বিধি বহিভূতভাবে পুকুর ভরাট করে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে দিনাজপুর জেলা পরিষদের তিন কোটি টাকার সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। পৌর এলাকায় এলজিইডি অফিস সংলগ্ন পুকুরের সম্মুখভাগে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলছেন, ভবন নির্মাণকারীকে ওই পুকুর লীজ দেয়া হয়নি। আর লিজ দেয়া সম্পদে স্থায়ী ভবন নির্মাণ বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণরুপেই অবৈধ। অপরদিকে ভবন নির্মাণকারী মো. জাহিদ কামাল সউদের দাবি ২০১৮ সালে ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ জমি এক বছরের লীজ গ্রহণ করলেও পরে তা নবায়ন করা হয়নি। তারপরেও একটি দ্বিতল ভবনের পার্শ্বে আরেকটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, পৌর এলাকার ১২ নং ওয়ার্ডের মিস্ত্রিপাড়ার এলজিইডি অফিসের পিছনে খামার ঝাড়বাড়ি মৌজায় ব্লাক সার্কেল নামে একটি আধুনিক দ্বিতল ভবনে অফিসের কাজ চলছে। পুকুরের সম্মুখভাগে ভবনটি নির্মাণের বিষয়টি স্পষ্ট। এরপরেও ভবনের পার্শ্বে আরেকটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ শেষে গ্রিলের কাজ চলছে।
শুধু তাই নয় ভবনের পিছনে বিদ্যমান পুকুরের মাঝখানে আরসিসি পিলার উঠানো হয়েছে। পুকুর ভরাট করার জন্য বালু, মাটি ও ইটের শুরকি ফেলা হচ্ছে। পুকুর ভরাট প্রক্রিয়ায় পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলি অনেক নীচে পড়ে গেছে এবং ফাটল ধরে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
পাশেই দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে বসবাসকারী ভূমিহীন একটি পরিবার বাড়ি করে বসবাস করছে। তারা অনেক আগেই লীজের জন্য আবেদন করেও এখন পর্যন্ত জেলা পরিষদ তাদের লীজ দেয়নি। অপরদিকে ভবন নির্মাণকারী ভূমিহীন পরিবারটির ঘর অর্ধেক ভেঙে দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুকুরের আবাদ করা মাছ বিক্রির টাকা পার্শ্ববর্তী মসজিদকে দেয়া হতো। এখন তাও দেয়া হয়না।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে উল্লেখিত মৌজায় মোট ৯ দশমিক ৮৮ একরের পুকুর রয়েছে। সি এস খতিয়ানে এটি বাঁধ ও পুকুর উল্লেখ থাকলেও বিএস রেকর্ডে তা পুকুর উল্লেখ করা হয়েছে। গত ৫ মাস আগে মো. জাহিদ কামাল সউদ ৬ শতক জমির উপর দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে ব্লাক সার্কেল অফিস প্রতিষ্ঠা করে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজিজুল ইমাম চৌধুরী জানান, ভবন নির্মাণকারীকে জমিটি লীজই দেয়া হয়নি।
ঢাকায় অবস্থান করায় ভবন নির্মাণকারী মো. জাহিদ কামাল সউদ মুঠোফোনে জানান, তিনি ১৪২৫ সালে এক বছরের ৬ দশমিক ৪৩ শতক জমি লীজ গ্রহণ করেন এবং যথারীতি ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল লীজ বাবদ ৩০৮৭ টাকা রশিদ মূলে জমা করেছেন। তবে রশিদে জমির রকম অর্থাৎ পুকুর জলাশয় বা বাস্তভিটা কোন কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় অবস্থান করায় তার সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি লীজ প্রাপ্তির কথা বলেন। তবে পরবর্তীতে নবায়নের জন্য আবেদন করা হলেও তার লীজ নবায়ন করা হয়নি। লীজের অর্থ জমার রশিদ তিনি মেইলে সরবরাহ করেন।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, সউদের আবেদন এবং সার্ভেয়ারের রিপোর্টের ভিত্তিতে বিষয়টি পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হলে লীজ অনুমোদন করা হয় কিন্তু তা কার্যকর করা হয়নি। পরে তিনি চেয়ারম্যানের ক্ষমতাবলে প্রধান অধিক তদন্তের নির্দেশ দিলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিপোর্টে পুকুর এবং ভরাট করে ভবন নির্মাণের প্রতিবেদন দেয়। যা বর্তমান সরকারের পুকুর জলাশয় নির্মাণ আইনের পরিপন্থি হওয়ায় লীজটি স্থগিত করা হয়। একইসাথে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের ব্যাপারে ভবন নির্মাণকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ।
জেলা পরিষদ সাধারণত এক বছরের জন্য লীজ দিয়ে থাকে এবং লীজের শর্তে উল্লেখ রয়েছে কোন স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে। শর্ত ভঙ্গ করলে লীজ বাতিল হয়ে যাবে। তাহলে কিভাবে শহরের ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে মুল্যবান একটি পুকুর ভরাট করে মাসের পর মাস ধরে কিভাবে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এর পিছনে কোন শক্তি কাজ করছে কিনা তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে এবং অবৈধভাবে সরকারি পুকুর ভরাট এবং তার উপর ভবন নির্মাণকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। একইসাথে জেলা পরিষদের বেহাত হয়ে থাকা মূল্যবান সম্পত্তি উদ্ধারের ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন