চলতি রবি মৌসুমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো, গম, গোল আলু, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, শীতকালীন সবজি, তেল বীজ, মসলা, ডাল জাতীয় ফসল এবং তরমুজ ও সয়াবিন চাষের প্রস্তুতি শুরু করেছেন কৃষকরা। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে দক্ষিণাঞ্চলের উঠতি আউশ, আমন বীজতলা, রোপা আমন ও আগাম রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিন দফার অতিবর্ষণে এবার দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি জমিতে দীর্ঘদিন পানি আটকে ছিল। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে রবি ফসল আবাদ এবার কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।
তবে আউশ ও আমনের সব ক্ষতি কাটিয়ে কৃষকরা রবি আবাদের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত রবি মৌসুমে ৬ লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়েছিল। এবার কৃষি মন্ত্রণালয় ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৫শ’ হেক্টরে এসব ফসল আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ইতোমধ্যে আমনের জমিতে থোড় ও ফুল আসতে শুরু করেছে। আর দিন পনেরোর মধ্যেই আমন কাটা শুরু হয়ে চলবে পৌষের শেষ ভাগ পর্যন্ত। ইতোমধ্যে কৃষকরা বোরো বীজতলা তৈরির কাজও শুরু করেছেন। অন্যান্য রবি ফসল আবাদও শুরু হয়ে যাবে খুব শিগগিরই।
একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় অতিক্রম করে এবার ৬ লাখ ১৫ হাজার ৯২২ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৮ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর আশাবাদী ডিএই। পাশাপাশি চলতি রবি মৌসুমে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫১৬ হেক্টরে বোরো আবাদের মাধ্যমে ৬ লাখ টনেরও বেশি চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। বিদায়ী খরিপ-১ মৌসুমে আউশ উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ টনেরও বেশি। এছাড়া প্রায় ৫২ হাজার হেক্টরে শীতকালীন শাক-সবজি, ৩৫ হাজার হেক্টরে তরমুজ, ৭ হাজার হেক্টরে গম, ১৩ হাজার ৫১ হেক্টরে মিষ্টি আলু, ৯ হাজার ৫১ হেক্টরে গোল আলু, ১০,১৭৫ হেক্টরে ভুট্টা, আড়াই হাজার হেক্টরে আখ, ৬,১২৯ হেক্টরে শসা, ক্ষিরা ও মর্মা ছাড়াও ১,৩৮৪ হেক্টরে ফুট আবাদের লক্ষ্য অর্জনে কাজ শুরু করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা।
এসবের বাইরেও দক্ষিণাঞ্চলে এবার প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টরে বিভিন্ন ধরনের তেল জাতীয় ফসল আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ২৩ হাজার হেক্টরে চীনা বাদাম, ১৩ হাজার হেক্টরে সরিষা, ৪,২১২ হেক্টর সূর্যমূখী, ২,৪৫৩ হেক্টরে তিল, প্রায় সোয়াশ’ হেক্টরে তিসি ও প্রায় ২৪ হাজার হেক্টরে সয়াবিনের আবাদ হচ্ছে। বিভিন্ন পোল্ট্রি ফিডের কারখানায় মাঠ থেকেই সয়াবিন তেল বীজ সংগ্রহ করে প্রাণিখাদ্যের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছে। সূর্যমূখী উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও শুধুমাত্র বিপণনের অভাবে আবাদ সম্প্রসারণ হচ্ছে না বলে জানা গেছে।
দক্ষিণাঞ্চলে এবার প্রায় ৩ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের ডাল জাতীয় ফসলের আবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে মুগ ডাল আবাদ হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ১ হাজার হেক্টরে। যা দেশে মোট আবাদের প্রায় ৬০ ভাগ। এছাড়া ১ লাখ ৫ হাজার হেক্টরে খেসারি, ২৩ হাজার হেক্টরে ফেলন, প্রায় ৪ হাজার হেক্টরে মসুর, ১ হাজার হেক্টরে ছোলা ও প্রায় ৫০ হেক্টরে মাসকালাই ও মটর ডালের আবাদ হচ্ছে।
এসবের বাইরে চলতি রবি মৌসুমে প্রায় ৪৬ হাজার হেক্টরে মসলার আবাদ হচ্ছে। যার মধ্যে মরিচ আবাদ হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টরে। এছাড়া ১ হাজার ৬শ’ হেক্টরে পেঁয়াজ, ১ হাজার ১শ’ হেক্টরে রসুন, ৩ হাজার হেক্টরে ধনিয়া ও প্রায় ৮শ’ হেক্টরে আদা, কালোজিরা ও হলুদের আবাদ হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন