শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

সড়ক-মহাসড়ক দখলমুক্ত রাখতে হবে

প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সড়ক-মহাসড়ক দখল, তার আশপাশে দোকানপাট নির্মাণ, বাজারঘাট স্থাপন নিষিদ্ধ হলেও দেশের এমন কোনো সড়ক-মহাসড়ক খুঁজে বের করা যাবে না, যার অংশবিশেষ দখল হয়ে যায়নি কিংবা তার দু’পাশে দোকানপাট বা বাজারঘাট স্থাপন করা হয়নি। এই অবৈধ দখলের ফলে একদিকে যেমন যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, অহেতুক যানজট সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে ঘটছে দুর্ঘটনা যাতে মানুষ হতাহত হচ্ছে। সড়ক-মহাসড়ক দখলমুক্ত করাসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার তাকিদ লাগাতার উচ্চারিত হলেও পরিস্থিতির এতটুকু পরিবর্তন আজ পর্যন্ত হয়নি। কখনো কখনো দখল উচ্ছেদে অভিযান পরিচালিত হলেও তার স্থায়ী সুফল পাওয়া যায়নি। অভিযানে হয়তো সড়ক-মহাসড়ক থেকে অবৈধ ট্রাক বা যানবাহনের স্ট্যান্ড সরিয়ে দেয়া হলো, দোকানপাট ভেঙ্গে দেয়া হলো, বাজারঘাট উচ্ছেদ করা হলো; কিন্তু এই অপসারণ-উচ্ছেদ ২৪ ঘণ্টাও স্থায়ী। নতুন করে রাস্তা দখলে চলে যায়, নতুন করে দোকান বা বাজার গড়ে ওঠে। এই খেলা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এই দখল-পুনঃদখলে রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ামক হিসাবে কাজ করে। সড়ক-মহাসড়কের ওপর যানবাহন রাখা, স্ট্যান্ড বানানো, আশপাশে দোকান তোলা কিংবা বাজার বসানোর ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষে দখল-উচ্ছেদ সহজ হয় না। অভিযান চালাতে বাধার সম্মুখীন হতে হয় এবং নামকাওয়াস্তে উচ্ছেদ সম্পন্ন হলেও পরপরই তা পুনঃদখল হয়ে যায়। সব ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা।
দখলকারীরা কতটা নিশ্চিত-নির্ভয় ও বেপরোয়া তার একটি উল্লেখযোগ্য নজির মেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ি-কাঁচপুর আটলেন দখলের ঘটনায়। গত ১৩ আগস্ট এই আটলেন মহাসড়ক-অংশটি উদ্বোধন করা হয়। সাত দিন যেতে না যেতেই এই অংশের কয়েকটি জায়গায় একদিকের চারলেনের দু’লেন দখল হয়ে গেছে। ওই দু’লেনে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল ও সাইনবোর্ড এলাকার দু’পাশেই অবৈধ দোকানাট তোলা হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, আটলেন উদ্বোধনের আগে অবৈধ দখলমুক্ত করাসহ স্থাপনা ও দোকানপাট সরিয়ে দেয়া হয়। আশা করা গিয়েছিল, এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু সবকিছু আগের মতো হয়ে গেছে। রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের রুখতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ও স্থানে অবৈধ গাড়ি পার্কিং, দোকানপাট ও বাজারঘাট বিদ্যমান রয়েছে। এ কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করা সম্ভব হয় না। প্রায়শই যানজট সৃষ্টি হয়, যাতায়াতে অতিরিক্ত সময় লাগে এবং দুর্ঘটনাও ঘটে। একই কথা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই দু’টি মহাসড়কই চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। অথচ চারলেনের সুবিধা যাত্রী ও যানবাহনগুলো ভোগ করতে পারছে না। দুই লেনের সড়ক-মহাসড়কগুলোর অবস্থা কতটা শোচনীয় হতে পারে, সহজেই অনুমেয়। প্রশ্ন হলো, জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ করে সড়ক-মহসড়ক চারলেন-আটলেনে উন্নীত করে কিংবা সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়নে কাড়িকাড়ি টাকা ব্যয় করে তাহলে লাভ কী? অনেকেরই জানা, যানবাহন মালিকদের ওপর, উচ্চ ট্যাক্স বসানো হয়েছে। তাদেরই বা লাভ কী? যাত্রী, যানবাহন মালিক, ব্যবসায়ী কারোরই প্রত্যাশিত বা বাড়তি সুবিধা হচ্ছে না। দখলদারদের কারণে সবাই সুবিধাবঞ্চিত হবেÑ এ অবস্থা চলতে পারে না।
সড়ক-মহাসড়ক দখলমুক্ত, যাতায়াত উপযোগী ও মসৃণ রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ইতোপূর্বে বহুবার কর্তৃপক্ষীয় তরফে সড়ক-মহাসড়ক দখলমুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী স্বয়ং অনেকবার সড়ক-মহাসড়ক দখলমুক্ত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। হুমকি-হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন। এসবে কাজের কাজ কিছু হয়নি। সহসা হবে এমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। স্বল্প ব্যবধানে চোখের সামনে যখন যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর আটলেন দখল হয়ে যায় তখন হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। হয় কর্তৃপক্ষ অপারগ আর না হয় তার আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে, শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তেই আসতে হয়। এ অবস্থা কোনো বিবেচনাতেই মেনে নেয়া যায় না। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ এবং যানবাহন মালিকদের দেয়া ট্যাক্সের টাকা এভাবে অফলা হয়ে থাকবে, তারা পথে পথে বাধা ও বিড়ম্বনার শিকার হবে, তা হতে পারে না। অবশ্যই কর্তৃপক্ষকে সড়ক-মহাসড়ক দখলমুক্ত, নিরাপদ ও মসৃণ করতে হবে। দখলদারদের, তা তারা যত প্রভাবশালী হোক, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক, হটিয়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে, দখল উচ্ছেদে লাগাতার অভিযানে নামবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। যে কোনো মূল্যে সড়ক-মহাসড়ক দখলমুক্ত রাখতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন