শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

যাত্রী স্বল্পতায় হজ ফ্লাইটে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা যায়, যাত্রী সঙ্কটের কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এখন পর্যন্ত ১১টি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। ৪ আগস্ট থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ১১টি ফ্লাইট বাতিল করায় আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি পড়তে যাচ্ছে বিমান। এভাবে যাত্রী সঙ্কট চলতে থাকলে আরো বেশি লোকসানে পড়তে হবে বিমানকে। এদিকে গত বুধবার বিমানের লোকসানের কথা বিবেচনা করে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হজ এজেন্টদের আসন সংরক্ষণপূর্বক টিকেট সংগ্রহ করতে হজ এজেন্টদের সংগঠন হাবকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ বিমান। এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) খান মোশাররফ হোসেন জানান, বাতিলকৃত ফ্লাইটের কারণে বিমানের হজযাত্রী পরিবহনে পাঁচ হাজার আসনের ক্যাপাসিটি খোয়া গেছে। এতে আর্থিক ও মারাত্মক যাত্রী সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে বিমান।
এমন পরিস্থিতির উদ্ভব আগে আর কখনো ঘটেনি। এবারে হঠাৎ করে কেন যাত্রী পরিবহনে এই সঙ্কটের সৃষ্টি হলো সেটি কারো কাছেই পরিষ্কার হচ্ছে না। হজ এজেন্সিগুলো তথা তাদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হাব সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরগুলোকে দায়ী করছে। পক্ষান্তরে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরসমূহ হজ এজেন্সিসমূহের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হাবকে দায়ী করছে। সেজন্যই তারা আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টিকেট সংগ্রহের জন্য হাবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অথচ গত বুধবার পর্যন্ত ৬৫ হাজার হজ ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। এরপরে আর প্রতিটি ফ্লাইটে যাত্রী স্বল্পতা থাকার কথা নয়। যাত্রী পরিবহনের জন্য যে ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটি প্রশংসার যোগ্য। বাংলাদেশ বিমান পরিবহন করবে ৫০ হাজার ৫ শত যাত্রী আর সউদীয়া করবে আরো ৫০ হাজার ৫ শত যাত্রী। এছাড়া বিশেষ ব্যবস্থাধীনে আরো ১১ হাজার হাজীর কোটা বরাদ্দ করেছে সউদী সরকার। এই স্পেশাল ক্যাটাগরিসহ এবারে ১ লাখ ১২ হাজার মানুষ পবিত্র হজব্রত পালন করবেন। কিন্তু এখন অজানা ও দুর্বোধ্য কারণে যে যাত্রী সঙ্কট শুরু হয়েছে তার ফলে এবারের কোটায় সমস্ত হাজীকে পরিবহন করা সম্ভব হবে কি না সেটি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন যে, শেষ পর্যন্ত সমস্ত হাজী হজ পালন করতে পারবেন কি না। মনে হচ্ছে, কোথায় যেন একটি শুভঙ্করের ফাঁক সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রতিটি হজ ফ্লাইটে ৩১৯ জনের পরিবর্তে ৪১৯ জনের একোমেডশন এবং ভ্রমণের দিনের ৭২ ঘণ্টা আগে ভিসা ও বিমান টিকেট নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৩১৯টি হজ এজেন্সির বিপরীতে ৬৮ হাজার হজ ভিসা প্রসেস করা হয়েছে। তারপরেও এই যাত্রী সঙ্কটের কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
এর একমাত্র কারণ হতে পারে এই যে এবার বাংলাদেশ বিমান, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা অধিদফতর এবং হজ এজেন্সিরগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা দিয়েছে। হজব্রতের মতো একটি মহাপবিত্র ধর্মীয় বাধ্যবাধকতাতেও পারস্পারিক দোষারোপের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিমানের একজন দায়িত্বশীল অফিসার বলেছেন, অগ্রিম আসন বরাদ্দ করার পরেও হজ এজেন্সিগুলো সেই বরাদ্দ তথা অগ্রিম টিকেট ব্যবহার করছে না। সেই জন্যই হজ এজেন্সিগুলোকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেন্টাম দেয়া হয়েছে। এই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তারা যদি টিকেট সংগ্রহ না করে এবং তার ফলে যদি কোনো ফ্লাইট সিডিউল বিপর্যস্ত হয় তাহলে তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব হজ এজেন্সিগুলোকে বহন করতে হবে। তিনি আরো অভিযোগ করেন, অনেকের ক্ষেত্রে মাহারাম সমস্যার এখনো সমাধান হয়নি বলে ভিসা ইস্যু করার জন্য পাসপোর্ট জমা দেয়া যায়নি। প্রধানত এই কারণেই নির্ধারিত সিডিউলে যাত্রীস্বল্পতা দেখা দিয়েছে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিমান নির্দেশিত পথ অনুসরণ না করলে শেষে দিকে ভয়াবহ সøট সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্কটের ফলে নির্বাচিত অনেক হাজী শেষ মুহূর্তে বাদ পড়তে পারেন। এটি হবে সবচেয়ে দুঃখজনক ও পরিতাপের বিষয়। এমন দুঃখজনক ঘটনা অতীতে আর ঘটেনি। ২০১২ সালে ১ লাখ নয়, অনেক বেশী সংখ্যক বাংলাদেশী হজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তখনো কিন্তু এধরনের সঙ্কটের সৃষ্টি হয়নি। সুতরাং এধরনের স্পর্শকাতর বিষয় আগামীতে অনেক আগে থেকেই ফয়সালা করে রাখতে হবে। একটি বিষয় ভুললে চলবে না যে, হজ এমন একটি বিষয় যেটি একটি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে শেষ করতে হয়। সেখানে নিয়ম নীতি বা পদ্ধতি শিথিল করার অবকাশ নাই। দেশবাসী আশা করে, এবারেও সংশ্লিষ্ট সকলে রাতের ঘুম হারাম করে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করে ফ্লাইটে যাত্রী স্বল্পতার সমাধান করবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন