সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও মানসিক সমস্যা

| প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৮ এএম

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। নতুন এই শারীরিক রোগ আমাদের জীবনের সব দিকে প্রভাব ফেলতে পারে। আপনার সম্পর্ক, কাজকর্ম, ধর্মবিশ্বাস এবং আপনার সামাজিক মেলামেশা সবই প্রভাবিত হতে পারে। কঠিন অসুখ আপনাকে বিষন্ন, চিন্তিত, ভীত বা ক্রুদ্ধ করে তুলতে পারে। আর সমাজে ‘সাইকোলজিক্যাল ডিজরাপশন’ বাড়ছে। বিশেষ করে মানুষের মধ্যে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ভয়, কাছের মানুষের সংক্রমণের আশঙ্কা, মৃত্যুশঙ্কা, জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত রোগী, ঘরবন্দী মানুষ এবং জরুরি প্রয়োজনে যেসব পেশাজীবী ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন তারা সবচেয়ে বেশি মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন।

করোনার কারণে মানুষ বাধ্য হয়ে একে অন্যের কাছ থেকে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছেন। এর প্রভাব পড়ছে মানসিক স্বাস্থ্যেও। বেশি চাপে পড়ছেন শিশু, বয়স্ক আর নারীরা। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে অজানা নতুন করোনা ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। কোন প্রতিষেধক ও ওষুধ না থাকায় এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দেয়া হয় সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার উপর, সমস্যা হল মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে শারীরিক সংস্পর্শেও প্রয়োজন রয়েছে। কেননা স্পর্শ শরীরে বিভিন্ন হরমনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, যা প্রয়োজনীয় অনুভূতির জন্ম দেয় ও মানসিক চাপমুক্তি ঘটায়। ইতিবাচক স্পর্শে মানুষের শরীরে ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন নামের হরমন নিঃসরণ বাড়ায় এবং করটিজল নিঃসরণ কমায়, যার ফলে ইতিবাচক অনুভূতি সৃষ্টি হয়। অনুপ্রেরণা, সন্তুষ্টি, নিরাপত্তা, মানসিক চাপমুক্তি ইত্যাদি। দীর্ঘদিন সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা মানসিক দূরত্ব তৈরি করতে পারে। শিশুর সম্মিলিত বিকাশ বাধাগ্রস্থ হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে পারে এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। এর ফলে শিশু এবং বয়স্করা সবচেয়ে বিপদাপন্ন এবং নিরাপত্তাহীনতায় থাকে। বয়স্করা এই পরিস্থিতিতে শিশুর মতো অবুঝ আচরণ করতে পারেন। শিশুরা খিটখিটে বা অস্থির হয়ে উঠতে পারে। তাদের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে।

এই সময়ের নারীদের স্বাস্থ্যের দিকেও বিশেষ নজর রাখতে হবে। নারীর মাসিক পূর্ব বিষন্নতা, প্রসব উত্তর বিষন্নতা, পঞ্চাশোর্ধ নারীদের মাসিক পরবর্তী উপসর্গ বা বিষন্নতা, হরমোনে ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিশেষ মনযোগের দাবি রাখে। তাদের প্রয়োজনগুলোকে অগ্রাধিকার দিন। সংবেদনশীল আচরণ করুন এবং সহযোগিতা করুন। নারীর প্রতি সব সহিংসতা পরিহার করুন। মানসিক চাপ দূর করতে বাগান করা এবং পোষা পশু-পাখির আদর-যত্ন, নিয়মিত ঘুম, খাবার গ্রহণ, শরীর চর্চা, ভার্চুয়ালি সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা, সুস্থ বিনোদন , এমনকি রান্নাও মানসিক চাপ কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

মানসিক রোগ নিয়ে অজ্ঞতা, অসচেতনতা আর কুসংস্কারের ফলে মানসিক রোগ বলে কোনো কিছুর অস্তিত্বই স্বীকার করতে চান না অনেকে। গায়েবি আওয়াজ শোনা, ভ্রান্ত কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাস, অহেতুক সন্দেহ, আচার-আচরণ বা কথাবার্তার অস্বাভাবিক পরিবর্তন, কনভার্সন ডিসঅর্ডার (যা হিস্টিরিয়া বা মূর্ছারোগ নামেই বেশি পরিচিত)-এর উপসর্গগুলোকে জিন-ভূতের আছর, জাদু-টোনা-তাবিজ-আলগা বাতাসের প্রভাব বলেই বিশ্বাস করেন অনেকে। আত্মীয়স্বজন এসব সমস্যায় আক্রান্ত হলে তারা চিকিৎসাও করান তেল-পড়া, পানি-পড়া, তাবিজ, ঝাড়-ফুঁক, ‘শিকল থেরাপি’ ইত্যাদির মাধ্যমে। অনেকের কাছে মানসিক রোগের উপসর্গগুলো বয়সের দোষ, বিয়ের জন্য টালবাহানা, ঢং বা ভং ধরা। চিকিৎসার ব্যাপারে এদের বিশ্বাস- ‘মাইরের উপর ওষুধ নাই।’ কখনো কখনো শারীরিক উপসর্গ যে মানসিক রোগের কারণে হতে পারে- তাও অনেকে মানতে চান না। ফলে, মানসিক সমস্যার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে শারীরিক উপসর্গ নিয়েই ব্যতিব্যস্ত থাকেন তারা।

কুসংস্কার ও অজ্ঞতার বেড়াজাল ডিঙিয়ে যারা মানসিক রোগ চিকিৎসার আওতায় আসেন, তাদেরও বড় একটা অংশ ওষুধ নিয়ে নানান বিভ্রান্তিতে সঠিক চিকিৎসা করান না। পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে মানসিক রোগ চিকিৎসার আধুনিক ওষুধ আবিষ্কৃত হয়। এর পর সময়ের গতির সঙ্গে মানসিক রোগ চিকিৎসারও অগ্রগতি সাধিত হয়, আবিষ্কৃত হয় নতুন নতুন ওষুধ, সেসব ওষুধের সফল প্রয়োগ মানসিক রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কিন্তু আমাদের দেশে মানসিক রোগের ওষুধ সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এখনো বিদ্যমান।

★হোমিওসমাধান ঃ মানসিকভাবে সুস্থতার মানে কি আবেগ-অনুভূতির শূণ্যতা ? মানসিক রোগীর জন্য প্রাথমিক ভাবে যেইসব মেডিসিন লক্ষণের উপর আসতে পারে-নাক্স ভুমিকা, থুজা, সালফার, অরাম মেট, প্লাটিনা, পালসেটিলা, স্ট্র্যামোনিয়াম, ভিরেট্রাম, ইগ্নেসিয়া, নেট্রাম মিউর, এসিড ফস, ল্যাকেসিস, চায়না, বিউফো রানা, ককুলাস ইন্ডিকা, ব্যারাইটা মিউর সহ আরো অনেক মেডিসিন আসতে পারে।

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
ইমেইল: drmazed689@gmail.com
মোবাইল: ০১৮২২৮৬৯৩৮৯।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন