ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান এমএম নারভানে আগামী সপ্তাহে সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যাচ্ছেন। এ সফরকে ভারত এবং আরও বাস্তববাদী হয়ে ওঠা আরব বিশ্বের মধ্যকার সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় হিসাবে অভিহিত করা হচ্ছে। সউদী আরবে প্রথম ভারতীয় সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল নারভানে এ সফরে সউদী ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজেও বক্তৃতা দেবেন। আমেরিকার ঘনিষ্ঠ সহচর ইসরাইলের সাথে মিত্রতা প্রতিষ্ঠার জন্য আরব বিশ্বে পরিবর্তনের যে হাওয়া বইছে, তার মধ্যেই ভারতীয় সেনা প্রধানের ইসরাইল সফরের খবরটি সামনে আসে।
ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব
আমিরাত সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নিয়েছে। বাহরাইন ও সুদান আমিরাতকে অনুসরণ করেছে এবং ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ইচ্ছুক অন্যান্য আরব দেশগুলোও ফিলিস্তিন সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা প্রথম মুসলিম দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের মর্জিমাফিক পেশ করা মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগলিক বাস্তববাদ এখন বহু আরব দেশকে কাশ্মীরের প্রতি পাকিস্তানের আবেগকে এড়িয়ে ইসরাইলের মিত্র ভারতের সাথেও সম্পর্ক জোরদারের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সউদী আরব ইসরাইলের বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে পরিষ্কার মতামত না দিলেও যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, সউদী ক্রাউন প্রিন্স এবং ইসরাইলি নেতৃবৃন্দ গোপনে তাদের শত্রু ইরানের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা জোরদার করছে এবং ইরান এ অঞ্চলে আমেরিকারও বৃহত্তম শত্রু। ভারত সুন্নি অধ্যুষিত আরব উভয় দেশ এবং শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের উভয়ের সাথে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখলেও উদীয়মান পাকিস্তান-ইরান-তুরস্ক জোটের কারণে ভারত আরও সুস্পষ্ট নীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব এরদোগান ২০১৯ সালের আগস্টে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করায় ভারতের সমালোচনা করে আসছেন এবং ফলস্বরূপ গত এক বছরে ভারত ও তুরস্কের মধ্যে সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়। ইতোমধ্যে পাকিস্তান তার দীর্ঘদিনের মিত্র এবং সাহায্যদাতা সউদী আরবের কাছ থেকে ইদানীং শীতল ব্যবহার পাওয়ায় তুরস্ককেও ক্রমশ আঁকড়ে ধরছে। চীন বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে, বিশেষ করে ইরানের সাথে ৪০ হাজার কোটি ডলারের ২৫ বছর মেয়াদী চুক্তি প্রস্তাবের মাধ্যমে। সেকারণে ভারতীয় সেনাপ্রধান এমএম নারভানের সউদী এবং আমিরাত সফর পাকিস্তান, তুরস্ক এবং ইরানের নজর এড়াবে না।
উল্লেখ্য, সউদী আরব ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং ভারতের প্রয়োজনীয় অপরিশোধিত তেলের প্রায় ১৮ শতাংশ এবং তার এলপিজি প্রয়োজনের প্রায় ৩০ শতাংশ সরবারাহ করে। পাশাপাশি, সউদীতে ভারতীয় প্রবাসীদের বিশাল উপস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক দশক ধরে আরব বিশ্বের সাথে ভারতের সম্পর্ক গতিশীল করার মূল কারণ ছিল। তবে আরব বিশ্বের নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা এ সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জেনারেল নারভানের সফর সেই দিক থেকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। সূত্র : টাইম্স নাউ নিউজ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন