মাদারীপুর খাদ্য বিভাগের ভর্তুকি মূল্যে ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) আটা বিক্রিতে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। খাদ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, গত জুন মাস থেকে সরকার মাদারীপুর পৌরসভায় ২৩ ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫ মেট্রিক টন আটা বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী ২৩ জনের মধ্যে প্রতিদিন ১১ বা ১২ জন ডিলারকে ৫ টন আটা সমহারে নির্ধারিত মিল থেকে বরাদ্ধ দেয়া হয়।
২৩ ডিলার এক দিন পর ১ দিন ৯ বস্তায় ৪৫০ কেজি ওএমএসের আটা নির্ধারিত মিল থেকে উত্তোলন করে খুচরা বাজারে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে বিতরণ করার কথা। ওএমএসের আটা বিক্রয়ে নির্ধারিত ডিলারের দোকানে লাল সালু কাপড়ে মূল্যসহ পরিমাণ লিপিবদ্ধ করে খাদ্য বিভাগের একজন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বিক্রয় বা বিতরণ করার বিধান রয়েছে।
গতকাল মাদারীপুর পৌরসভার কয়েকটি ডিলারের দোকানে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ডিলার বা বিক্রয় কেন্দ্রে কোন নিয়ম পালন করা হচ্ছে না। প্রত্যেক ডিলার ৯ বস্তায় ৪৫০ কেজির স্থলে ৫ (পাঁচ) বস্তায় ২৫০ কেজি আটা বিক্রি করছে। অনেক ক্রেতা আটা না পেয়ে ফেরৎ যাচ্ছে। প্রত্যেক ডিলারের দোকানে একজন করে তদারকি কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও কোন দোকানেই তদারকি কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। পৌরসভা কিচেন মার্কেটের একজন ডিলারের কর্মচারীকে দেখা গেছে আটা বিতরণের পর মাস্টার রোলে একটি শিশুকে দিয়ে টিপ নিচ্ছে।
বাজারে আটার মূল্য ৩০ থেকে ৩২ টাকা। বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ১৮ টাকা কেজি দরে খোলা বাজারে নিম্ন আয়ের জনসাধারণের মাঝে আটা বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের এই প্রচেষ্টা ও সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সরকারি খাদ্য বিভাগ ও মিলারের সহযোগিতায় ওএমএস ডিলাররা দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৫ মাসে প্রতিদিন ৫ টন হিসাবে ওএমএস আটা বিক্রয়ের কথা থাকলেও খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ২৫০০ কেজি বা সর্বোচ্চ ২৭০০ কেজি বা পৌনে তিন টন। সে হিসাবে প্রতিদিন সোয়া ২ টন করে আটা অতিরিক্ত দামে কালোবাজারে বিক্রি করে মিলার, ডিলার ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করছে।
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সেফাউর রহমানকে বার বার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে গেলে সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিষ্ণুপদ মজুমদার জানান, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দুই জেলার দায়িত্বে আছেন। ওএমএসের ডিলারদের ৯ বস্তা আটা বিক্রয়ের জন্য দেয়া হয়। ডিলারদের ৫ বস্তা বিক্রয়ের ব্যাপারে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তাকে নিয়ে এক ডিলারের দোকান পরিদর্শনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন