সারাদেশে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে। সড়কের এসব সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কিছু সেতু মেরামত করে সাময়িক যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো নিয়মিত তদারকির বাইরে থাকে। সেতুগুলো মেয়াদ পূর্তির আগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ বাড়তি ওজনের যানবাহন চলাচল। এ ব্যাপারে ট্রাফিক বা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে। ঢাকা শহরে রাস্তা পারাপারে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে নির্মাণ করা হয়েছিল পদচারী-সেতু। তারও কোনো কোনোটি এখন ঝুঁকিতে পড়েছে। ধরা পড়েছে নির্মাণ ত্রুটি। কেঁপে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। তিস্তা রেল সেতু যা মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে ২১ বছর। কিন্তু সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচল বন্ধ হয়নি। এই সেতু দিয়ে এখনো চরম ঝুঁকি নিয়ে আগের মতো চলাচল করছে রেলগাড়ি।
পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের সঙ্গে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের রেল যোগাযোগের জন্য তিস্তা রেল সেতু নির্মিত হয়েছিল ১৮৯৯ সালে। বর্তমানে এ সেতুর বয়স ১২১ বছর। নির্মাণের সময় সেতুটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল ১০০ বছর। এর একাংশ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা এবং অপর অংশ পড়েছে লালমনিরহাট সদর উপজেলায়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সেতুটিতে মিত্রবাহিনীর বোমায় একটি গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ১৯৭২ সালে সেতুটি পুনরায় চালু করা হয়। ১৯৭৮ সালে ট্রেনের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ শুরু করা হয়। তখন থেকে সেতু দিয়ে ট্রেন ও যাত্রীবাহী বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। এভাবে ক্রমেই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে থাকে। সড়ক সেতু চালু হওয়ার পর মেয়াদোত্তীর্ণ রেল সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হলেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দ্রুত সংস্কার করতে হবে। অতিরিক্ত ওজনের যান চলাচল রোধে কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।
দেশের সড়ক যোগাযোগের এমন অবস্থায় সওজের অধীন ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকা প্রণয়নের সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। তবে উদ্যোগটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এক বছর ধরে ঝুলে থাকা সত্যিই দুঃখজনক। সারা দেশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে চার হাজার ৪০৪টি সেতু। এর মধ্যে বেইলি সেতু ৮৫৬টি। আর ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর মধ্যে বিশেষ করে বেইলি সেতুর সংখ্যাই বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকা করা শুধু জনগুরুত্বপূর্ণই নয়, বিষয়টির সাথে মানুষের জানমালের সম্পর্ক রয়েছে। সওজের কাছে আমাদের আহ্বান, জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি যেন আর ঝুলিয়ে রাখা না হয়।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন