বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ক্ষতিগ্রস্ত ১৪৫০ পরিবার

মাদারীপুরে নদী ভাঙন

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

চলতি বছরের বন্যার পূর্বে, বন্যার সময় ও বন্যার শেষে মাদারীপুরের চারটি উপজেলায় নদী ভাঙনে ১৪৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে- শিবচর, কালকিনি, মাদারীপুর সদর ও রাজৈর। অনেক পরিবার তাদের বসতভিটার শেষ সম্বল টুকু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। কেউ কেউ আবার অন্যের জমিতে কোনমতে পুরাতন টিন দিয়ে ছাপরা ঘর তুলে থাকছে। এছাড়াও নদী ভাঙনে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, মসজিদ, কমিউনিটি ক্লিনিক, হাট-বাজার, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। ভাঙন প্রতিরোধে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু কিছু স্থানে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। 

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে জেলার চারটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদী ভেঙেছে। মাদারীপুর সদর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদীতে ভাঙনকৃত এলাকাগুলো হচ্ছে- ঘুনশি-শিরখাড়া, বাহাদুরপুর-হবিগঞ্জ, কালিকাপুর, পাঁচখোলা, পাঁচখোলা ইটভাটা, বাহেরচর কাতলা, কাজিরটেক-চরগোবিন্দপুর, মহিষেরচর পুরাতন ফেরিঘাট, চরকুলপদ্বী, কীর্তিনাশা নদীতে ভাঙনকৃত এলাকা পখিরা, কুমার নদীতে ভাঙনকৃত এলাকা চরঘুনশি-শিরখাড়া, গোসাইদিয়া শিরখাড়া, কোর্টবাড়ি শ্রিনদী, লোয়ার কুমার নদীতে ভাঙনকৃত এলাকা পাঠককান্দি, কুমারটেক-পৌরপেয়ারপুর, পিটিআই চরমুগরিয়া, উকিলবাড়ি-ঘটমাঝি, কৃষি মার্কেট-মস্তফাপুর, মন্দির-মস্তফাপুর।
শিবচর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদী ও পদ্মা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা হচ্ছে সন্নাস্যিরচর, বহেরাতলা, সিরুয়াইল, নিলখি, মাগুরাখন্ড, কাঁঠালবাড়ি, বন্দরখোলার কাজীরসুরা।
রাজৈর উপজেলার নদী ভাঙনকৃত এলাকা কবিরাজপুর নিলামবর্ধি-বিশম্বরর্ধি, মেহমানকান্দি শাখারপাড়, ইশিবপুর, উত্তর গোয়াল বাথান, হরিদাসদি-মহেন্দ্রদী, চর মস্তফাপুর, দক্ষিণ গোয়াল বাথান, প্রনবমঠ-বাজিতপুর, চৌরাশি বাজিতপুর।
কালকিনি উপজেলার নদী ভাঙনকৃত এলাকা ফাসিয়াতলা লঞ্চঘাট, আলিপুর মোল্লার হাট, খাসের হাট, মিয়ার হাট লঞ্চঘাট, আন্ডারচর লঞ্চঘাট, সাহেবরামপুর লঞ্চঘাট, রামারপোল মোল্লার হাট, চর হোগলপাতিয়া, স্বস্থ্যল, খুনেরচর, আউলিয়ারচর, ফাসিয়াতলা পশ্চিম চর, লক্ষ্মীপুর পখিরা, ঝুরগাও, উত্তর রমজানপুর, দক্ষিণ রমজানপুর।
জানা গেছে, চলতি বছরে নদী ভাঙনে মাদারীপুর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শিবচর উপজেলায়। নদী ভাঙনে শিবচরের চরাঞ্চলের ৪টি বিদ্যালয়, একটি মাদরাসা, একটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন কমপ্লেক্স, ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট, শত শত বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বন্যায় চরের বাতিখ্যাত বন্দরখোলা ইউনিয়নের নুরুদ্দিন মাদবরকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩ তলা ভবন, চরজানাজাত ইউনিয়নের ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক স্থাপনা ও ইউনিয়ন পরিষদ, কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ৭৭ নম্বর কাঁঠালবাড়ি সরকারি বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারের ৩ তলা ভবনটি বিলীন হয়। নদী ভাঙতে ভাঙতে বন্দরখোলার মানচিত্র বদলে গেছে।
নদীর ভাঙন প্রতিরোধে কবলিত এলাকায় বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলেছিল মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিবচর উপজেলার কিছু কিছু ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শুকনা খাবার, চাল, টিন, নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। শিবচর উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদী বেষ্টিত সন্নাস্যিরচর, বহেরাতলা, সিরুয়াইল ইউনিয়নের চারটি স্থানে ৬.৩০ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ীভাবে নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ ও ১৫.৫০০ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করা হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত জেলার চারটি উপজেলার এক হাজার চারশত পঞ্চাশ জন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ঢাকায় পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত অনুমোদন হয়ে আসেনি। তালিকা অনুমোদন হয়ে আসলেই ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হবে। আশাকরি শিগগিরই অনুমোদন হয়ে আসবে।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধের জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীতে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৫৫৫ বস্তা বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফালানো হয়েছে। মাদারীপুর সদর, রাজৈর ও কালকিনি উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদীসহ অন্যান্য নদীর ৩৪.৪১৭ কি.মি ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩শ’ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আশাকরি প্রকল্পটি দ্রুত সময়ে অনুমোদন হবে। এছাড়াও মাদারীপুর শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য আলাদাভাবে একশ’ পঞ্চাশ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আড়িয়াল খাঁ নদী তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং’ শীর্ষক প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। তিনশ’ চুরানব্বই কোটি সাতচল্লিশ লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তাবায়িত হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জেলায় নদী ভাঙন অনেকাংশে কমে যাবে। মানুষ ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন