পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম হলো এক ধরনের জৈব রাসায়নিক সমস্যা। বিপাকজনিত ও হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে একজন নারীর শরীরে কিছু পরিবর্তন এবং ওভারিতে বিশেষ ধরনের কিছু সিষ্ট তৈরী হয় যাকে বলা হয় পলিস্টিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বা সংক্ষেপে পিসিওএস।
কারা ঝুঁকিতে আছে
এটি ২৭% বালিকা ও মহিলাদের প্রজননক্ষম সময়ে হতে পারে। বিশেষ করে যাদের মাসিক শুরু হয়েছে তাদের এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। সাধারণত ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সের নারীদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি।
কারন
১. জিনগত কারণ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ইনসুলিন বিরোধিতা, শরীরে উচ্চমাত্রায় প্রদাহ
২. স্থুলতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, বাইরের জাঙ্ক ফুড গ্রহণ
৩. অতিরিক্ত মানসিক চাপ ইত্যাদি এ রোগের জন্য অনেকাংশে দায়ী।
লক্ষণ
১. অনিয়মিত মাসিক বা মাসিক বন্ধ থাকা, মাসিক চলাকালিন পেটে তীব্র ব্যাথা হওয়া
২. গর্ভধারণে সমস্যা বা বন্ধ্যত্ব, গর্ভপাত
৩. মুখে ব্রণ এবং মুখ, গলা, বুক ও পেটে অতিরিক্ত লোম, শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে কালো ছোপ ছোপ দাগ
৪. মাথার চুল পড়ে যাওয়া
৫. দৈহিক ওজন বৃদ্ধি হওয়া
৬. শারীরিক ও মানসিক দূর্বলতা, রক্তের গ্লুকোজ কিছুটা বেড়ে যাওয়া এবং কোলেষ্টেরল অস্বাভাবিক থাকা ইত্যাদি।
রোগ নির্ণয়
১. পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম
২. সিরাম টেস্টোস্টেরন, এফএসএইচ
৩. ওজিটিটি, সিরাম লিপিড প্রফাইল।
চিকিৎসা
পিসিওএস আক্রান্ত নারীদের অধিকাংশই এ সমস্যার শারীরিক লক্ষণগুলো খুব দ্রুত বুঝতে পারেন না। তবে রোগ নির্ণয় করার পর চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ডায়েট এবং স্ত্রী হরমোন ও ডায়াবেটিসের ঔষধ সেবন করলে দ্রুত এ রোগ হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
প্রতিকার
১. নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে
২. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে
৩. হতাশা, দুশ্চিন্তা হতে দূরে থাকতে হবে
৪. পরিমিত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে
৫. বাইরের খাবার গ্রহণকে ত্যাগ করতে হবে
৬. প্রচুর পানি পান করতে হবে
৭. চা, কফি কম খেতে হবে
৮. ধুমপানের অভ্যাস ছাড়তে হবে।
খাদ্যাভ্যাস
নিয়মিত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন করতে হবে। অধিক প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
১। উচ্চ আমিষযুক্ত খাবার এ রোগের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এ জন্য বিভিন্ন ধরনের ডাল, বাদাম, ডিম, মুরগীর বুকের মাংস, সামুদ্রিক মাছ, দুধ, সয়ামিল্ক, মাশরুম, বীট, অ্যাভাকাডো ইত্যাদি উচ্চ আমিষযুক্ত খাবার বেশ উপকারী।
২। জটিল ও অপরিশোধিত শর্করা পিসিওএস রোগীদের জন্য ভালো। এ সব খাবারে শর্করার পরিমান কম থাকে, আঁশ বেশী থাকে। এ ধরনের খাবারের মধ্যে লাল চাল, ছোলা, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, শজানে, মুলাশাক, কুমড়া শাক, ডাঁটাশাক, কলমিশাক, আমড়া, আমলকী, আপেল, কাঁঠাল, পেয়ারা, পাকা আম ইত্যাদি।
৩। ভিটামিন বি-১২ পিসিও এস রোগীদের প্রজনন ক্ষমতা ধরে রাখে। ভিটামিন বি-১২ মুলত প্রানীজ খাবারে পাওয়া যায়। এছাড়া ভিটামিন-সি, ই, ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে।
ডাঃ মোঃ হুমায়ুন কবীর
কনসালট্যান্ট, রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
৮৯, নিমতলী সিটি করর্পোরেশন মার্কেট, চাঁনখারপুল, ঢাকা-১০০০।
মোবাইলঃ ০১৭১৭৪৬১৪৫০,০১৯১২৭৯২৮৯৪
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন