শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিলবোর্ড অপসারণে মেয়রদের সফল হতে হবে

প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রাজধানীতে যত্রতত্র অনুমোদনহীন বিলবোর্ড, ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের আত্মপ্রচারের এই সংস্কৃতি নগরের সৌন্দর্যে যেমন বিঘœ ঘটাচ্ছে, তেমনি জঞ্জালের নগরেও পরিণত করছে। রাজনৈতিক দল ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেরও বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন ঝুলতে দেখা যায়। অনেক সময় এগুলো বিপজ্জনকও হয়ে উঠে। আমরা দেখেছি, ঝড়-তুফানে বিশাল আকৃতির বিলবোর্ড মানুষের মাথার উপর পড়েছে। মানুষ হতাহত হয়েছে। গুলশান ও শাহবাগে এমন ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র, বিশেষ করে উত্তরের মেয়র আনিসুল হক নির্বাচিত হওয়ার আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এসব অনুমোদনহীন বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণের উদ্যোগ নেবেন। নির্বাচিত হয়ে তিনি এ কাজটি করেছেন। কয়েক হাজার বিলবোর্ড অপসারণ করেছেন। তারপরও বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ঝুলানো থেমে নেই। এসবের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের। এগুলো অপসারণ করা যেন সিটি করপোরেশনের বাড়তি একটি কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থও হতে হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করেই বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ঝুলানো অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সংস্থা পুনরায় আদালতের শরণাপন্ন হয়ে নির্দেশনা চেয়েছে। আদালত দুই সিটি করপোরেশনকে অনুমোদনহীন বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছে। গত শুক্রবার ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক সংবাদ সম্মেলন করে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, যারা অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, দেয়াল লিখন ও তোরণ নিজ দায়িত্বে সরিয়ে না নেবে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পৃথিবীর খুব কম দেশই আছে, যেখানে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন এবং তোরণ নির্মাণের ফলে রাজধানীর সৌন্দর্য ব্যাহত হয়। তা দৃষ্টিকে বাধাগ্রস্ত ও সীমাবদ্ধ করে ফেলে এবং জঞ্জালের নগরীতে পরিণত করে। এক সময় দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার ও বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে কাপড়ের ব্যানার ঝুলতে দেখা যেত। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে সেগুলো পরিবর্তিত হয়ে এখন ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে। এসব ডিজিটাল প্রচারণার উপকরণগুলো সহজে পচনশীল নয়। ফলে এগুলো শুধু রাজধানীর সৌন্দর্যই বিনষ্ট করছে না, নালা-নর্দমায় পড়ে পানিবদ্ধতাও সৃষ্টি করছে। অনুমোদনহীন প্রচার উপকরণের সাথে যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাই বেশি জড়িত সুতরাং তা অপসারণে অনেকেরই সাহস হয় না। তবে আশার কথা, ঢাকার দুই মেয়রই ক্ষমতাসীন দলের। তারা এসব প্রচার উপকরণ সরানোর কথা বলেছেন এবং কিছু কাজ করেছেন। এক্ষেত্রে উত্তরের মেয়রের কার্যকর ভূমিকা দেখা গেছে। তিনি অনেক অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন সরিয়েছেন। তিনি এমন কিছু দুঃসাহসী কাজও করেছেন, যা কখনো কেউ করতে সাহস করেনি। সুদীর্ঘকালের অবৈধ দখলকৃত তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সশরীরে হাজির থেকে তিনি উচ্ছেদ করেছেন। গাবতলী-আমিনবাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে যানজট দূর করেছেন। এগুলো অবশ্যই তার দৃঢ় মনোভাবের কারণে হয়েছে এবং নগরবাসী তার সুফল কিছুটা হলেও বা পাচ্ছে। অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণের ক্ষেত্রে তিনি বরাবরই সোচ্চার। নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাজধানীকে গ্রীণ সিটিতে পরিণত করবেন। তার এই প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনুমোদনহীন বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন অন্যতম বাধা। এগুলো নগরীর সবুজ বৃক্ষরাজি শুধু ঢেকেই ফেলছে না, ক্ষতিও করছে। বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণে তিনি পুরোপুরি সফল না হলেও অনেক দূর সফল হয়েছেন। তাকে সফল হতেই হবে। কারণ তিনি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন আগামী দুই বছরের মধ্যে ঢাকাকে গ্রিণ সিটিতে পরিণত করবেন। এ তুলনায় ঢাকা দক্ষিণের মেয়র কিছুটা হলেও পিছিয়ে আছেন। অবৈধভাবে ফুটপাত-রাস্তা দখল করা দোকানপাট উচ্ছেদ করতে গিয়েও পারেননি। অনেক ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তবে বেশ কিছু বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছেন। এই উচ্ছেদ আশানুরূপ না হলেও আশা করা যায় তিনি অধিক কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। চট্টগ্রামের মেয়র অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন উচ্ছেদে বেশ সফল হয়েছেন বলে বলা যায়।
মনে রাখা দরকার, যে কোনো মেয়রের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে নগরবাসীর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। রাজধানীর মেয়রদ্বয় নির্বাচিত হওয়ার আগে অসংখ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নগরবাসী এসব প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা রেখেই তাদের নির্বাচিত করেছে। তাদের নির্বাচিত করেছে এ কারণেই যে, সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারলেও অন্তত যানজট ও পানিবদ্ধতা নিরসন এবং সড়কগুলো সবসময় চলাচলের উপযোগী থাকবে। এছাড়া যত্রতত্র জমে থাকা আবর্জনা অপসারিত হবে এবং ডাস্টবিনগুলো যথাযথ স্থানে স্থাপন করা হবে। নগরবাসীর এ প্রত্যাশা এখনও পূরণ করা সম্ভব হয়নি। বরং সমস্যাগুলো আগের মতোই প্রকট হয়ে রয়েছে। আমরা আশা করব, বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণে মেয়রদ্বয় যেমন পূর্ণ সফল হবেন তেমনি, উল্লেখিত সমস্যাগুলোর নিরসনেও অধিক তৎপর হবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন