গোল্ডেন মনিরের অবৈধ অর্থ-সম্পদের উৎস ও এর পেছনের পৃষ্ঠপোষকদের সন্ধানে তদন্তে নেমেছে একাধিক সংস্থা। রিমান্ডে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অবৈধ অর্থ-সম্পদের উৎস, চোরাচালান ও এর পেছনের পৃষ্ঠপোষকদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন মনির। তার দেয়া তথ্য খতিয়ে দেখছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। অন্যদিকে মনিরুল ইসলাম ওরফে গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে বাড্ডা থানার তিনটি মামলা ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। ডিএমপি (ডিসি) মিডিয়া ওয়ালিদ হোসেন মঙ্গলবার এ তথ্য জানান। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম জানান, মঙ্গলবার বিকেলে মামলা তিনটি আমরা গ্রহণ করেছি। আসামি গোল্ডেন মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড্ডা থানা হেফাজত থেকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে। গ্রেফতারের পর মাদক, অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ড চলছে গোল্ডেন মনিরের।
জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে এক মুহূর্তের জন্যও বিচলিত হননি মনির। পুরো সময় ধরেই ছিলেন খুবই আত্মবিশ্বাসী। তবে রিমান্ডে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার সম্পর্কে জানা গেছে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। এক দিনে নয়, ধীরে ধীরে এই অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। আর বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া সোনা ও স্বর্ণালঙ্কারগুলো আত্মীয়স্বজনরা তার কাছে গচ্ছিত রেখেছিল বলে জানান মনির। এছাড়া তার গাড়ির ব্যবসার ক্রেতা ছিলেন এমপি, মন্ত্রী, পুলিশ, আমলা, সচিব ও বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই দাবি মনিরের।
ওই সূত্র জানায়, রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে তার যত অর্থসম্পদ, যা কিছু আছে সবকিছুর ট্যাক্স ফাইলে ট্যাক্স দেয়া আছে। সে মূলত সব সাদা বানিয়ে রেখেছে।
মনিরের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া মাদকের বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেক কর্মকর্তা বলেন, মাদকের বিষয়ে মনির বলেছে “আমি কখনো মাদক নিইনি। সিগারেট খাই না। দিনে এক কাপ চা খাই। আপনারা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডোপ টেস্ট করতে পারেন”। আর সেলসম্যান থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়ার বিষয়ে বলেছেন, ধীরে ধীরে ব্যবসা করে সম্পদ গড়েছেন। তার গাড়ির ব্যবসা রয়েছে। পাশাপাশি স্বর্ণ চোরাচালনসহ বেশ কিছু বিষয়ে মনিরের দেয়া তথ্য থতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, মনিরের অন্যান্য সহযোগীর বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদকসহ একাধিক সংস্থা। এতে তার সহযোগী প্রভাবশালীরা আতঙ্কে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে মনিরের দুই সহযোগী গত শনিবার থেকেই লাপাত্তা। তাদের স্বজনদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে র্যাব কর্মকর্তারা বলেছেন, মনির হোসেন এক দিনে ‘গোল্ডেন মনির’ হয়ে ওঠেননি। তিনি মূলত একজন সুবিধাবাদী। শীর্ষপর্যায়ের কয়েকজন নেতা, রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার এ উত্থানের পেছনে যারা জড়িত ও সহায়তা করেছেন তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে। এছাড়া মনিরের সহযোগীদেরও শনাক্ত করা হয়েছে। এর আগে গত রোববার (২২ নভেম্বর) ৩টি মামলার বিপরীতে ৭ দিন করে ২১ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়েছিল পুলিশ। পরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আবু বক্কর সিদ্দিক শুনানি শেষে তার ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদুর রহমান মাদক মামলায় ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে দুই মামলার রিমান্ড একইসঙ্গে কার্যকর হবে। গত শুক্রবার (২০ নভেম্বর) রাত ১০টা থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোল্ডেন মনিরের বাসায় অভিযান শুরু হয়, যে অভিযান সমাপ্ত হয় পরদিন শনিবার (২১ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায়। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গোল্ডেন মনিরের বাড়িতে র্যাবের এই অভিযান চালানো হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন