকল ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস প্রতিরোধসহ মেটাবলিক রোগগুলো নিয়ন্ত্রণের কাঠামোগত উন্নতি করতে হবে।
ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
Email: selimshahjada@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন