মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

একযুগ পরে বরিশালের দূর্গাসাগর আবার পাখির কল কাকলীতে মুখরিত

পর্যটন করপোরেশন বিশ্রামাগার ও পিকনিক স্পট তৈরী করবে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:০৯ পিএম

দীর্ঘ একযুগেরও পরে বরিশালের দূর্গাসগর দীঘি আবার পাখির কল কাকলিতে মুখরিত। দেশ বিদেশের পরিযায়ী পাখিরা ডানা মেলছে ৫০ একর এলাকার বিশাল দূর্গাসাগর দীঘি ও এর সন্নিহিত গ্রামগুলোতে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পর্যটকদের কাছে তাই এবার দূর্গাসাগর এলাকা ভিন্ন আকর্শনের পর্যটন কেন্দ্র। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে পাখির কলকাকলি উপভোগ করতে প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো দূর্গাসাগর দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে। যদিও গত এক যুগেরও বেশি সময় এমন দৃশ্য দেখেননি স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকগন।
১৭৮০ সালে বাকলাÑচন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের পঞ্চদশ রাজা শিবনারায়নের মৃতুুর পরে তার পুত্রেরও অকাল মৃত্যু ঘটায় রানী দূর্গাবতি রাজত্ব গ্রহন করে এলাকাবাশীর পানির কষ্ট দুর করতে খনন করা দুর্গাসাগর দিঘিটি খনন করেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পুণঃ খনন ও সংস্কারকালে বিশাল ঐ দীঘির মাঝে একটি দ্বীপ সৃষ্টি করে বনায়ন করা হয়। ফলে তা অতিথি পাখীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিনত হয়। আর পাখিদের ধর্মনুযায়ী একবার যেখানে নিরাপদ আশ্রয় খুজে পায়, প্রতিবছরই নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে তারা আশ্রয় নেয়। ফলে প্রতিবছর শীতে পাখ পাখালীর কলকাকলীতে মুখরিত থাকত দূর্গাসগর এলাকা।
কিন্তু ২০০৭-এর ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভয়াল রাতে প্রায় সোয়া ২শ কিলোমিটার বেগের ঝড়ে দূর্গাসাগরের মাঝ দ্বীপে বিপুল সংখ্যক পাখির মৃত্যু ঘটে। ফলে ঝড়ের ঐ তান্ডবের পর থেকে দূর্গাসগরের পটভ’মির পরিবর্তন ঘটে। ফলে পরের বছর থেকে পরিযায়ী পাখিদের আগমন বন্ধ হয়ে। পাশাপাশি বরিশাল বিমান বন্দরে অবতরন সময় কোন কোন উড়জাহাজ এ দীঘির ওপরে চলে আসায়ও বিকট শব্দের কারনে পাখিদের বিরক্তি ও ভীতির সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ কারনেও এখানে পাখিদের বিচরন বন্ধ হয়ে যায় বলেও মনে করছেন কিছু কিছু পরিবেশবীদ।
তবে এসব কিছু কাটিয়েও এবার দূর্গাসগরে অতিথি পাখিদের আগমনে খুশি এলাকাবাশী সহ বরিশালের প্রশাসন। জেলা প্রশাসন থেকে ইতোমধ্যে পরিযায়ী পাখীদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এ দীঘির পাড়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগান হয়েছে। খাবারের চাহিদা মেটাতে দীঘিতে বিভিন্ন রঙের শাপলা ছাড়াও পদ্মফুলের আবাদ করা হয়েছে। এসব শাপলা ও পদ্মফুল আগত পর্যটকদের আকর্ষন করার পাশাপাশি তার শালুক পাখিদের খাবারের চাহিদাও মেটাচ্ছে। এছাড়াও দিঘিটিতে প্রচুর পরিমানের শামুক ছাড়া হয়েছে। যা পাখিদের খাবারের একটি অন্যতম উৎস। দিঘির যে প্রান্তে পাখির বিচরন আধিক্য রয়েছে, সেখানে মানুষের যাতায়াত সিমিত করা হয়েছে। গাছে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে হাড়ি। যাতে শুধু বিদেশী পাখিই নয়, নানা প্রজাতির দেশী পাখিও এখানে আশ্রয়ে সাচ্ছন্দ বোধ করে।
তবে স্থানীয় কিছু বখাটের উৎপাত এবং বিশ্রামাগার ও অপর্যাপ্ত শৌচাগারের কারনে দূর্গাসাগরের প্রকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে আসা পর্যটকদের সাচ্ছন্দ নষ্ট করছে। যদিও সম্প্রতি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করায় পরিবেশ কিছুটা নিরাপদ করেছে। এছাড়া দিঘির পাড়ে বসার ব্যবস্থার পাশাপাশি ছাতা এবং শৌচাগার স্থাপন ও নিরাপদ নৌকায় ভ্রমন সহ বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা পর্যটকদের কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান একযুগ পর ফিরে আসা পাখির অবাধ বিচরণ সহ নিরপত্তা নিশ্চিত করতে নানামুখী পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন।
এদিকে পর্যটন করপোরেশন বরিশাল মহানগরী থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দুরে দূর্গাসাগর দীঘির পাড়ে ১৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক বিশ্রামার সহ রেষ্ট্রুরেন্ট ও পিকনিক স্পট গড়ে তুলতে যাচ্ছে। আগামী জানুয়ারীর মধ্যে এ লক্ষে দরপত্র আহবান করে মার্চের মধ্যে প্রকল্পটির অবকাঠামো নির্মান কাজ শুরুর কথা রয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী দূর্গাসাগর দীঘির পূর্বপাড়ে ৩ তলা ভীতের ওপর একটি দোতালা বিশ্রামাগার ভবন নির্মান করে নিচতলায় রেষ্ট্রুরেন্ট ও সুভেনির সপ তৈরী করা হবে। দোতালায় মূল বিশ্রামাগারে থাকবে ৮টি কক্ষ। এছাড়া পূর্ব পাড়ে একটি ঘাটলা ও দক্ষিণ পাড়ে কয়েকটি পিকনিক শেড নির্মান করা হবে বলে জানিয়েছেন পর্যটন করপোরেশনের জিএম-পরিকল্পনা। দীঘিটির পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মান সহ পুরনো দুটি ঘাটলা সংস্কার করা হবে। তবে দীঘিটির পাড়ে একটি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপনের প্রস্তবনা বাদ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
তবে এরপরেও পর্যটন করপোরেশনের এ প্রকল্পটি দূর্গাসাগরকে সবার কাছে আরো আকর্ষনীয় ও মোহনীয় করবে বলে আশা করছে ট্যুর অপারেটরগন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন