লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ৫ বছরে ফেরেনি একই পরিবারের ১৮জনসহ দেড় শতাধিক জেলে। নিখোঁজ জেলেদের বেশির ভাগই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম হওয়ায় পরিবার কাটাচ্ছে মানবেতর জীবন। স্বজনদের দাবি, এতদিনেও খোঁজ দিতে পারেনি প্রশাসন, পাননি ক্ষতিপূরণ। তবে এসব জেলেদের সঠিক কোন তথ্য না থাকলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখে তালিকা তৈরির কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতির সোনালী গ্রামের আমির হোসেন। একটি জরাজীর্ণ ঘরের মধ্যে ছেলে শরীফ হোসেনের ছবি নিয়ে কাঁদছেন। ছেলের কথা মনে করে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ বাবা আমির হোসেন। পরিবারের ১৮ সদস্যকে হারিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যরাও পাগল প্রায়। পাশাপাাশি শিশু সন্তানসহ অন্য সদস্যদের নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন তারা। সরকারিভাবে কোন সহায়তা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
আমির হোসেন জানান, পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হারিয়েছেন মেঘনায়। ২০১৮ সালের ২১ জুলাই মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকাসহ নিখোঁজ হন তারা। একসাথে এতজন উপার্জনক্ষমকে হারিয়ে দুবছরেও উঠে দাঁড়াতে পারেননি স্বজনরা।
এদিকে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হন একই এলাকার আলমগীর মাঝি। স্বামীকে হারিয়ে তিন সন্তান নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছেন নিখোঁজ আলমগীর হোসেন মাঝির স্ত্রী লাকি বেগমের। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন লাকি বেগম। একই অবস্থায় সদর উপজেলার চররমনী মোহন এলাকার মেজর আলী ও আবুল কাশেমসহ শতাধিক নিখোঁজ জেলে পরিবারের। প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগে লক্ষ্মীপুরের জেলে পরিবারগুলো হারাচ্ছে স্বজন।
এ দিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল গনি, হুমায়ন কবির, জসিম উদ্দিন, মোসলেহ উদ্দিন ও পারভেজ খাঁনসহ অনেকেই জানান, জীবিকার টানে প্রাকৃতিক দূযোর্গের মধ্যে মাছ ধরতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রতিবছর নিখোঁজ হন একের পর এক জেলে। জেলের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। গত ৫ বছরে প্রায় দেড় শতাধিক জেলে মেঘনায় মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে পাগল প্রায় এসব পরিবার। সংসারে চলছে মানবেতর জীবন-যাপন।
জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ ছৈয়াল জানান, গত পাঁচ বছরে নিখোঁজ জেলের সংখ্যা দেড়শ’রও বেশি। পরিবারগুলো এখনো অপেক্ষায় প্রিয়জনের ফিরে আসার কিংবা তাদের লাশ পাওয়ার। সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ তাদের।
রামগতি উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল মোমিন জানান, তাদের কাছে নেই নিখোঁজদের কোনো তথ্য। তবে তালিকা তৈরির কাজ শুরু হবে বলে জানান তারা। আর প্রশাসন বলছে, তালিকা পেলে দেয়া হবে ক্ষতিপূরণ। মৎস্য কর্মকর্তাদের হিসাবে জেলার সদর, রামগতি, কমলনগর ও রায়পুর মিলিয়ে মোট জেলের সংখ্যা ৫২ হাজার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন